নিজস্ব প্রতিবেদক : গুগলে সার্চ করলেই বাংলাদেশের লাখ লাখ নাগরিকের নাম, জন্মতারিখ ও এনআইডি নম্বর যে কেউ ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতে পারছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) সার্ভার থেকে হয়নি বলে সংবাদ মাধ্যমকে সংস্থাটির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন : বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ওয়েবসাইটে নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার বিষয়টি সংস্থাটির নজরে আসে।
এ বিষয়ে সিস্টেম ম্যানেজার জানান, আমাদের এনআইডি সার্ভিস নেওয়া বিভিন্ন পার্টনার আছে, যেমন- বিভিন্ন ব্যাংক, বিভিন্ন মিনিস্ট্রি। তারা আমাদের থেকে সার্ভিস নিয়ে থাকে। এর আগেও আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস নেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার সুরক্ষিত না থাকায়, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ঐ সময় আমরা জানার সাথে সাথে তাদের সার্ভিস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এটা আমাদের ইস্যু নয়।
আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফাইভ মার্ডার : আটক ৬
মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলছেন, আমাদের কাছ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান সার্ভিস নেয়, তাদের মধ্যে যাদের সফটওয়্যার সিকিউরড নয়, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটা হয়ে থাকতে পারে। আমাদের সার্ভারে ঢুকতে পারেনি, এটা নিশ্চিত। আমাদের সিস্টেমে কারো ঢোকার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সার্ভারে কেউ ডাটা পুশ করতে পারে না। আমাদের সার্ভার থেকে কেউ তথ্য নিতে চাইলে তাদের সার্ভার থেকে এনআইডির সার্ভারে আবেদন পাঠায়। সেক্ষেত্রে তারা যে তথ্য চেয়ে আবেদন করে, আমরা সেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। এখানে চাইলেই কেউ আমাদের সার্ভারে ঢুকে কোনো কিছু পরিবর্তন বা পুশ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন : ১৪ মামলার আসামি গ্রেফতার
কোন প্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিকদের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, এর খোঁজ পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিস্টেম ম্যানেজার জানান, আমরা সেটা বের করার চেষ্টা করছি। তবে আবারও বলছি, আমাদের এনআইডি সার্ভারে প্রবেশ করার কোন উপায় নেই। যারা সেবা নিচ্ছে, তারা তথ্য ব্যবহার করতে না পারার কারণে এটা হতে পারে। আমরা এটা অনুসন্ধান করছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন বাংলাদেশি নাগরিকদের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য সরকারি ওয়েবসাইটে ফাঁস হওয়ার বিষয়টি দেখতে পান দক্ষিণ আফ্রিকার কম্পিউটার নিরাপত্তা সমাধান সংস্থা বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোস।
আরও পড়ুন : ভারি বর্ষণের আভাস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম টেকক্রাঞ্চ তার বরাত দিয়ে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে।
টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের বিষয়টি সত্যি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ঐ ওয়েবসাইটের পাবলিক সার্চ টুলে ফাঁস হওয়া তথ্য খুঁজে দেখা হয়।
আরও পড়ুন : জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উদ্বোধন
ওয়েবসাইট থেকে তথ্য খোঁজার পর ফাঁস করা তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে যিনি রেজিস্ট্রেশন করার আবেদন করেছেন তার নামও। কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাবা-মায়ের নামও পাওয়া গেছে।
সংবাদ মাধ্যমটি আরও বলছে, তারা ঐ ওয়েবসাইটটির নাম প্রকাশ করবে না। কারণ সেটিতে এখনো ফাঁসকৃত তথ্যগুলো রয়েছে।
আরও পড়ুন : আজ খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
গুরুতর এ দাবি জানানো ভিক্টর মার্কোপোলোস বলছেন, তথ্য ফাঁস করার বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানকে ইমেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে অবহিত করেছেন, সেগুলো থেকে তাকে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, যেটির প্রত্যেকটির আলাদা নম্বর থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি বেচা-কেনা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ সব কাজ করা হয়।
আরও পড়ুন : ব্রাজিলে ভবন ধসে নিহত বেড়ে ১৪
সিইআরটি, বাংলাদেশ সরকারের প্রেস অফিস, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কের বাংলাদেশের কনস্যুলেটের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানান মার্কোপোলোস।
তিনি টেকক্রাঞ্চকে বলেন, ফাঁসকৃত তথ্যগুলো পাওয়া খুবই সহজ। গুগলের ফলাফল হিসেবে এগুলো সামনে আসে। আমি খুঁজতেও যাইনি। আমি এসকিউএল ইরর নিয়ে গুগলিং করছিলাম। আর এটি দ্বিতীয় ফলাফলে আসে।
আরও পড়ুন : ১১ জুলাই রুপিতে লেনদেন শুরু
যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে, সেগুলোই বেশ ঝুঁকির। এসব তথ্য ব্যবহার করে পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইনের আবেদনে ঢোকা, পরিমার্জন বা আবেদন মুছে ফেলা এমনকি জন্মনিবন্ধনের তথ্যের ভ্যারিফিকেশনও দেখা যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোস।
সান নিউজ/এনজে