জাতীয়

দীর্ঘ ১৬ বছর পর তৈরি হচ্ছে ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : আইন তৈরি করা হলেও দীর্ঘ ১৬ বছর ঝুলে ছিল ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন। অবশেষে সরকার স্থাপন করতে যাচ্ছে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এই ট্রাব্যুনাল। এ আপিল ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনা করবেন জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক।

বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকরা ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলার শুনানি করেন। আইন সংশোধন করে যুগ্ম জেলা জজদের পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজদেরও ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলা শুনানির এখতিয়ার দেওয়ার বিধান করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আইন সংশোধনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা ও আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অধীনে গঠিত সাব-কমিটি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ফলে দীর্ঘসময় পর কিছুটা হলেও ভূমি জরিপের মামলার বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদের ভূমি জরিপের মামলা নিষ্পত্তির এখতিয়ার দিয়ে আইন সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আশা করি, খুব শিগগিরই আইন সংশোধন করতে পারব। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী বলেন, আমি যতদূর জানি, আগামী অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। আশা করি তার পরের অধিবেশনে এটা উত্থাপন করা সম্ভব হবে। জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর প্রথম ভূমি জরিপ (বিএসআর) শুরু হয়েছে ১৯৮৪ সালে। এই জরিপ এখনও শেষ হয়নি। যেসব এলাকায় শেষ হয়েছে, সেখানে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি। মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা ও অসতর্কতায় ভুলে ভরা ভূমি জরিপের খেসারত গুনতে হচ্ছে জমির মালিকদের। জরিপের পর্চা আর মানচিত্রে ভুল আর ভুল।

কারও জমি পর্চায় আছে, তো মানচিত্রে নেই। আবার মানচিত্রে থাকলে পর্চায় নেই। জমির মালিকের নামের ভুল, নামের বানানে ভুল, জমির পরিমাণে ভুল এবং গরমিলসহ অসংখ্য ত্রুটি রয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শত বছর ধরে ভোগদখল করে এলেও মালিকের নামের পরিবর্তে জরিপে দেখানো হয়েছে অন্যের নাম।

এসব সমস্যার সমাধানে ২০০৪ সালে সরকার ১৯৫৩ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করে এর ২ ধারায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এবং ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিক প্রতিকার পেতে এই ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ভূমি জরিপের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এক বছর পর্যন্ত সময়ে এই মামলা করা যায়।

উপযুক্ত কারণ দর্শানোসাপেক্ষে অতিরিক্ত আরও এক বছর সময় নিতে পারেন জমির মালিকরা। এরপর ২০১২ সালে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে সরকার। সুপ্রিমকোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত সারাদেশের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালগুলোয় বিচারাধীন মামলা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০৯টি। এর মধ্যে ৫ বছরের ওপরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৮০৭টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ১৯৩টি মামলার বিচার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের আইন অনুযায়ী দেশে ৪৩টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এসব ট্রাইব্যুনালে গড়ে ৭ হাজারের ওপরে মামলা ঝুলছে। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের মোট ৩৮ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। কিছু মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে। কিন্তু ভূমি জরিপ মামলাগুলো প্রায় প্রাথমিক ধাপেই পড়ে আছে। অধিকাংশ মামলার শুনানিই শুরু হয়নি।

৩ লাখ ১৪ হাজার মামলার মধ্যে ৪২ হাজার ৬২৭টি মামলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ শীর্ষে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মামলা ৫ বছরের ওপরে বিচারাধীন। এই জেলার ৪ দশকের অভিজ্ঞ দেওয়ানি আইনজীবী ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন। তার চেম্বারে পক্ষ-বিপক্ষ মিলিয়ে ভূমি জরিপের ২ হাজারের বেশি মামলা আছে। তিনি বলেন, জরিপের গেজেট প্রকাশের পর মামলা দায়েরে এ জেলায় দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছিল।

২০১৬ সালের মে মাসের পর এখানে আর নতুন মামলা নেওয়া হচ্ছে না। তার ২ হাজার মামলার মধ্যে বড়জোর ১০০ জন রায় পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু এসব মামলার সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল করতে পারছে না। আবার অনেকে নতুন করে মামলাও করতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, একটি ট্রাইব্যুনালে ৪২ হাজার মামলা বিচারাধীন। বছরে ছুটির দিন বাদে একজন বিচারক ২০০ দিনের মতো বিচারকাজ করে থাকেন।

হাইকোর্টে দেওয়া রায়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছরে ভূমি মন্ত্রণালয় আপিল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় লাখ লাখ মানুষ চরম ও সীমাহীন দুর্ভোগে নিমজ্জিত হয়েছেন। সরকার নিজের আইন নিজে যথাযথ এবং দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করবে, এটাই সকলের কাম্য। রায়ে আরও বলা হয়, ‘গত ১৫ বছর ভূমি মন্ত্রণালয় এদেশের মালিক জনগণকে তার আইনসম্মত প্রাপ্য (তথা আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল মামলা দায়েরের) অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে।

ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনি জনগণ সুবিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবরা আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ না করে জনগণের সাথে অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং ক্ষমার অযোগ্য আচরণ করেছেন। ১৫ বছর ধরে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে না পারার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা মন্ত্রী-সচিবদের কৈফিয়ত চাওয়ার কথা বলা হয়েছে রায়ে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি...

ফিলিস্তিনের জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব নেই

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের 'আক্রমণ ও আগ্রাসনের' নিন্দা জা...

দুর্ব্যবহারের কারণে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বর্জন

রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্য...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বগুড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত যুবদল নেতা রাহুল সরকারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা