অপরাধ

সুবর্ণচরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান! 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের চর আক্রাম উদ্দিন মৌজাতে খাস জমি দখল করে বিক্রি-লিজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমি দস্যু অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন চৌধুরী।

আরও পড়ুন: র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা গর্হিত কাজ

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমি দখলের উদ্দেশ্য মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংবাদকর্মী, ভূমি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং চরজববার থানার পুলিশ।

পরে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি ভাষ্যমতে, চেয়ারম্যানের বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত জামাল উদ্দিন ও হানিফ ব্যাপারী ৬টি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে ২৪ ঘন্টা খাস জমিতে মাটি কাটার এক মহাৎসব চালু করে দেয়। যা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রলীগ নেতা কামরুল, মনির, মোঃ দেলোয়ারসহ অনেকে।

সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নাম উঠে আসে ভূমি দস্যু মহি উদ্দিন চৌধুরীর। ঘনটনাস্থলে পাঁচটি এস্কেভেটর মেশিন রেখে পালিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা। অবৈধ মেশিনের পাশে কাউকে না পেয়ে অভিযান টিম, পরে মেশিনগুলার কিছু কিছু যন্ত্রাংশ অকেজো করে দেয়। জমি দখলের সত্যতা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সুবর্ণচরের উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ আরিফুর রহমান।

আরও পড়ুন: গর্ভের সন্তানসহ বিপদমুক্ত পরীমনি

ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্ব চর আক্রাম উদ্দিন মৌজার ২৭০ নং রিভিশন দিয়ারা খতিয়ান নং ১ এর দাগ নং ৪০০১ শ্রেণিতে হেলীরচর নামে একটি চর রয়েছে। যে চরের ভিতরে জমি ১ আনা ৫.৩৭ একর অংশে ৪৭২.৪৭ একর জমি সরকারের খাস হিসেবেও বর্তমান ম্যাপে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও ৬৪.৫৩ একর ভূমি ৬৬, ৭৬, ৯৬, ১৬৪, ১৭৪, ১৭৫, নং দাগের জমি ব্যক্তি মালিকাধীন খতিয়ান ভুক্ত। ব্যক্তি পর্যায়ের এই সকল খতিয়ানের ৩নং সীট তত্বাবদায়ক ব্যক্তির অভিযোগে থাকায় গত ২২/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখে ১৪০ নং স্মারকযোগে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়।

চর আক্রাম উদ্দিন মৌজাতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে শেখ হাসিনা মেরিন একাডেমির স্থাপন করার জন্য নির্ধারিত স্থান হিসেবে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও মেরিন একাডেমির জন্য অধিগ্রহণকৃত প্রায় ৭০০ শত একর প্রস্তাবনাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। যার এই ধারাবাহিতায় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. দিদারুল আলমসহ অনেকে জমি গুলা পরিদর্শন করেছে। কিন্তুু ভূমি দস্যু মহি উদ্দিনের কবল থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নামে অধিগ্রহণকৃত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেও ভূমিও রক্ষা পায়নি। বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন পরিবারের নিকট। কথিত ভূয়া ভূমিহীনদের মাঝে উক্ত জমি বিক্রি করে দেয় অনুসারীদের দিয়ে। পরে আবার তা জোর করে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে। অভিযুক্ত মহি উদ্দিন চৌধুরী (৪০) মোহাম্মপুর ইউপির মো. আবদুস সোবহানের ছেলে।

আরও পড়ুন: র‍্যাব গণমানুষের আস্থার বাহিনী

মোহাম্মপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের সাবেক তিন নং সীট ও ২নং সীটের অন্তরভূক্ত ২৬০৮ দাগ থেকে শুরু করে ৩নং সীটের পুরা জমি দখল করে মাছের প্রজেক্ট রয়েছে তার। ঐ মৌজাতেও প্রায় অসহায়, দরিদ্র, জনগোষ্ঠীর ১ হাজার একর জমি দখল করে নিয়েছে ভূমি দস্যু মহি উদ্দিন।

আরও জানা যায় ৪নং সীটে প্রায় ৭০০শত একর খাস জমির মধ্যে মহি উদ্দিনের দখলে রয়েছে ৩০০শত একর ভূমি। যা নিয়ে জমির মালিক পক্ষ দেওয়ানি আদালতে একটি এলএসটি মামলা করেছে। উক্ত মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন: সাত দিনের রিমান্ডে মাসুম

চাঁন মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী জানান, চর আক্রাম উদ্দিন মৌজাতে বেশিরভাগ জমির মালিক সন্দীপ ও চট্রগ্রামের বাসিন্দা। আমরা ১৯৬২ সাল থেকে এই জমিগুলার দিয়ারা খাজনা পরিশোধ করে আসছি বছরের পর বছর ধরে। নদী ভাঙ্গার কারণে জমিগুলা বিলীন হয়ে গেছে। পরে এখানে নতুন চর জেগে উঠে। এই জমির প্রকৃত মালিক আমাদের বাপ দাদারা। তাই বর্তমানে আমরা ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। আমার এখানে ৫৪ একর জমি রয়েছে, যা মহি উদ্দিন চৌধুরীকে বর্গা চাষাবাদ করতে দিয়েছি আমি। প্রথম ২/৩ বছর ধান, মাছ সব দিতো, এখন সে আমার জমিতে আমাকে যেতে দেয় না। বিষয়টি এমপি সাহেব চরজববার থানা সকলে অবগত রয়েছে। আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে জমিতে গেলে মাথা কেটে রেখে দিবে চেয়ারম্যান। বর্তমান হালসনে জমিগুলা খাস হওয়ার কারণে সে আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। অসহায় দিয়ারা মালিকাধীন ও শত শত একর খাস জমি দখলে রয়েছে মহি উদ্দিন চেয়ারম্যানের। বর্তমানে দিয়ারা ও খাস মিলিয়ে ১৫০০ একর জমি তার দখলে রয়েছে বলে জানান একাধিক ব্যক্তি।

