ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বিএনপি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন— তা এই সময়ের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে দলের স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্য মনে করছেন, বিভ্রান্তি এড়াতে এই প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া জরুরি। তাদের মতে, প্রার্থী তালিকা গোপন রাখলে মাঠে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্পষ্টতা বাড়ছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিও ব্যাহত হচ্ছে।
হাইকমান্ডের বৈঠকে কৌশল নির্ধারণ: সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় বিএনপি এবার জামায়াতে ইসলামীকেই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে, এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।
১৫০ আসনে প্রায় চূড়ান্ত, বাকিগুলোতে জটিলতা: জরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বড় কোনো জটিলতা নেই। তবে শতাধিক আসনে একাধিক প্রার্থী ও গ্রুপিং থাকায় সেসব আসনকে “জটিলতাপূর্ণ” বিবেচনা করা হয়েছে। সংকট নিরসনে প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।
গোপন তালিকা ও বিভ্রান্তি: দলীয় কৌশল অনুসারে এখন গোপনভাবে আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত (গ্রিন সিগন্যাল) দেওয়া হচ্ছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবে অনেক এলাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বুঝতে পারছেন না কে চূড়ান্ত প্রার্থী, ফলে তৃণমূলের প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক: বৈঠকে আরও আলোচনা হয় নির্বাচন কমিশনের চলমান প্রস্তুতি নিয়েও। বিএনপি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসির উদ্যোগে তৈরি করা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেলে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা সংখ্যায় বেশি। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই আজ বুধবার বিএনপি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাবে।
প্রশাসনে ‘জামায়াতীকরণ’ নিয়ে উদ্বেগ: বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক আলোচনায় উঠে আসে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পক্ষপাতমূলক রদবদল ও পদায়নের অভিযোগ। দলটির নেতারা মনে করেন, কিছু উপদেষ্টা ও কর্মকর্তা জামায়াতের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন। এটি আসন্ন নির্বাচনে সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সতর্ক বার্তা: এই প্রেক্ষাপটে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে তারা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, জামায়াতপন্থী প্রভাব কমানো এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে জোর: বিএনপি বলছে, নির্বাচন তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। সেই দাবি নিয়েই তারা আজকের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে।
দিন শেষে বিএনপির কৌশল স্পষ্ট- অক্টোবরের মধ্যেই প্রার্থী চূড়ান্ত, মাঠে একক প্রার্থীর নেতৃত্বে ঐক্য, এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখা।
সাননিউজ/এও