জাতীয়

দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

সান নিউজ ডেস্ক: গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বিনিয়োগে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে শাহ আলমসহ তার ৪ সহযোগী নরসিংদীতে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো। শনিবার (১২ মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে নরসিংদী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ৫৭

র‍্যাব বলছে, শাহ আলম ২০১০ সালে নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে এ প্রতারণা শুরু করে। তিনি প্রতিষ্ঠাটির চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক ব্যবসায় খুব সহজেই উদ্বুদ্ধ হয়। এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), মো. সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আ. হান্নান মোল্লাহ (৩০)।

রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আরও পড়ুন: নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনা স্বামী-স্ত্রী নিহত

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রতারণার ঘটনা প্রচারে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য ও আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, নরসিংদী জেলার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার সাধারণ মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন। তারা ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভের আশায় শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরে নরসিংদী জেলার পলাশ থানায় একটি মামলা করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরেও অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার প্রত্যাশায় নরসিংদীতে অবস্থিত র‍্যাব-১১ এর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর র‍্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর নেতৃত্ব দেবেন ডু প্লেসি

গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১০ সালে নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারক চক্রটি। অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতো তারা।

তিনি আরও বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে চারটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠান ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এছাড়া অতিরিক্ত ২০জন পরিচালক নিয়োগ দেন। তারা আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তিদের পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিতেন। পরে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি., স্বদেশ টেক্সটাইল লি., শাহ সুলতান টেক্সটাইল লি. ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লি.।

প্রতারক চক্র আরও জানায়, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারদের প্রায় তিন শতাধিক কর্মী রয়েছে। যাদের কোনো বেতন দেওয়া হয় না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০ শতাংশ ও বছরে ৬ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হতো। গ্রেফতাররা বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাতো। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতো বলে জানা গেছে। এভাবে তারা গ্রাহক বাড়াতে সক্ষম হয়। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন দেয়। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

আরও পড়ুন: আত্মসমর্পণ করেছে ৬০০ রুশ সেনা

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা উত্তোলনের আবেদন করে। তখনই তারা বিভিন্ন অযুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুঁলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

সাননিউজ/এমআরএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে হাতিয়াতে উঠান বৈঠক

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষ...

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ইসলাম...

বাগেরহাটের কলার বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার দাম ভালো পাওয়ায়...

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের ঘটনা

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যার ঘটনা এমন মন্তব্য কর...

একীভূত হচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি

সম্প্রতি গুঞ্জন উঠে দেশের তরুণদের নিয়ে গঠিত দল দুইটি একীভূত হওয়ার বিষয়ে। তবে...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

আপিলেও জয়ী সেই আরিফ, এখন পৌর মেয়রের শপথের অপেক্ষায় 

কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মো. আরিফুর রহ...

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বগুড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত যুবদল নেতা রাহুল সরকারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়...

ফিলিস্তিনের জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব নেই

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের 'আক্রমণ ও আগ্রাসনের' নিন্দা জা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা