আন্তর্জাতিক

চাঁদে জমি বিক্রি করেন তিনি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘চাঁদ মামা, চাঁদ মামা টি দিয়ে যা’। ছেলেবেলায় আমরা প্রত্যেকেই হাতছানি দিয়ে ডেকেছি চাঁদ মামাকে। কিন্তু চাঁদমামা এসে টি দিয়ে যায়নি কখনো। বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা চাঁদের কাছে পাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছি। এছাড়া চাঁদের চাইলে আপনি জমি কিনতে পারবেন।

চাঁদের জমি বিক্রি করেন মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপ। প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ ডলার থেকে। বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ২ হাজার ১২১ টাকা। তার এই জমির মালিকানাও আইনত বৈধ। আছে দলিল। এমনকি মৌজা-পরচার মতো আইনি নথিও আছে।

তবে জমি কিনলেও তা চোখে দেখার সুযোগ প্রায় নেই। তাই দলিলের সঙ্গে ক্রেতাদের একটি করে চাঁদের মানচিত্র দেন হোপ। যাতে তারা বুঝতে পারেন ঠিক কোন জায়গায় জমি কিনলেন। এ পর্যন্ত ৬০ লাখের বেশি ক্রেতার কাছে চাঁদের ৬১ দশমিক ১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছেন হোপ।

তার দাবি, চাঁদের জমির চাহিদা বেশ ভালো। অনেকেই আছেন যারা জমি কিনতে বার বার ফিরে আসেন তার কাছে।

ক্রেতার ব্যাপারে কোনও বাছবিচার নেই হোপের। তারকা থেকে সাধারণ চাকুরিজীবী— সবাই রয়েছেন ক্রেতার তালিকায়। হোপের দাবি, ৬৭৫ জন নামী তারকা জমি কিনেছেন তার কাছ থেকে। যাদের মধ্যে আছেন আমেরিকার তিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রিগানও।

জমির দাম রাখা হয়েছে সাধারণের আয়ত্তের মধ্যেই। ২৪ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয় হোপের বিক্রি করা একর প্রতি চাঁদের জমির দাম। শেষ ৫০০ ডলারেই। বেশি দামেরও জমি আছে। এক একটি মহাদেশের সমান সেই জমির দাম প্রায় ১৪ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

তবে জমি যেমনই হোক, একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন হোপ—সব জায়গা থেকেই পৃথিবীকে সমানভাবে দেখা যাবে।

হোপ জানিয়েছেন চাঁদের সবচেয়ে বৃহদাকৃতি জমির অংশটিতে ৫৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ একর জায়গা আছে। যদিও সেই জমির ক্রেতা এখনও পাননি হোপ। বেশি চাহিদা ১৮০০-২০০০ একরের জমির। ম্যারিয়ট হিলটনের মতো বেশ কিছু হোটেলও জমি কিনেছে তাদের কাছ থেকে।

হোপের সংস্থার নাম লুনার এমব্যাসি। যার বাংলা অর্থ চান্দ্র দূতাবাস। চাঁদে হোপের জায়গাজমির ‘দেখভাল’ করে এই সংস্থাই। হোপ নিজেই সংস্থার সিইও। যদিও এই সিইও-র অর্থ চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার নয়। সেলেশ্চিয়াল এগজিকিউটিভ অফিসার। মহাজাগতিক বিশেষ অধিকর্তা। তবে নিজেকে ‘চাঁদের মালিক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন হোপ।

চাঁদের জমির ব্যবসার বুদ্ধি এবং রসদ দুই-ই হোপ পেয়েছিলেন তার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের বদৌলতে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের আনা একটি প্রস্তাবের ফাঁক ফোকরই সাহায্য করেছিল হোপকে। ওই প্রস্তাবের মূল বিষয় ছিল সৌরজগতের মধ্যে থাকা মহাজাগতিক বস্তু।

জাতিসংঘ বলেছিল, বিশ্বের কোনও দেশ বা কোনও দেশের সরকার সৌরজগতের কোনও মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না।

১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবক’টি দেশ সম্মতি দিয়েছিল। তবে ওই প্রস্তাবে কিছু ফাঁক-ফোকরও ছিল। মহাজাগতিক বস্তুর ওপর সরকার বা দেশের অধিকার নিয়ে কথা বললেও এমনটা কোথাও বলা ছিল না যে— কোনও ব্যক্তি এই দাবি করতে পারবেন না। হোপ ওই ফাঁক-ফোকরকে কাজে লাগিয়েই চাঁদের মালিকানা দাবি করেন।

