কন্যাশিশু ও কিশোরীসহ তরুণদের শিক্ষা, দক্ষতা এবং তাদের জন্য সুযোগ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো তুলে ধরতে আজ মঙ্গলবার ঢাকার ফুলার রোডে এক সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। সিম্পোজিয়ামে একে অপরের কাজ ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরিতে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শিক্ষার নতুন সুযোগ সৃষ্টি নিয়েও আলোচনা করা হয়।
‘ফ্রম ব্যারিয়ার্স টু ব্রেকথ্রুস : আ সিম্পোজিয়াম অন এডুকেশন অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও ব্যবসা খাতের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও ও শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনায় অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারীরা এ সময় তাদের চলমান বিভিন্ন প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান এবং নারীদেরসহ সব তরুণের শ্রেণিকক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য সমন্বিত পথ তৈরি করার বিভিন্ন উপায় বিশ্লেষণ করেন। কিশোরী ও তরুণীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য যেসব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা উদযাপন করা, পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাই যেন একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারেন এবং ভবিষ্যতে মিলেমিশে এসব উদ্যোগ আরও এগিয়ে নিতে পারেন—এই ছিল আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যুরোর (বিএনএফই) মহাপরিচালক দেবব্রত চক্রবর্তী। মূল বক্তব্য প্রদান করেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির সাবেক পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬.৭ শতাংশ শিশু কখনোই স্কুলে ভর্তি হয় না। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা—প্রতিটি স্তরেই মেয়েদের নানামুখী বাধার সম্মুখীন হতে হয়, যার ফলে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার মাত্র ৪৪ শতাংশে আটকে আছে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ও কর্মসংস্থান একে অপরের পরিপূরক। কোনো নারী বা মেয়েকে পেছনে ফেলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।”
মূল প্রবন্ধে ড. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষাখাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নিম্নমান, পর্যাপ্ত তথ্য-ব্যবহার না থাকা, অনুদানস্বল্পতা, শিক্ষক সংকট এবং উচ্চহারে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মতো গুরুতর সমস্যাগুলো এখনও বিদ্যমান, যা মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও প্রকট। অন্তর্ভুক্তিমূলক, ভবিষ্যত উপযোগী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন বাড়তি বিনিয়োগ ও নতুন কৌশল; পাশাপাশি প্রয়োজন সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের কার্যকর অংশীদারিত্ব।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, “ব্রিটিশ কাউন্সিলে কিশোরীদের শিক্ষা অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচ্য। আমাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম ‘ইংলিশ অ্যান্ড ডিজিটাল স্কিলস ফর গার্লস’ (ইডিজি) কিশোরী ও নারীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় নানা দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যেই হাজারো তরুণ নারীকে বিভিন্ন দক্ষতায় সক্ষম করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, তারা তাদের শিক্ষাগত সাফল্যকে অর্থবহ কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে রূপ দেবে।”
ব্রিটিশ কাউন্সিল, ব্র্যাক, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্যুরো অব নন-ফরমাল এডুকেশনসহ শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও সুযোগ বৃদ্ধির কার্যকর অনুশীলন তুলে ধরে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে। পরে অংশগ্রহণকারীরা বিষয়ভিত্তিক ব্রেকআউট সেশনে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার উপায় অনুসন্ধান করেন।
‘ফিউচার ডিরেকশনস ফর এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন ব্রিটিশ হাই কমিশনের টিম লিডার ও শিক্ষা উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া। প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন সিএএমপিই’র নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী, বিএনএফই’র মহাপরিচালক দেবব্রত চক্রবর্তী এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন।
রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, “মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতা ও সুরক্ষাজনিত উদ্বেগই সবচেয়ে বড় বাধা। এসবের সঙ্গে সামাজিক মানসিকতা ও অর্থনৈতিক সমস্যা যুক্ত হয়ে ঝরে পড়ার হার বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। নারী ক্ষমতায়নের উদ্যোগ এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার মধ্যে এখনও বড় ধরনের নীতিগত ফাঁক রয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতেরও উচিত মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া। এই সমন্বিত পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার বাড়াবে এবং নারীর টেকসই অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ আরও সুগম করবে।”
সাননিউজ/আরপি