বাণিজ্য

জলাবদ্ধতা আতঙ্কে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ২৬শ’ দোকানদার

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো : জোয়ারের পানিতে দিনে-রাতে প্রতিদিন দু’বার ডুবছে চট্টগ্রামের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। এর মধ্যে শুরু হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘুর্ণিঝড় যশও। সব মিলিয়ে যে কোন মুহুর্তে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ২ হাজার ৬শ দোকানদার।

দোকানদারদের ভাষ্য, প্রকৃতির নিয়মে বর্ষা আসবে। ঘুর্ণিঝড় হবে। সাগরে জোয়ার-ভাটাও হবে। সেটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো একটাই। সেটা হলো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ রক্ষা স্লুইচগেট। যা গত তিন বছর ধরে নির্মাণ কাজ চালিয়েও শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে থমকে আছে কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই খালের মুখে নির্মাণাধীন এই স্লুইচগেটের কাজ। তার উপরে স্লুইচগেট নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে চাক্তাই খাল ও রাজাখালি খালের একপাশ ভরাট করে রেখেছে চউক। ফলে সাগরের জোয়ারের পানি ফুলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করলে তা আর সহজে নামে না। এতে প্রতিদিন দু‘বার ডুবছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পুরো এলাকা।

এই অবস্থায় বর্ষা মৌসুম শুরু হলে এবং ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সব দোকান জলের নিচে তলিয়ে যাবে। এতে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যবসা-বাণিজ্য। নষ্ট হয়ে যেতে পারে দোকান ও গুদামে সংরক্ষিত কোটি কোটি টাকার পণ্য। যার প্রভাব পড়তে পারে গোটা দেশের ওপর।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আহসান খালেদ বলেন, এক সময় চাক্তাই খাল দিয়ে নৌপথে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কালের পরিক্রমায় সেই চাক্তাই খাল চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদীর মতো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকা করার কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। ফলে নৌ-বাণিজ্য বর্তমানে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

অপরদিকে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গত তিন দশক ধরে ক্রমেই জলে তলিয়ে যাচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। গত ২০১৭ সালের জুন-জুলাইয়ে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীরা তিনশত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন থেকে সতর্ক না হলে আবারও একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, চাক্তাইয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৪শ’ এবং খাতুনগঞ্জে ১ হাজার ২শ’ দোকান রয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা এসব দোকানের প্রবেশমুখ ও তলা উঁচু করেছেন। কিন্তু প্রতি বছরই ভারী বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় এসব দোকান বা গুদামে পানি প্রবেশ করে ভাসে পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাক্তাই ও রাজখালী খালে জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচগেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কাজও শুরু হয় ওই বছর। কিন্তু গত প্রায় তিন বছরেও স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি চউক।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, স্লুইচগেটের কাজের জন্য চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে খালের পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নৌ পথে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে চাক্তাই মোহনা পেরিয়ে পণ্য লোড, আনলোড করতে হয়। ফলে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আগামী বর্ষা শুরুর আগে এসব বাঁধ কেটে না দিলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা আরো প্রকট হতে পারে। কারণ নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানি নর্দমা পানি বিভিন্নভাবে চাক্তাই খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতা নিয়ে আতঙ্কে থাকে। গত কিছুদিন আগে অল্প বৃষ্টিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকাতে পানি উঠে যায়। আমরা জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে অনেক বছর ধরে ভুগছি। গত তিন বছর আগে সিডিএ স্লুইচগেট নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভেবেছিলাম এবার হয়ত মুক্তি মিলবে। কিন্তু কাজ শুরুর তিন বছর পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে যা কাজ চলছে তাও ধীরগতিতে। অন্যদিকে চাক্তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের মাধ্যমে খাল সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবে একের পর এক লকডাউনের কারণে স্লুইচগেইট নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে। এরমধ্যে স্লুইচগেইটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শেষ হবে এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

সান নিউজ/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন ও মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি পেছাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্য...

খাতিরের ঠিকাদারকে কাজ দিতে ডিএনসিসির দরপত্রে ‘কারসাজি’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বাতি স্থাপনের কাজ ‘খাতিরের’...

মেসি ফিরলেন, গোল করলেন, দলকেও জেতালেন

পুরো ম্যাচ খেলেননি, বদলি নেমে মাঠে ছিলেন ৪৫ মিনিট। ম্যাচের এই অর্ধেক সময়েই ব্...

ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফই বলেছিলেন নির্বাচন করতে, দাবি ফারুকের

সরকারের ‘পছন্দে’র মানুষ হিসেবে ফারুক আহমেদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড...

জুলাই সনদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ অবস্থান অস্পষ্ট: ডেভিড বার্গম্যান

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া পাঠিয়...

চিকিৎসক নেতা নারায়ণ হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বা...

ভরাডুবির ভয়ে কিছু খুচরা পার্টি নির্বাচন চাচ্ছে না: দুদু

নির্বাচন হলে যাদের ভরাডুবি হবে তারাই নির্বাচন চাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বি...

রিকশাচালককে কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, ধানমন্ডি থানার ওসির ব্যাখ্যা তলব

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার ক...

প্রধান উপদেষ্টা নিজে ক্লিয়ার করেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: রিজওয়ানা

নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা...

জুলাই সনদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ অবস্থান অস্পষ্ট: ডেভিড বার্গম্যান

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া পাঠিয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা