তিতুমীর
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

তিতুমীর’র জন্মদিন

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স্রোতে একসময় হয়ে উঠে ইতিহাস। পৃথিবীর বয়স যতোই বাড়ে ইতিহাস ততোই সমৃদ্ধ হয়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। ইতিহাসের প্রতিটি দিন তাই ভীষণ গুরুত্ব পায় সকলের কাছে।

সান নিউজের পাঠকদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সংযোজন করেছে নতুন আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।

আজ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ১৩ মাঘ , ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। ৪ রজব ১৪৪৪ হিজরি। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ২৭তম দিন। বছর শেষ হতে আরও ৩৩৮ (অধিবর্ষে ৩৩৯) দিন বাকি রয়েছে।

একনজরে দেখে নিন ইতিহাসের এ দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

আরও পড়ুন: তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব

ঘটনাবলি:

১৮২২ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিসের স্বাধীনতা ঘোষণা।
১৮৮০ টমাস আলভা এডিসন বৈদ্যুতিক বাতির বাণিজ্যিক পেটেন্ট করেন।
১৯২৬ জন লগি বেয়ার্ড সর্বপ্রথম জনসমক্ষে টেলিভিশন প্রদর্শন করেন।
১৯৪৪ সোভিয়েত রাশিয়ার সৈন্যরা স্থায়ীভাবে লেনিনগ্রাদ অবরোধ ভঙ্গ করতে সক্ষম হয়।
১৯৭৩ প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০০২ নাইজেরিয়ার লেগোস শহরে সামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণে ১,১০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০,০০০ লোক গৃহহারা হয়।
২০০৪ বাংলা উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু।
২০০৬ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, টেলিগ্রাফি ও বাণিজ্যিক মেসেজিং সেবা বন্ধ করে দেয়।

আরও পড়ুন: প্রথম দিনেই পাঠানের ১০ রেকর্ড

জন্মদিন:
১৭৫৬ ভোল্‌ফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট, অস্ট্রীয় সুরকার।

১৭৮২ তিতুমীর, একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। তিতুমীর ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী ব্যক্তিত্ব। তার প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী। তিনি ওয়াহাবী আন্দোলন এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অনুগত অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি (১৪ মাঘ ১১৮২ বঙ্গাব্দ) ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে বাদুড়িয়া থানার হায়দারপুর) গ্রামে একটি সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হযরত আলীর বংশধর বলে দাবি করতেন।

তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করেন। ১৮ বছর বয়সে তিতুমীর কোরআনে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভ করেন। একই সাথে তিনি বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তার জন্মের পর তার একবার অসুখ হয় সেই অসুখের জন্য ডাক্তার দিলেন ভীষণ তেতো ওষুধ, এই ওষুধ শিশু তো দূরের কথা, বুড়োরাই মুখে নেবে না কিন্তু প্রায় দশ-বারোদিন তিনি এই ওষুধটি হাসিমুখেই খেলেন, এতে বাড়ির সবাই অবাক তাই প্রথমে তার নাম হয় তেতো, এরপর তিতু এবং সবশেষে তিতুর সঙ্গে মীর লাগিয়ে হয় তিতুমীর।

১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যান। তিনি সেখানে আরবের স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও ওয়াহাবী মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তার গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

তিনি এবং তার অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্‌বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত 'দাঁড়ির খাজনা' এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। আগেই তিতুমীর পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পূর্বে জমিদারের লাঠিয়াল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন।

তিতুমীরের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে এক সময় ৫,০০০ এ গিয়ে পৌঁছায়। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তারা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করেন।

তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নিজেকে 'বাদশাহ করে মৈনুদ্দিন নামে জনৈক ওয়াহাবীকে প্রধানমন্ত্রী ও তার ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। তন্মধ্যে বারাসত বিদ্রোহ অন্যতম। উইলিয়াম হান্টার বলেন, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন।

অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন, "ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।”

১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারে নি।

১৮৩১সালের ১৯শে নভেম্বর তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন। তার বাহিনীর প্রধান মাসুম খাঁ বা গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সম্মাননা:
তিতুমীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কলেজ কে তার নাম অনুসারে সরকারী তিতুমীর কলেজ নামকরণ করা হয়। তার নামে বুয়েট এ একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তিতুমীর হল। বিবিসির জরিপে তিনি ১১তম শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিতুমীরের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা শহরে রূপসা নদীর তীরে 'বানৌজা তিতুমীর' নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি কমিশন করেন ও ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন।
এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণ করা হয় বিএনএস তিতুমীর। রাজশাহী ও নীলফামারী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের মধ্যে 'তিতুুমীর এক্সপ্রেস' নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত শহরে চাঁপাডালি মোড়ে শহরের মূল বাসস্ট্যান্ডকে তিতুমীরের নাম যোগ করে তিতুমীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল করা হয়েছে।

১৮৮৬ রাধাবিনোদ পাল প্রখ্যাত বাঙালি আইনজ্ঞ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জাপান-বন্ধু ভারতীয় নামে সুপরিচিত।
১৮৯১ রুশ ঔপন্যাসিক ইলিয়া এরেন বুর্গ।
১৮৯৭ প্রখ্যাত শিশু-সাহিত্যিক কৃষ্ণদয়াল বসু।
১৯০৫ আবুল হাশিম, ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ।
১৯৩২ ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ খ্যাত লুইস ক্যারল, হাস্যরস শিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক।
১৯৩৪ এদিত ক্রসঁ, ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৩ রাম রে নামে সুপরিচিত ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের এক কিংবদন্তি।
১৯৫৬ অমর সিংহ (রাজনীতিবিদ), ভারতীয় রাজ্য সভার সদস্য।
১৯৬৪ ব্রিজেট ফন্ডা, মার্কিন অভিনেত্রী ও গায়িকা।
১৯৬৯ বিক্রম ভাট, ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।
১৯৭৯ রোজামান্ড পাইক, ইংরেজ অভিনেত্রী।

আরও পড়ুন: পাঠান ঝড়ে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব

মৃত্যুবার্ষিকী:
১৮১৪ ইয়োহান গটলিব ফিকটে, ছিলেন একজন জার্মান দার্শনিক।
১৮৬০ ইয়ানোস বলিয়ই, হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ।
১৯০১ জুসেপ্পে ভের্দি, ইতালীয় সুরকার।
১৯১৭ নবাব ওয়াকার-উল-মুলক মৌলভী, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭০ প্রবীর কুমার সেন খ্যাতনামা ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম বাঙালি যিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ১৪ টি টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
১৯৭৮ পশুপতি ভট্টাচার্য, খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
১৯৮৬ পণ্ডিত নিখিল রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মাইহার ঘরানার ভারতীয় ধ্রুপদী সেতার বাদক।
২০০৫ শাহ এ এম এস কিবরিয়া, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।
২০০৭ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হক।

দিবস: জাতীয় কানাস দিবস

সান নিউজ/জেএইচ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

কেশবপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুরঃ আগামী ০৮ ই মে ২০২৪, রোজ বুধবা...

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

আফ্রিকায় ভারী বৃষ্টি, নিহত ১৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হ...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

সেরা সুন্দরী হলেন ৬০ বছরের আলেজান্দ্রা 

বিনোদন ডেস্ক: ৬০ বছর বয়সে সেরা সু...

সোনার দাম ফের কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারও সোনার দাম...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বনানীত...

থাইল্যান্ডের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান 

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ডের ব্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা