গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে নদীর বালুচর এক আশীর্বাদ। নদীকে কেন্দ্র করে জেগে ওঠা চরে শরৎকালে প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠে কাশবন। এই কাশখড় অনেকের জীবিকা বদলে দিলেও ভূমিদস্যুদের কারণে প্রকৃত জমির মালিকরা এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কাশফুলের জন্য আলাদা করে কোনো শ্রম দিতে হয় না। চরের কাশখড় বিক্রি করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই আয় থেকে তারা পরবর্তী সময়ে চাষাবাদ বা ব্যবসার কাজে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিছু চরে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে প্রকৃত জমির মালিকেরা নিজেদের জমির কাশখড় সংগ্রহ করতে পারছেন না। এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা অন্যের জমি দখলে রেখে কাশখড় তুলে বিক্রি করছেন, এমনকি জমিতে চাষাবাদও করছেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরে বেড়ে ওঠা কাশখড় এবং সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর উপজেলার চরের কাশখড় এখন জেলার বাইরে রাজশাহী ও বরিশালে পাঠানো হচ্ছে।
অনেকে চরের জমির মালিকানা দাবি করছেন, আবার কেউ প্রভাব খাটিয়ে গায়ের জোরে প্রকৃতির এই দান কাশখড় দখল করে নিচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত চরে ভূমিদস্যুদের সঙ্গে প্রকৃত জমির মালিকদের বিরোধ দেখা দিচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা থাকলেও দুর্গম চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আলোচিত চর এলাকা কাপাসিয়া ইউনিয়নের মিন্টু মিয়ার চরের জমির মালিক রাশিদুল ইসলাম বলেন, “গত পাঁচ বছর হলো ওই চরে আমাদের ১০০ বিঘা জমি জেগে উঠেছে। তখন থেকেই চরের ভূমিদস্যুরা আমাদের জমি দখলে রেখেছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশখড় তারা বিক্রি করে দিচ্ছে। জমির মালিক হয়েও আমরা কিছুই ভোগ করতে পারছি না। এছাড়া ওই জমিতে তরমুজ, বাদাম ও কুমড়া চাষ করে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করছে।”
কাপাসিয়ার বাদামের চরের আনছার আলী বলেন, “বালুচরের জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কাশখড় বিক্রি করে এখন অনেকে স্বাবলম্বী। ব্যবসায়ীরা এসব কাশখড় ক্রয় করে রাজশাহী ও বরিশালে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ভূমিদস্যুদের কারণে প্রকৃত মালিকরা এ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
হরিপুর ইউনিয়নের কাশখড় ব্যবসায়ী মাহবুর রহমান বলেন, “কাশখড় ট্রাকে করে রাজশাহী ও বরিশালে পাঠানো হয়। এক ট্রাক কাশখড় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ভাড়া বাবদ খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়।”
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, “বিনাচাষে তিস্তার চরে বেড়ে ওঠা কাশখড় বিক্রি করে এখন অনেকেই ভালো আয় করছেন। কাশখড় যেন চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ। প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ বছর আগে তিস্তা নদীতে বিলীন হওয়া অনেক জমি এখন জেগে উঠেছে। সেই সব চরে কাশফুলসহ নানা ফসলের চাষ হচ্ছে। তবে জমি হারানো পরিবারগুলো তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি সহজে ফিরে পাচ্ছে না। নানা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জটিলতায় জমির দখল চলে যাচ্ছে ভূমিদস্যুদের হাতে।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, “কাশফুলের খড় চরবাসীর উপার্জনের অন্যতম উৎস। এসব কাশখড় পানের বরজ, ঘরের ছাউনি ও বিনোদন কেন্দ্রের গোলঘরে ব্যবহার করা হয়। কাশফুল দিয়ে ঝাড়ুও তৈরি করা হয়।”
সুন্দরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, মাঝে মাঝে চরের জমি নিয়ে বিরোধের অভিযোগ পাওয়া যায়। দুর্গম চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের জন্য বেশ কঠিন। তারপরও সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে, নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, “চরের জমি নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। অনেক জমি খাস খতিয়ানে চলে গেছে। তাছাড়া প্রকৃত মালিকানা নিয়েও বিরোধ আছে। এরপরও অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।”
সাননিউজ/আরপি