সারাদেশ

সাতক্ষীরায় গৃহহীন এখনও হাজারো পরিবার

নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : ২০২০ সালের ২০ মে রাতে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ পরিবেষ্টিত সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার গৃহহীন হয়ে পড়া হাজারো পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

ইতোমধ্যে প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা পদ্মপুকুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তণে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসমূহের সম্মিলিত চেষ্টার পরও পরিস্থিতি আগের মতোই।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের সোনাতনকাটি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া ও সোনাতনকাটি গ্রামের ৬০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সবেদ আলী হালদার, খোদাবক্স হালদার, লিয়াকত আলী হাওলাদার, মোস্তফা ফকিরসহ ২৫ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে হরিষখালী বাঁধের ওপর।

প্রতাপনগর গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী গাজী জানান, ঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় এখানকার মানুষ আশাশুনি, চুকনগর, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা ও খুলনায় আশ্রয় নিয়েছে। ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোড়ল জানান, মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। ঘর না থাকায় অনেকেই টং বেঁধে বসবাস করছেন। গৃহহীনদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনসার আলী গাজী জানান, তার ওয়ার্ডের সোনাতনকাটি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। জীবনজীবিকার তাগিদে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আলোর কোলে মাছ শিকারে এবং ইটেরভাটায় শ্রম দিচ্ছে। প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, গত ছয় মাস যাবৎ এলাকার ৯৬০ পরিবার আশ্রয়হীন হয়েছে।

ইউনিয়নের ৮টি পয়েন্ট ভেঙে যাওয়ায় মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত কাজের কারণে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদের বাঁধ বারবার ভাঙছে। তিনি আরও জানান, হরিষখালী বাঁধ নির্মাণ করতে এসে ২০০ বিঘা জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের বেড়িবাঁধের বাইরে রেখেছে।

ফলে আগামীতে চিংড়ির ঘের নদীগর্ভে বিলীন হবে। তিনি বলেন, গৃহহীনদের নামের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাউবো বিভাগ-২-এর সেকশনাল অফিসার (এসও) আলমগীর হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে আশাশুনি এলাকা ভেঙে যাওয়ায় পাউবোর ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪টি পয়েন্টে বাঁধ সংস্কারের কাজ তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী।

এর মধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া ও চাকলা এবং শ্রীউলার হাজরাখালি বেড়িবাঁধ রয়েছে। প্রতাপনগরের হরিষখালিতে একটি ক্লোজারের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আরেকটি ক্লোজারের কাজ শিগিগরই শেষ হবে। কুড়িকাহুনিয়া ও চাকলার বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। আমরা কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে বলেছি দ্রুত কাজ শেষ করতে। চলতি শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে জানান, ২০ মে রাতে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে পাউবোর তথ্য মতে, আশাশুনি উপজেলার প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রতাপনগর ইউনিয়নে চাকলা, কোলা হিজলিয়া, নাকনা, কুড়িকাহুনিয়া, রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটিসহ বিভিন্ন এলাকা কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। শ্রীউলার হাজরাখালি বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়। ঝড় বা বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০ নারী, ২৫ হাজার ২০০ পুরুষ, ৩ হাজার ১০০ শিশু ও ৮৩৫ জন প্রতিবন্ধী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শ্রীউলার হাজরাখালি, প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া ও চাকলা পয়েন্টে বাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেছেন। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সংস্কারকাজ। ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে বেড়িবাঁধ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা