নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনায় যুব সমাজের বিচ্ছিন্নতাবোধ সমাজে নানা অসঙ্গগতি তৈরি করছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুবসমাজের এই বিচ্ছিন্নতাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
বুধবার (১১ আগস্ট) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বিযুক্ত যুব সমাজ: কে, কেন এবং কীভাবে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তাতারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, এটি অনস্বীকার্য যে চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত সব থেকে বেশি পড়েছে দেশের এই যুব সমাজের ওপরে। এই অভিঘাতের মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন। প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া যুবগোষ্ঠীর ওপরে যার মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সর্বোপরি একটি বিচ্ছিন্ন যুব সমাজে পরিণত করছে।
সংলাপের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন যুবসমাজ নিয়ে এই আলোচনায় চারটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১. ‘‘বিযুক্ত যুব সমাজ’ একটি অর্থবহ প্রত্যয় কি না? বিযুক্ত, বিচ্ছিন্ন বা অসংযোজিত এই যুব সমাজকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; ২. বিচ্ছিন্ন যুব সমাজের অন্তর্ভুক্ত কারা এবং কেনো? ৩. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থা থেকে তরুণদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ পর্যালোচনা; ৪. গতানুগতিক যুবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ও নীতির পাশাপাশি এই বিচ্ছিন্ন যুবসমাজের জন্য অর্থবহ ও কার্যকর সমাধান অনুসন্ধান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, যে পিছিয়ে পড়া এবং বিযুক্ত যুবদের আলাদা করে দেখতে হবে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, টেকসই খাদ্য উৎপাদন ও আহরণের ক্ষেত্রে যুবদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। করোনা বাস্তবতায় যুবদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তিনি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুবদের যদি উন্নয়নের সাথে যুক্ত করতে হয় তাহলে ইন্টারনেটের আওতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্যের প্রবেশগম্যতার উপর জোর দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে, যুবদের কাছে দক্ষতা ও চাকরি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পোঁছে দিতে হবে।
সংলাপে আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, নীতি পরিকল্পনা ও আলোচনায় দেশের যুব সমাজের জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা মোকাবিলার উদ্যোগ নেই। যুবগোষ্ঠীরদের সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দেখার আহ্বান জানান তিনি।
ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী এবং বৈশাখী টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা তাসনুভা আনান শিশির ও একইভাবে পিছিয়ে পড়া যুবদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন।
ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য আইন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য যে প্রয়োজন রয়েছে তার অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
এই সংলাপে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যুব প্রতিনিধিরা, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, আদিবাসী, দলিত, প্রতিবন্ধি, শ্রমিক, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা এবং সমাজকর্মী অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সান নিউজ/এফএআর