নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকার সঞ্চালন লাইনের পাইপ ফেটে রাজধানীর উপকণ্ঠ মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তিন দিন ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেলা সদরের মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ও মীরকাদিম পৌরসভা জুড়ে ঘরে ঘরে গ্যাসের জন্য চলছে হাহাকার। গ্যাসের অভাবে বাড়িতে রান্না করতে না পেরে বাধ্য হয়েই হোটেল–রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। আবার অনেকে মাটির চুলায় রান্না সারছেন। কেউ কেউ বাড়তি চুলা কিনে সিলিন্ডার গ্যাসে রান্নার আয়োজন করছেন। এ অবস্থায় এখানকার সাড়ে ১৩ হাজার গ্রাহকের পরিবারে নেমে এসেছে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি।
জানা গেছে, গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ করেই জেলা সদরের ওই দুটি পৌরসভার শতাধিক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল রবিবার পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ চালু হয়নি। এতে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থেকে কিনে আনা খাবারেই ভরসা হয়ে উঠেছে এখানকার গ্রাহকদের। টানা দুই দিনের গ্যাসের অভাবে গৃহিণীরা হয়ে পড়েছেন নাকাল। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসে খাবার তৈরি করতে অভ্যস্ত অধিকাংশ গৃহিণী, এখন মাটির চুলায় লাকড়িতে রান্না করতে গিয়ে কালো ধোঁয়ায় রীতিমতো যুদ্ধে সামিল হচ্ছেন তারা।
শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মাহফুজা বেগম জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। ওই দিন রাতে হোটেলের খাবার তুলে দেন পরিবারের সদস্যদের মুখে। সকালে সন্তানদের নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে রবিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে সারাদিনের খাবার তৈরি করতে রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই দেখেন গ্যাসের একই অবস্থা। সকালের খাবার কিনে আনেন রেস্তোরাঁ থেকে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছুটে যান সন্তানদের নিয়ে স্কুলে। কবে গ্যাসের চুলায় রান্না করে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবেন—সেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এই গৃহিণী।
জেলা শহরের মাঠপাড়া এলাকার গৃহিণী মনিকা আক্তার বলেন, আগের দিন শনিবার রাতে পাউরুটি ও কলা কিনে খেয়েছি। রবিবার সকালের নাস্তাও হোটেল থেকে কিনে এনে খেতে হয়েছে। এ শীতে ছোট সন্তানের জন্য গরম পানি পর্যন্ত করতে পারেননি। এখন দুপুরের খাবার তৈরির জন্য বাবার বাড়িতে সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসে রান্না করতে হচ্ছে।
মীরকাদিম পৌরসভার কাগজীপাড়া এলাকার গণমাধ্যমকর্মী জসিমউদ্দিন দেওয়ান বলেন, এমনিতেই গ্যাসের চাপ কম থাকায় চুলা নিভুনিভু করে জ্বলে। তার ওপর শনিবার বিকেল থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। এ অবস্থায় রান্না করতে তার গিন্নী সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসে বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জোনাল ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে পঞ্চবটি এলাকায় গ্যাস সঞ্চালন লাইনের পাইপে লিকেজ ও ফাটল দেখা দেয়। মাটির অন্তত ৪০ ফুট নিচে ওই পাইপলাইনে ফাটল রয়েছে। এ কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে—তা বলতে পারছেন না।
মুন্সীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ম্যানেজার শরীফুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে মুন্সীগঞ্জের সাড়ে ১৩ হাজার আবাসিক ও এক হাজার বাণিজ্যিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে গ্যাস পাইপ ফেটে যাওয়ায় সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সেখানে সঞ্চালন লাইনের ফেটে যাওয়া পাইপ মেরামতের কাজ চলছে। আশা করছি পাইপলাইনের কাজ শেষে শিগগিরই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
সাননিউজ/আরপি