নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: ঘুষের বিনিময়ে খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার অভিযোগে পটুয়াখালীর গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন ও ঘাট ইজারাদার মোঃ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
আরও পড়ুন: রোগীকে ২য় তলা থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টা
পটুয়াখালীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রোখসানা পারভিনের আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমান। এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও ওইদিন থেকে বন্ধ রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, বেআইনিভাবে একইস্থানে ভিন্ন খেয়াঘাট দেখিয়ে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে গোলখালী ইউনিয়নের বড়গাবুয়া খেয়াঘাটের প্রকৃত ইজারাদারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি এবং সাত লাখ টাকা ঘুষের বিনিময় অবৈধভাবে আরেকজন ইজারাদারকে খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে একই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পটুয়াখালীর দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হুসাইন।
আরও পড়ুন: ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন
দুদকের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং বরগুনা জেলার আমতলীর মধ্যবর্তী নদী গোলখালী। এই নদীতে বড়গাবুয়া খেয়াঘাটটি আন্তঃজেলা খেয়াঘাট। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১৪২৬ সালের জন্য বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে যথা নিয়মে সিডিউল কিনে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে ঘাটটি ইজারা পান মোঃ রিয়াজ মিয়া। কিন্তু দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইজারাদারকে ইজারা প্রদানে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান নাসির মাত্র সাত লাখ টাকা ঘুষের বিনিময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগের স্থানেই বড়গাবুয়া টু বড়গাবুয়া লিখে জনৈক খলিলুর রহমানকে ইজারা দেয়। যেটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, সরকারি ইজারা প্রদানকৃত খেয়াঘাটের দুই মাইলের মধ্যে নতুন কোন খেয়াঘাট সৃষ্টি বা নতুন নামে কোন খেয়াঘাটের ইজারা দেয়ার কোন বিধান স্থানীয় সরকার আইনের কোথাও নাই। তা সত্বেও চেয়ারম্যান নাসির ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতার প্রভাবে ঘুষের বিনিময়ে একই স্থানে নতুন নাম দিয়ে ঘাটের ইজারা প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন: পাবজি খেলতে না দেয়ায় আত্মহত্যা
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনার পর প্রকৃত ইজারাদার রিয়াজ উদ্দিন ২০২০ সালের ১৩ মার্চ পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতি দমন আইনে চেয়ারম্যান নাসির ও ইজারাদার খলিলুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তখন বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক পটুয়াখালী অফিসকে আদেশ দেন।
এরপর দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত শেষে পটুয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হুসাইন আসামি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন গত ৮ মার্চ। এরপর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
আরও পড়ুন: কানের লাল গালিচায় আরিফিন শুভ
মামলার বাদী মোঃ রিয়াজ উদ্দিন জানান, চেয়ারম্যান নাসিরের কারণে আমি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। নানাভাবে হয়রানির শিকারও হয়েছি। আমাকে বারবার প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে। আমি এর বিচারের জন্যই মামলা করেছি। আশা করি বিজ্ঞ আদালত সঠিক বিচার করবে। গ্রেফতারি পরোয়ানার পরপরই চেয়ারম্যান নাসির গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার হোসেন জানান, এখনও আদালতের কপি হাতে পাইনি। ওয়ারেন্টের কপি পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