সারাদেশ

পিবিআই কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় পিবিআইয়ের এক তদন্ত কর্মকর্তা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন এমন একটি অডিও ক্লিপ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

জানা গেছে, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় উপজেলার একটি হত্যা মামলার বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা করে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ভাঙচুর ও লুটপাট মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান সাদেকীন গত ২ ফেব্রুয়ারি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।

তিনি প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, হত্যা মামলার বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও লুটপাটের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। এছাড়া মিথ্যা অভিযোগ আনায় ভাঙচুরের মামলার বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছিলেন তিনি।

নোমান সাদেকীনের দেয়া প্রতিবেদন বাদী প্রত্যাখ্যান করে পুনঃতদন্তের আবেদন করায় আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। তখন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান নেত্রকোনার পিবিআই পরিদর্শক ধনরাজ দাস।

তদন্ত শেষে গত ১৩ এপ্রিল তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তিনি এবার মিথ্যা মামলা করার বিষয়টি এড়িয়ে উল্লেখ করেন, রাতের আঁধারে মালামাল লুট হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ফোনালাপ থেকে জানা যায়, এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বিবাদীদের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন ধনরাজ দাস। তবে ঘুষ নিয়েও তিনি বিবাদীদের পক্ষে প্রতিবেদন না দেয়ায় টাকা ফেরত চাইছেন ভুক্তভোগী। আর পিবিআই কর্মকর্তা বলছেন, তার অফিসে গেলে তিনি টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন।

জানা গেছে, যিনি টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন, তার নাম আবুল হোসাইন। তিনি দাবি করেছেন, পিবিআই কর্মকর্তাকে টাকা দেয়ার সব তথ্য-প্রমাণ তার কাছে আছে।

তবে জানতে চাইলে পিবিআই পরিদর্শক ধনরাজ দাস ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ঢাকা যাচ্ছি, এসে কথা বলবো। এই কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই কেন্দুয়ার ডাউকি গ্রামের মসজিদের সামনে থেকে ওই গ্রামের সাবিজ মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি গত ৪ ডিসেম্বর সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

এর ছয় দিন পর ১০ ডিসেম্বর ওই মামলার আসামি জিয়াউল ও পলাশের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ তুলে তাদের ভাই জুলহাস মিয়া গত ২০ জানুয়ারি কেন্দুয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল লুট ও ভাঙচুর করার কথা উল্লেখ করে খুন হওয়া জুয়েলের মা ললিতা আক্তার, ভগ্নিপতি আবুল হোসাইনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

আবুল হোসাইনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর গ্রামে। তিনি দাবি করেন, মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখানোর কারণেই বাধ্য হয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তিন ধাপে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধনরাজকে ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন। এখন এই টাকা ফেরত চান তিনি। টাকা দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ফোনে বলা কথাবার্তার রেকর্ড তার কাছে আছে বলেও জানান আবুল হোসেন।

এদিকে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কল রেকর্ডে ভুক্তভোগীকে বলতে শোনা যায়, আপনার অফিসে গিয়া আমি টাকা দিয়া আসছি, আপনি এখন আমার বাড়িতে আইসা টাকাটা দিয়া যান। আমি অভিযোগ উঠাইয়া নিয়া আইয়াম।

জবাবে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায়, আপনি আসেন। মেম্বারকে নিয়ে বসে বিষয়টি শেষ করি। আমার নামে অভিযোগ দিয়ে ক্ষতি করে আপনার কী লাভ হবে? আপনি নেত্রকোনা এসে নিয়ে যান। এভাবেই ৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে উঠে আসে ঘুষের টাকার লেনদেনের বিষয়টি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সান নিউজ/ এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা