আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন স্থানে মস্কো হামলা শুরু করার পরে বিবৃতি দিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাতিসংঘে রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবে ভোট দিল নয়াদিল্লি।
আরও পড়ুন : পাকিস্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয় পশ্চিমারা
বুধবার (১২ অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ায় সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, যেভাবে নিরীহ মানুষের প্রাণ নেয়া হচ্ছে এবং অবকাঠামোগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে, তা বিশ্বের কোনো প্রান্তই মেনে নেবে না।
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, পরিস্থিতি ক্রমশ এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে যে, রাশিয়ার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাওয়াটা ভারতের পক্ষে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্যের কূটনীতি অবশ্যই বহাল রাখা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবারই (১১ অক্টোবর) রাশিয়ার সাথে ভারতের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলো যখন ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল, সেই বিপদের দিনে মস্কোই নয়াদিল্লির পাশে ছিল।
আরও পড়ুন : আবারও এরদোগানের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন
রাশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বের ইতিহাস বর্ণনা করে তাদেরই বিরুদ্ধে অবশেষে জাতিসঙ্ঘে ভোট দেয়াটাও এই ভারসাম্যের কূটনীতির মধ্যেই পড়ে। যেহেতু ভারত গত ছয় মাস ধরে মস্কোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, ফলে তাদেরও বর্তমান ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিতে দর কষাকষির ক্ষমতা অনেকটাই বেড়েছে।
তবে সস্তায় রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করার পাশাপাশি হিংসা বন্ধের প্রশ্নেও ধারাবাহিকভাবে একই কথা বলে আসছে মোদি সরকার। সেটি হলো, অবিলম্বে কূটনীতি এবং আলোচনার রাস্তায় ফিরতে হবে। প্রয়োজনে সব রকম মধ্যস্থতা করতে রাজি আছে ভারত সরকার।
সম্প্রতি সমরখন্দে ভারত-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকেও সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখের ওপরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একই কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুন : ফেসবুকে কমছে ফলোয়ার সংখ্যা
ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় সংযুক্তির নিন্দা প্রস্তাবের খসড়া গত রাতে জাতিসংঘ প্রস্তুত করা হয়েছিল। রাশিয়া সেই প্রস্তাবে ভোটের জন্য গোপন ব্যালটের দাবি জানায়।
রাশিয়ার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে গোপন ব্যালটের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছে ভারত। সাথে একশোটিরও বেশি দেশ। ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলবেনিয়া ওই নিন্দা প্রস্তাবটি এনেছিল। সেই প্রস্তাবে ইউক্রেনের দোনেস্ক, খেরসন, লুহানস্ক এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চল রাশিয়ার দখল করা এবং সেখানে অবৈধভাবে গণভোট করানোর নিন্দা ও বিরোধিতা ছিল।
আরও পড়ুন : ইরানে নিহত ২০০ ছাড়াল
রাশিয়া আলবেনিয়ার প্রস্তাব গ্রহণের সিদ্ধান্তটির পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। শুধুমাত্র ১৩টি দেশ রাশিয়ার পক্ষে ছিল। ১০৭টি দেশ রাশিয়ার বিপক্ষে। ৩৯টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। হার অবশ্যম্ভাবী জেনেই এখানে রাশিয়া ও চীন ভোট দেয়নি বলে কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা।
জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া এই ভোট প্রদানের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তার অভিযোগ, নিরাপত্তা পরিষদে জালিয়াতি হচ্ছে।
সান নিউজ/এইচএন