নির্যাতিত শিশু গৃহকর্মী উদ্ধার, পালিয়েছেন নির্যাতনকারীরা
অপরাধ

নির্যাতিত শিশু গৃহকর্মী উদ্ধার, পালিয়েছেন নির্যাতনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল: কাজ শেষের আগেই আবার হুকুম। একটু দেরি হলেই গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন। কথায় কথায় রড ও গরম খুন্তি দিয়ে চলতো মারধর। ১৩ বছরের আশা বিশ্বাস নির্যাতনের ভয়াবহতায় কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও চালায়। কিন্তু গৃহকর্ত্রীর নজরদারিতে তা সম্ভব হয়নি। নিরুপায় আশা তার পিতা ডেভিড বিশ্বাস ও মা মেরী বিশ্বাসের কাছে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আঁকুতি করে।

কিন্তু গৃহকর্ত্রীর ছেলে সায়মন কুন্তল বিশ্বাস বড় চাকরি করেন। সেই ভয়ে ইচ্ছা থাকলেও আশা বিশ্বাসকে ফেরত নিতে পারেননি অসহায় বাবা। অবশেষে শিশু গৃহকর্মী আশাকে নির্যাতনের খবর জানতে পেরে উদ্যোগী হন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম। আশাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলে বের হয়ে আসে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের তথ্য।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের রিফুউজি কলোনি এলাকার বাসিন্দা বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাস কয়েক বছর আগে ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা ডেভিড বিশ্বাস ও মেরী বিশ্বাসের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে আশা বিশ্বাসকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন। আশাকে নিয়ে আসার কিছুদিন যেতেই তার ওপর শুরু হয় বকুল এবং বুলবুল বিশ্বাসের নির্যাতন।

আশা জানায়, ‘আমি অনেক বছর আগে বুলবুল ও বকুল পিসিদের বাসায় আসি। কত বছর আগে এসেছি তা বাবা জানেন। আমাকে দিনে দুইবার মারেই। লোহার রড ও খুন্তি গরম করে বকুল আর বুলবুল পিসি মারধর করেন। আমি চিৎকার করতে পারি না। চিৎকার করলে গলা টিপে ধরে মারেন। আমাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। ঘরের বাইরে গেলেই মারেন। পিসিরা বলাবলি করেন, আমি বাইরে বের হলেই নাকি লোকজনের কাছে নালিশ করি। আমাকে মারধরের কথা বলি।’

নির্যাতনে ও আঘাতে আশার ঘাড়ে, হাতে, পায়ে, পিঠে রক্তাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আঘাতের স্থান দেখে দেখে ফের মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী দুই নারী। আশা আরও জানায়, যেসব স্থানে ঘাঁ হয়ে গেছে, সেখান থেকে পুঁজ বের হত। তাতে যন্ত্রণার কথা বললে, লবণ-মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে প্রলেপ দিতেন তারা। তাতে আরও যন্ত্রণা বাড়তো।

বুধবার (১১ আগস্ট) আশা এক প্রতিবেশীর কাছে তার জীবন বাঁচানোর অনুনয় জানায়। এ সময় তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে ওই প্রতিবেশী কোতোয়ালি থানায় জানালে সন্ধ্যায় ওসি নুরুল ইসলাম শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পুলিশের খবর পেয়ে পালিয়ে যান নির্যাতনকারী বকুল বিশ্বাস ও বুলবুল বিশ্বাস।

ওসি নুরল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘শিশুটিকে নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে। তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন হতো প্রতিনিয়ত। আমরা এ ঘটনায় নির্যাতনকারী দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছি।’

ওসি আরও বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ওই পরিবারের সদস্য সায়মন কুন্তল বিশ্বাস নিজেকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করে পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আমি যেন কোনো পদক্ষেপ না নেই, সেজন্য চাপ সৃষ্টি করেন।’

থানা সূত্র জানিয়েছে, সায়মন কুন্তল বিশ্বাস নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

আশা বিশ্বাসের পিতা ডেভিড বিশ্বাস বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও মেয়েকে তাদের (বকুল ও বুলবুল বিশ্বাস) কাছ থেকে নিতে পারি না। তাদের ছেলে এমপি-মন্ত্রীর ক্ষমতা রাখেন। মারধরের কথা শুনে আমি একবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সায়মন কুন্তল বিশ্বাস আমাকে হুমকি দেন, আমার সঙ্গে ‘খারাপ কিছু’ করে ফেলবেন। তারপর মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছি।

ডেভিড বিশ্বাস আরও বলেন, ‘সায়মন কুন্তল বিশ্বাসের ভয়ে শুধু আমি না, তার প্রতিবেশী কেউই কথা বলতে পারেন না।’

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রায়পুরা উপজেলা বন বিভাগের অফিসের নার্সারীর স্থানে অফিসার ক্লাব নির্মাণ

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা বন বিভাগের নার্সারিটির প্রায় তিন হাজার চারা নষ্ট করে...

সংসার ভাঙল গায়িকা কণার, নেপথ‍্যে কী?

প্রায় অর্ধযুগ সংসার করার পর বিচ্ছেদ ঘটালেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কণ...

‘জীবনে এত অসহায় কখনো ফিল করিনি’- আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘জীবনে এত অ...

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন ক...

ভবিষ্যতের ক্যানভাসে বাংলাদেশে মোশন গ্রাফিক্স

একটা সময় ছিল, যখন ডিজাইন মানেই পোস্টার, ব্যানার বা বিজ্ঞাপন বোর্ডে স্থির কোনো...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা