নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী অর্থবছরে (২০২১-২২) বিদ্যুৎ, বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে ৭২৬ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পআয়ের দেশ হতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুযায়ী নিম্ন-মধ্যম আয় থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণ নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধির নিরিখে মানসম্মত জ্বালানি ও বিদ্যুতের সংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। এটি সর্বজনবিদিত যে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সংস্থান।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশে বিগত ১২ বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৯ সনের তুলনায় বর্তমানে ৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৫ হজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৯ ভাগকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।’
‘বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। তাছাড়া ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন এবং ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনাধীন রয়েছে’ বলেন তিনি।
সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গৃহীত মেগা-প্রকল্পসমূহের অন্যতম রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্টাসুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এবং রূপপুর ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে মেট্রোপলিটন এলাকার সব বিতরণ লাইন ও সাবস্টেশন ভূগর্ভস্থ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৬ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জ্বালানির মোট চাহিদার একটি বৃহৎ অংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। দেশে আবিস্কৃত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে বর্তমানে ২০টি উৎপাদনে রয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ছিল এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট চাহিদার অবশিষ্ট পরিমাণ এলএনজি বা লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস হিসেবে আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে মোট এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজি ওই দু’টি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে দৈনিক গড়ে ৬০০-৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।
এছাড়া, এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ি এলাকায় দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার ল্যান্ড-বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
সাননিউজ/এএসএম
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            