অন্যদিকে, ধানের মৌসুমে ধান লুট, মৌসুমে জমিতে পতিত ফসল কোন কিছু পাচ্ছে না কৃষক ও জমির মালিক পক্ষ। জমির নিকট গেলে, লোক দিয়ে খবর দেয় হত্যা করে লাশ গুম করার, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতিসহ নানা মামলার ভয় দেখায়। যেন জমিতে না যাওয়া হয়, তাই প্রাণের ভয়ে অনেকে জমিতে যায় না বছরের পর বছর।

আরও পড়ুন: সিদ্ধ খাবার খাওয়ার আহ্বান

প্রসঙ্গত, মহি উদ্দিনের বাবা মো. আবদুস সোবহান ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। নিজের জমি ও বর্গা চাষ করে দিন চলে যেত তার। নিজের মহিষ ও পরিবারের অতিরিক্ত আয়ের জন্য মহিষ চড়াতেন চরণ ভূমিতে তিনি। মহি উদ্দিন ও বাবার মতো মহিষ লালন পালন করেছে চরণ ভূমিতে। কাজ করেছে কেয়ারটেকার হিসেবেও। তার ভাগ্যে খুলে যায় ২০০৭ সালে বিএনপির সাবেক এমপি'র বরকত উল্ল্যাহ বুলুর দখলে থাকা মৎস্য প্রজেক্টের কেয়ারটেকার হিসেবে চাকুরীতে যোগদানের পর। বুলুর ক্ষমতা ও স্থানীয় আওয়ামী রাজনৈতির সাইনবোর্ড গায়ে লাগান মহি উদ্দিন। সোনার চামুচ মুখে দিয়ে জম্ম না নিলেও, সোনার হরিণ পেয়ে যায় মহি উদ্দিন। সন্দীপ, চট্রগ্রাম, ফেনীর ফুলগাজী, সোনাগাজী, নোয়াখালী, সুবর্ণচর, হাতিয়াসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ারা রেকর্ডের জমি দখলে মেতে উঠে সে। এই শুরু তার জীবনের গতি পরিবর্তন। শূণ্য থেকে কোটিপতি খাস জমি বিক্রি করে।

কিন্তু নিজের বাবার ওয়ারিশ আনাধীন জমিতে মাছের প্রজেক্ট না করে, সুকৌশলে সরকারি জমি দখল করে মাছের প্রজেক্ট করে সরকারের সম্পত্তি জবরদখল করে ভূমিদস্যু মহি উদ্দিন চৌধুরী গ্যং।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার ফিরোজ আলম বলেন, বেড়ির দুই পাশে সামান্য কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন কাগজপত্র রয়েছে। যা অসহায় পরিবারগুলাকে সরকার বন্দোবস্ত দিয়েছে। এছাড়া এ মৌজাতে প্রায় জমি বর্তমানে খাস, আর খাস জমি উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন চৌধুরী জানান, খাস জমি দখলের সাথে আমি জড়িত না। চরবাটার আমিনুল ইসলাম রাজিব চেয়ারম্যান, তাজ উদ্দিন বাবরসহ অনেকে জড়িত সুবর্ণচরে। আপনারা গেছেন ঠিক, তবে ঐখানে মহি উদ্দিন নামের এক ছেলে এসব করতেছে আমি খবর নিয়ে দেখেছি। ঐ ছেলেটার নাম, বাবার নাম, গ্রাম সব আমার সাথে মিল আছে।

আরও পড়ুন: বিএনপি ইতিহাস বিকৃতির জনক

সরকারি খাস ভূমিতে মাটি কেটে প্রজেক্ট খনন ও দিয়ারা অন্যদের জমি দখলের বিষয়টি জানতে চাইলে অস্বীকার করে বলেন, আমার জমি ও অন্যদের থেকে লিজ নিয়ে প্রজেক্ট করেছি।

নিয়ম অনুযায়ী খাস জমি লীজ দেয় জেলা প্রশাসক, কোন কাগজপত্র আছে কিনা লিজের জানতে চাইলে তা দেখাতে পারেনি তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও চৈতি সর্ববিদ্যা বলেন, চর আক্রাম মৌজাতে সরকারি সম্পত্তি রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে পরামর্শ করে, সরকারি সম্পত্তি খালি করতে মৌখিকভাবে বলেছি। সে নিজে কোন ব্যবস্থা না নিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযানে ব্যাপক গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবে...

কাঁচা আমের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গ্রীষ্মকালের সু...

মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ’লীগের লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন...

১০ জেলেকে মুক্তি দিল আরকান আর্মি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাফ নদীতে মাছ শ...

বজ্রপাতে একদিনেই প্রাণ গেল ১০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখের তীব্র দ...

হাসপাতাল থেকে বাসা ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা