দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও গত এক বছরে তেমন অগ্রগতি হয়নি। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাঞ্চন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চলার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা এখন অন্তত আরও ১০ বছর পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকলেও এখনো সব কাজের চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। আগের সরকারের কিছু চুক্তি নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংশয় এবং ব্যয় কমানোর নতুন পরিকল্পনার কারণে কাজ কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)–এর সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিলের সম্ভাবনাও বিবেচনায় আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যয় কমানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় প্রকল্প দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হলে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা পরিবর্তনের কারণে সময় আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএমটিসিএলের ৭১তম পরিচালনা পরিষদ সভায় জানানো হয়, ঠিকাদাররা প্রস্তাবিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি অর্থ দাবি করছে। ফলে জাইকার অনুমতি নিয়ে কিছু চুক্তি বাতিলের বিষয় বিবেচনায় রয়েছে। সংস্থার সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ (উত্তর)–এর কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে এবং শিগগিরই পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুখ আহামেদ বলেন, আগের সময়সীমা বাস্তবসম্মত ছিল না। মেট্রো নির্মাণে সাধারণত ছয় থেকে সাত বছর সময় লাগে। কৌশলগতভাবে সব চুক্তি প্রস্তুত করে একসঙ্গে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, ব্যয় বেশি বলা যাবে কেবল তখনই, যখন ব্যয় কমানোর রূপরেখা স্পষ্ট হবে। তার মতে, নতুন অর্থায়ন, বিনিয়োগকারী ও নকশা পরিবর্তন মিলিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ বছরও কম সময় নয়।
প্রকল্পের আওতায় কাঞ্চন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৩১.২৪ কিলোমিটার পথে ১৯.৮৭ কিলোমিটার থাকবে মাটির নিচে এবং বাকি ১১.৩৭ কিলোমিটার উড়ালপথে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাইকা দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
তবে গত চার মাসে কোনো নতুন অগ্রগতি না থাকায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বেড়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, মেট্রো প্রকল্পগুলো জাপান–বাংলাদেশ সহযোগিতার মূল অংশ, এবং সময়মতো শেষ করাকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার, বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞ—সব পক্ষের প্রশ্ন একটাই: পাতাল মেট্রোরেল কি আদৌ আগামী ১০ বছরের মধ্যে চালু হতে পারবে?
সাননিউজ/এও