দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি থাকলেও গোয়ালন্দের যমুনা ও পদ্মা নদীর মোহনায় জেলের জালে দেখা মিলছে না ইলিশের। গ্রীষ্ম শেষে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। অথচ এই সময় জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পরার কথা। এতেকরে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ইলিশ শিকারের উপর নির্ভরশীল জেলেরা। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাদ বিবেচনায় গোয়ালন্দের ইলিশের দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। পদ্মা-যমুনা নদীর গোয়ালন্দে মোহনা হওয়ায় গোয়ালন্দের ইলিশের বিশেষ স্বাদ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। এই সময় পদ্মা-যমুনার মোহনায় ইলিশের অবাধ বিচরনের কথা। জেলেদের জালেও অন্যান্য বছর গুলোতে এই সময় মোটামুটি ভালোই ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এ বছর পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন জাল ফেলেও হতাশ হয়ে ফিরছেন ইলিশ শিকারীরা।
পদ্মায় ইলিশ শিকার করা পাবনার জেলে হারেজ বিশ্বাস জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই যে পরিমাণ ইলিশ মাছ ছিল, এবার কিছুই নেই। সারা রাত নদীতে জাল ফেলেও নৌকার খরচের টাকার মাছও পাওয়া যায় না। আমাদের সাথে অনেকেই আগে ইলিশ মাছ ধরার কাজ করত, কিন্তু এখন নদীতে মাছ না পাওয়া যাওয়ায়, তারা ক্ষেত-খামারে কাজ করছে। আমাদের মতো গরিব জেলেদের এ অবস্থায় বাঁচাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
অপর জেলে ধীরেন হালদার বলেন, ইলিশ মাছের আকালের সঙ্গে সঙ্গে এবার অন্যান্য মাছ তেমন একটা নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ৬জন মিয়ে একটি নৌকায় মাছ শিকার করি। ১/২ সপ্তাহ পরে বাড়িতে পরিবারে কাছে যাই। এ পরিস্থিতিতে খালি হাতেই গিয়ে পরিবারের কাছে দাঁড়াতে হচ্ছে। নদীতে মাছ যাদি না পাই, তাহলে আমাদের সংসার কিভাবে চলে? ভেবে দেখেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই নদীতে মাছ শিকার করে দিন পার করলাম। অন্য কোন কাজও জানি না। তাই দিনের পর দিন লোকসানের মুখে পড়েও এই মাছ ধরা পেশায় আটকে আছি।
পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারী অপর জেলে আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার জানান, ৫/৭ জনের দল নিয়ে তিনি নদীতে ইলিশ শিকার করেন। নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। জাল ফেলে দু’একটি ছোট সাইজের ইলিশ ধরা পড়লে আবার মৎস্য বিভাগের অভিযানের মুখে পড়তে হয়। ৯ ইঞ্চি একটি ইলিশ মানে ৫শ গ্রামের উপরে হতে হয়। সারা নদীতেও মনে হয় ওই সাইজের মাছ পাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে জাল-দরি গুছিয়ে রেখেছি, আর কিছু জাল মেরামতের কাজ করছি।
এদিকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত পদ্মায় চলছে জাটকা (ইলিশের বাচ্চা) ধরায় নিষেধাজ্ঞা। তাই ছোট ইলিশ দু’একটি ধরা পড়লেও জেলেরা পড়ছেন মৎস্য বিভাগের অভিযানের মুখে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলিশ শিকার করা প্রত্যেক জেলেই মহাজন-আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন (আড়তে মাছ দেয়ার চুক্তিতে টাকা ধার) নিয়ে জাল ও নৌকা তৈরী করেন। দিনে দিনে তাদের বাড়ছে ঋনের পরিমাণ। এতে করে ইলিশ শিকারী জেলেদের চলছে চরম দূর্দিন। অনেকেই সুযোগ মত বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন। তাই দিনদিন পদ্মা নদীতে হ্রাস পাচ্ছে জেলের সংখ্যা।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জানান, ইলিশ সাধারনত গভীর পানির মাছ। পদ্মা নদীতে অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। আর নাব্যতা সংকট থাকায় ইলিশের বিচরন কিছুটা কম হয়ে থাকে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা গেলে এ এলাকায় ইলিশের অবাধ বিচরন নিশ্চিত করা যাবে।
সাননিউজ/ইউকে