বিষয়টি উল্লেখ করে জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি লেখেন তিনি। আশির দশকের একেবারে গোড়ার দিকে লেখা ওই চিঠিতে চাঁদের জমি এবং খনিজ সম্পদের মালিকানা দাবি করেন হোপ। সে চিঠির জবাব আজও আসেনি। তবে জাতিসংঘের মৌনতাকে সম্মতি ধরে নিয়েই চাঁদের জমি বিক্রি করতে শুরু করেন হোপ।

সেই থেকে শুরু। ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে গত ৪১ বছর ধরে বেশ রমরমিয়ে চলেছে হোপের চাঁদের জমির ব্যবসা। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে খাতা-কলম-খেলনার মতোই চাঁদের জমি বিক্রির বিজ্ঞাপনী পোস্টার পড়ত। ক্রেতারা আগ্রহ দেখালেও সে সময় লুনার এমব্যাসির কার্যকলাপকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি কেউ। কিন্তু এখন হোপের দাবি অনেককেই ভাবাচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়া বৈধ হতে পারে না। তার কারণ প্রশাসন বা সরকার ছাড়া কেউ জমি বিক্রি করতে পারে না। বিষয়টি জানার পরই অবশ্য দ্রুত ব্যবস্থা নেন হোপ। নিজস্ব সরকারই তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন গ্যালাকটিক ইনডিপেন্ডেন্ট গভর্নমেন্ট। হোপ সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট।

২০০৯ সালে হোপের গ্যালাকটিক গভর্নমেন্ট আমেরিকার সরকারের স্বীকৃতি পায়। খোদ হিলারি ক্লিন্টন সই করেছিলেন গ্যালাটিক ইলডিপেন্ডেন্ট সরকারের স্বীকৃতি পত্রে।

সরকার থাকলে সংবিধান লাগে, দরকার নিজস্ব মূদ্রা, পতাকা, প্রতীক-সহ আরও অনেক কিছু। হোপ সেই সবই বানিয়েছেন। তার গ্যালাকটিক সরকারের নিজস্ব মূদ্রা রয়েছে। আছে নিজস্ব আইন-কানুনও। এ ছাড়া লুনার এমব্যাসির নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা ছাড়াও জাপান এবং কোরিয়ায় রয়েছে কার্যালয়।

আমেরিকার পূর্ব উপকূলে নেভাদায় লুনার এমব্যাসির মূল কার্যালয়। সব মিলিয়ে ডজন খানেক কর্মী কাজ করেন সেখানে। জমির চাহিদার রকমফেরে কর্মীসংখ্যা বাড়ে-কমে। ৪১ বছরের ব্যবসায় এখন আর অবশ্য শুধু চাঁদে থেমে নেই হোপ। পৃথিবীর উপগ্রহ থেকে তার ব্যবসা ছড়িয়েছে ভিনগ্রহেও।

একই আইনের ফাঁক গলে এখন বুধ, মঙ্গল, শুক্র, প্লুটো এমনকি বৃহস্পতির উপগ্রহ আইও-তেও জমি বিক্রি করছেন তারা। হোপ জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তাদের মহাজাগতিক জমির ব্যবসার পরিসর আরও বাড়বে।

আপাতত হোপের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই। জাতিসংঘ। লুনার এমব্যাসির মহাজাগতিক অধিকারের চিঠির জবাব যদি শেষ পর্যন্ত তারা দিয়ে দেয় এবং তাদের দাবি খারিজ করে দেয় তাহলে ৬০ লাখ বিশ্ববাসীর চাঁদ ধরার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। আনন্দবাজার।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমি...

হরিপুরে হিট স্ট্রোকে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপ...

রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ইসরায়ে...

এবার লাক্সের অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন সুহানা 

বিনোদন ডেস্ক: বলিউড বাদশা শাহরুখ খান ও গৌরি খান দম্পতির কন্য...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেশ কি...

মুন্সীগঞ্জে দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে চিপস...

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহত ৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৪ জন নিহত হয়ে...

কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়...

মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২০ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভি...

পেরুতে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পেরুতে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা