জাতীয়

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান, সংশয়ে রোহিঙ্গারা

সান নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। জারি করেছে জরুরি অবস্থা। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন করে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের পরে দেশটির সাথে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে প্রত্যাশা করা হলেও সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে প্রত্যাবাসন আলোচনার অগ্রগতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আশা করছেন যে দেশটির সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি-এনএলডি গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সোমবার ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

এরই মধ্যে সু চিসহ এনএলডির কয়েকজন নেতাকেও আটক করা হয়েছে। প্রায় এক বছরের জরুরি অবস্থা শেষ হলে দেশটিতে নতুন করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

এখন মিয়ানমারের এই পরিস্থিতির কারণে দেশটি থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা দিল মোহাম্মদের প্রত্যাশা - তার দেশে যেন গণতন্ত্র ফিরে আসে।

"আমরা ডেমোক্রেটিক সরকার পছন্দ করি। যখন এনএলডি জিতল, আমরা খুব খুশি ছিলাম, আশা ছিল আমরা দেশে তাড়াতাড়ি ফেরত যাইতে পারবো, কিন্তু হঠাৎ করি সামরিক বাহিনী ইন্টারভেনশন করলো। আমরা চাই আবার গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসুক।"

দিল মোহাম্মদের মতো আরও লাখ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এখন সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করায় তারা বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

দিল মোহাম্মদ বলেন, "আমাদেরকে তো নির্যাতন করে বার করি দিল সামরিক বাহিনী। এখন এই সামরিক বাহিনী যদি আবার আসে, তাহলে তো আমাদের জন্য বিপদ।"

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত তিন বছর ধরে দফায় দফায় বৈঠক হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, সাধারণ নির্বাচনসহ আরও নানা কারণ দেখিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়া হয়।

এ পর্যন্ত দুইবার প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

সবশেষ গত ১৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশ ও চীনের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ত্রিদেশীয় বৈঠকে বসে।

সেখানে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলোয় সব পক্ষই মোটামুটি সম্মত হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দেশের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার কথা ছিল।

কিন্তু এই অভ্যুত্থানের ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, মিয়ানমারের ক্ষমতায় যারাই থাকুক না কেন তাদের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, "ক্ষমতায় সু চি আছে নাকি মিলিটারি, সেটার চাইতে জরুরি হল কারা এই আলোচনা এগিয়ে নিতে চায়। এই অভ্যুত্থান মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের উচিত হবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া। এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা।"

এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে আন্তর্জাতিক মহল সম্পৃক্ত থাকায় তাদের থেকেও চাপ থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে এই সেনা অভ্যুত্থান হওয়ায় ইতোমধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব নিন্দা জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আমেনা মোহসিন মনে করেন, "বাংলাদেশের উচিত হবে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর তারা যে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল, সেটাই যেন অব্যাহত রাখে।"

বিশ্লেষকদের মতে, রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর দমন নিপীড়নের ঘটনায় সু চির নীরব ভূমিকা এটাই প্রমাণ করে যে তিনি ভোটে নির্বাচিত হলেও সেনাবৃত্ত থেকে বেরোতে পারেননি।

মিস ইয়াসমিন বলেন,"মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চেয়েছিল সু চির যে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি, শান্তিতে নোবেল, এগুলোকে সামনে রেখে তারা নিজেদের গণহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেবে। কিন্তু বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় তারা পার পায়নি। এজন্য সু চির প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে কমে গিয়েছে।"

বরং তারা মনে করছে যে সু চি তাদের ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

সুতরাং সু চি যে শুধুমাত্র আই ওয়াশ সেটা বোঝাই যায়- বলেন মিস ইয়াসমিন।

তিনি মনে করেন, এজন্যই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এরকম একটা ঘটনা ঘটিয়েছে যাতে এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পেছানো যায়।

সু চির সরকারকে ঘিরে এমন বিতর্ক থাকলেও আশা ছিল এই সরকারের অধীনেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।

এখন সেনা সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে - কোন ব্যক্তিবিশেষের সাথে নয়।

তাই মিয়ানমারের এই পরিস্থিতিতেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সরকার তৎপর বলে তিনি জানান।

ইতিহাসের উদাহরণ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এর আগেও এই সেনা সরকার অধীনেই প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়েছিল।

কাজেই এই প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চলছে সেটা কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে গেলেও আটকে যাবে না।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার যে অঙ্গীকার করেছে সেটা সেনা সরকার নিশ্চিত করলে প্রত্যাবাসন নিয়ে আর কোন চিন্তা থাকবে না। সূত্র: বিবিসি

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

৪৮৪ রানে ২য় দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিম আউটের পরপরই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকলো টাইগাররা। শেষ বিকেলে...

গিলক্রিস্টকে টপকে মুশফিকের বিশ্বরেকর্ড

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে টপকে বিশ্বরে...

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫- এর উদ্বোধন

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫ এর উদ্বোধন ও আম চাষীদের সাথে মতবিনিম...

এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা; দেশব্যাপী পালনের নির্দেশ

দেশব্যাপী পালনের জন্য এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার,...

৪৯৫ রানে থামলো বাংলাদেশ

শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন মাঠে নেমে দিনের...

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি: উপদেষ্টা ফারুকী

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা...

এখনই ক্যাবরেরার ছাঁটাই নয়- বাফুফে

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারের পর ক্যাবরেরাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক...

দেশসেরা ঢাবি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) জরিপে...

ট্রুথ কমিশন গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: আইন মন্ত্রণালয়

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশ...

প্লাস্টিক শিল্প খাতে ১২০০ কারখানা বন্ধ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে গত এক বছরে প্লাস্টিক শিল্প খাতে এক হাজার ২০০ কারখান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা