ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: অন্যের জমির ওপর একটি জরাজীর্ণ ঘরে আর থাকতে হবে না সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলার মোছা. সাগরিকার পরিবারকে। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনায় তার পরিবারকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে সরকার।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যসেবা মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন সাগরিকার পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুতই সরকারিভাবে ঘর নির্মিত হলে তার পরিবার থেকে সরে যাবে জীর্ণ কুটির। থাকবে না কাশবন আর বাঁশের বা তার বেড়া।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের হতদরিদ্র চা বিক্রেতা লিটনের মেয়ে সাগরিকাকে পাকা ঘর করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে মুঠোফোনে রানীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এমন খবরে উচ্ছসিত তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
আরও পড়ুন: এবার চালের দাম বাড়ল
ইউএনও বলেন, নন্দুয়ার ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামে অবস্থিত সাগরিকার পরিবারের জরাজীর্ণ বাড়ি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন নীতিগত সিদ্বান্ত নিয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সাগরিকার পরিবারকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ব্যয় নির্ধারণ করে আগামী সাপ্তাহে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এদিকে বাড়ি নির্মাণের কথা শুনে উচ্ছসিত সাগরিকার বাবা বলেন, চা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি। অন্যের জমির উপর একটি টিনের ঘরে কোনমতে মাথা গুঁজে থাকি। কখনো ভাবিনি সরকারিভাবে বাড়ি পাবো। মেয়ের জন্যই এতো কিছু সম্ভব হলো।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে আজ ঢাকা পঞ্চম
সাগরিকার ভাই সাগর আলী বলেন, এখনো খুব কষ্ট করছি। অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। নিজের বাড়িতে থাকার ঘরে জায়গা না হওয়ায় মাঝে মাঝে বাবার চায়ের দোকানে থাকি। বোনের জন্য আজ ঘর পাচ্ছি। তার জন্য গর্ব হয়। শুধু আমার নয়, পুরো গ্রামবাসীর গর্ব আমার বোন।
জানা গেছে, সাগরিকার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামে। বাবা লিটন আলী আর মা আনজু বেগম। চা বিক্রি করে সংসার চালানো লিটন আলীর পরিবারে অভাব-অনটন যেন নিত্যসঙ্গী।
এর মধ্যে মেয়ে খেলতে চায় ফুটবল। সমাজের কটু কথার ভয়ে মেয়েকে ফুটবল খেলতে বারণ করতেন বাবা। কিন্তু মেয়ের আগ্রহ আর জেদের কাছে হেরে যান লিটন আলী।
রাঙ্গাটুঙ্গি একাডেমিতে ফুটবলের প্রথম পাঠ নেন সাগরিকা। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাঙ্গাটুঙ্গি একাডেমি থেকে কয়েকজন মেয়েকে ভর্তি নিতে চেয়েছিল বিকেএসপি। কিন্তু সাগরিকা সেখানে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।
আরও পড়ুন: এমপি আবদুল হাই আর নেই
এরপর রাঙ্গাটুঙ্গি থেকেই সাগরিকাকে অনূর্ধ্ব নারী ফুটবলারদের সঙ্গে দলে ভেড়ায় মেয়েদের ফুটবল লীগের দল এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গ্রাম ছাড়ার পর গ্রামবাসী রটিয়ে দেয়, প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে সাগরিকা! এতে একটু নড়েচড়ে বসে পরিবার।
তবে এই কটু কথা থেকে সাহস খুঁজে নেয় সাগরিকা। এক সময় যারা কটূক্তি করতেন, আজ তারাই দিচ্ছে বাহাবা। এখন সেই সাগরিকাই গোটা গ্রামবাসীর গর্ব। ফুটবল খেলার জেদের কারণে দীর্ঘ ১ মাস মেয়ের সাথে কথা না বলা সেই বাবার মুখ সবার কাছে উজ্জ্বল করে তুলেছেন মেয়ে সাগরিকা।
রাণীশংকৈল-হরিপুর মহাসড়কের বাশরাইল এলাকা থেকে মহাসড়কের উত্তর দিক দিয়ে সরু পথ ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার যেতেই সাগরিকার বাড়ি।
আরও পড়ুন: ৪ বিভাগে বজ্রবৃষ্টির আভাস
বাড়ির প্রবেশপথে ছোট একটি দরজা। বাড়িটি কাশবনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। ঘর দুটি করা হয়েছে কাশবন আর বাঁশের বেড়া দিয়ে। ঘরের ছাউনি হিসেবে রয়েছে ছাপড়া টিন। অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল। টাকার অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন স্থাপন করতে পারেনি।
রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, সাগরিকার বাবা-মা চায়ের দোকান করে থাকেন। নিজের কোনো বসতভিটা নেই।
তারা সরকারি জায়গায় থাকেন। প্রশাসন তার পরিবারকে পাকা ঘর করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এটা শুনে আমাদের ভাল লাগছে। একটা মেয়ের সফলতার জন্য পরিবারের লোকজন উপকৃত হচ্ছে।
সান নিউজ/এনজে