ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

শর্তসাপেক্ষে রাখাইনদের জন্য করিডোর দিতে সম্মত বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চ কিংবা এপ্রিলে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে– এমন শঙ্কা থেকে সেখানে মানবিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডোর চেয়েছিল সংস্থাটি। এ করিডোর ব্যবহারে কিছু শর্ত মানতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডোরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। কারণ, এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আপাতত বলছি না। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বের কোনো মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে ছিল না। যদিও মানবিক করিডোর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডোর অপরাধীরা নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। করিডোর দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমও সংঘটিত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার কারণে যত মানবিক করিডোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দিয়ে নানা অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখা গেছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মানবিক করিডোর ব্যবহারের শর্ত জাতিসংঘকে দেওয়ার আগে ঢাকা ও নেপিদোকে এই করিডোর ব্যবহার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। শর্তগুলো নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করবে ঢাকা।

জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইনে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে খাদ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বাংলাদেশকে বলছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা না গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত বাকি জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মানবিক করিডোর দিয়ে সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে; আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশ করিডোরকে মানবিক ক্ষেত্রে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করলেও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। সহজ করে বললে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে সব সরবরাহ আটকে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলো দখলে নেবে– এর নিশ্চয়তা নেই।

এমনিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতিসংঘকে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের চাহিদার বিপরীতে পূর্ণ সহযোগিতা পায়নি সংস্থাটি। ফলে বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে রাখাইনে যে মানবিক সহায়তা যাবে, তা পর্যাপ্ত না হলে সেখানকার নাগরিকদের ত্রাণের উৎসে একসঙ্গে হামলে পড়ার শঙ্কা থাকে।

মিয়ানমারের এ অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু পাচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকার শঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দরকষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই। মানবিক করিডোর পেতে শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী অন্য দেশেও চেষ্টা করা উচিত জাতিসংঘের।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময় রাখাইনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারের সব প্রতিবেশী দেশকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেন সহিংসতা বন্ধে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ তৈরি হয়।

তিনি বলেন, প্রথমেই সহিংসতা বন্ধ, একই সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে। একই সময়ে মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা বাড়াতে হবে, যেন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণেই আমাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সাননিউজ/ইউকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা