বিতর্কটা পুরোনো। কেভিন পিটারসেন সেটাই আবার তুললেন নতুন করে। বোলার বিচারে এখনকার ব্যাটিং নাকি ২০–২৫ বছর আগে—কোন সময়ের ব্যাটিং বেশি সহজ ছিল? পিটারসেনের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২১ বছর আগে। নিজের সময়ের ব্যাটিংটাই ইংল্যান্ড কিংবদন্তির কাছে বেশি কঠিন মনে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিটারসেনের এক্স হ্যান্ডলে আজ এ নিয়ে পোস্ট করা হয়, ‘আমার কথা শুনে রেগে যাবেন না, কিন্তু ২০–২৫ বছর আগের তুলনায় এখন ব্যাটিং অনেক সহজ। তখন (ব্যাটিং) দ্বিগুণ কঠিন ছিল।’
পিটারসেন একই পোস্টে দুই দশক আগের কয়েকজন কিংবদন্তি বোলারের নাম জুড়ে দেন, ‘ওয়াকার, শোয়েব, আকরাম, মুশতাক, কুম্বলে, শ্রীনাথ, হরভজন, ডোনাল্ড, পোলক, ক্লুজনার, গফ, ম্যাকগ্রা, লি, ওয়ার্ন, গিলেস্পি, বন্ড, ভেট্টোরি, কেয়ার্নস, ভাস, মুরালি, কার্টলি, কোর্টনি এবং এই তালিকা শুধু লম্বাই হবে...।’
পিটারসেন এই পোস্টেই তাঁর অনুসারীদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি ওপরে ২২ জনের নাম বললাম। অনুগ্রহ করে আধুনিক সময়ে আমাকে এমন ১০ জন বোলারের নাম বলুন, যাঁদের ওপরের নামগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়।’
ওয়ানডে দিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক পিটারসেনের। পরের বছর অভিষিক্ত হন টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতে। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা পিটারসেন পেশাদার ক্রিকেট ছাড়েন ২০১৮ সালে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান ১০৪ টেস্টে ৪৭.২৮ গড়ে ২৩ সেঞ্চুরিসহ ৮১৮১ রান করেছেন। ১৩৬ ওয়ানডেতে ৪০.৭৩ গড়ে তাঁর রানসংখ্যা ৪৪৪০। ৯টি সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৭ ফিফটিসহ ৩৭ ম্যাচে ৩৭.৯৩ গড়ে ১১৭৬ রান করেছেন ৪৫ বছর বয়সী সাবেক এ ক্রিকেটার।
পিটারসেন তাঁর এই পোস্টে নিজের চাওয়া অনুযায়ী মন্তব্য পেয়েছেন ১ হাজারের বেশি। বেশির ভাগই এ সময়ের তারকা বোলারদের নাম উল্লেখ করেছেন। একজনের মন্তব্য, ‘ব্রড, অ্যান্ডারসন, বুমরা, স্টেইন, মরকেল, কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজলউড, লায়ন, অশ্বিন, বোল্ট ও সাউদি।’ পিটারসেন এই মন্তব্যের উত্তরে একটি বিষয় শুধরে দেন, ‘ব্রড, অ্যান্ডারসন, স্টেইন, মরকেল, সাউদি আর খেলে না।’ তবে তাঁর এই কথার উত্তরও দিয়েছেন সেই সমর্থক, ‘আপনি আধুনিক সময়ের কথা বলেছেন, রুট, স্মিথ, কোহলিরা তাদের ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময় এসব বোলারের বিপক্ষে খেলেছেন।’
তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষ দশে বর্তমান সময়ের কোনো বোলার নেই। বর্তমান বোলারদের মধ্যে ৭২৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক। যদিও তালিকায় ৩৫ বছর বয়সী এ বোলারের অবস্থান ১৪তম। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২৯২ ম্যাচ খেলেছেন স্টার্ক।
শীর্ষ দশে থাকা বেশ কয়েকজন বোলার স্টার্কের সমান এবং তাঁর চেয়ে কম সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়েও বেশি উইকেট পেয়েছেন। তবে তাঁরা সবাই স্টার্কের তুলনায় ম্যাচ খেলেছেন বেশি। শেন ওয়ার্নের ক্যারিয়ার যেমন ১৫ বছরের—৩৩৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১০০১ উইকেট। গ্লেন ম্যাকগ্রা ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৩৭৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৯৪৯ উইকেট। শন পোলক ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে ৪২৩ ম্যাচে নিয়েছেন ৮২৯ উইকেট। ওয়াকার ইউনিসের ক্যারিয়ার ১৪ বছরের—৩৪৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৮৯ উইকেট।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই দাবি, ব্যাটিং আগের তুলনায় সহজ হয়েছে কারণ, উইকেট এখন অতীতের তুলনায় ব্যাটিংবান্ধব। যদিও ভিন্নমত পোষণকারীরাও আছেন। তাঁদের দাবি, ক্রিকেট এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। তিন সংস্করণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও রমরমা সময় চলায় শুধু দেশের হয়ে খেলোয়াড়েরা আর আগের মতো এত ম্যাচ খেলতে পারেন না। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট আসার পর বোলারদের বোলিংয়ে বৈচিত্র্যও বেড়েছে। যদিও আগেও এমন বৈচিত্র্য ছিল, তবে সেসবের ব্যবহারে এখনকার মতো এত বেশি বোলারকে দেখা যায়নি।
জশপ্রীত বুমরার উদাহরণ টানা যায়। ভারতের এই পেসারকে কেউ কেউ এরই মধ্যে ‘সর্বকালের অন্যতম সেরা’ তকমাও দিয়ে ফেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্টের চোখে বুমরা ‘বোলিংয়ের ব্র্যাডম্যান।’ ছেলেদের র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম বোলার হিসেবে তিন সংস্করণেই শীর্ষে উঠেছেন। কিংবা স্কট বোল্যান্ডের কথাই ধরুন। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট একাদশে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া এই পেসার চলতি মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দারুণ এক কীর্তি গড়েন। গত ১১৫ বছরের মধ্যে বোল্যান্ডের বোলিং গড়ই টেস্টের সেরা।
অর্থাৎ অতীতের মতো এখনো ভালো বোলার আছেন। তবে অন্য সব খেলার মতো ক্রিকেটেও বর্তমান ও অতীতের মধ্যে কোন প্রজন্ম সেরা—এ নিয়ে বিতর্ক থাকবেই, যা কখনো থামবার নয়!
সাননিউজ/এসএ