নেপালে তীব্র বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা পদত্যাগের পর দেশটিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হতে যাচ্ছে।পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিক্ষোভকারী তরুণরা। জেন-জিরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছে। আজকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। তরুণদের সঙ্গে এই বৈঠকের আগে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল ও সুশীলা কারকির ঘনিষ্ঠদের মধ্যে আলাদা একটি বৈঠক হতে পারে। এ আলোচনা ইতিবাচক হলে পরে প্রেসিডেন্টের দপ্তর শীতল নিবাসে পরবর্তী বৈঠক হবে।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ ওরফে বালেনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বিক্ষোভকারী তরুণরা। তবে বালেন শাহ নিজেই সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন। বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ‘জেন-জি’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকির নাম উঠে এসেছে। তারা এখন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেত রয়টার্সকে বলেছেন, “প্রাথমিক আলোচনা চলমান আছে আর আজকেও চলবে। আমরা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।”
৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি একজন শিক্ষাবিদ ও নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি। নেপালে সংসদ বহাল থাকায় বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবে। নেপালের সংবিধান অনুযায়ী, এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সংসদের নেতাদের মধ্যে থেকে সরকার গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু এসব নেতাদের অনেকেই এখন পলাতক।
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার ওলির পদত্যাগের কারণে নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাওয়া নেপালে আপাতত সেনাবাহিনীই অস্থির পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। রাজধানীতে জনশূন্য রাস্তাগুলোতে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।। ওলির সরকার নিবন্ধনহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দেশটির তরুণরা। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তোলার ও সরকারের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বন্ধের দাবিতে সোমবার বিক্ষোভে নামে। এরপর সহিংস প্রতিবাদের মধ্যে ১৯ জন নিহত হলে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই সহিংস প্রতিবাদে নিহতের সংখ্যা বেড়ে বৃহস্পতিবার ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১০৩৩ জন। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রায় সারাদিনের জন্য কাঠমাণ্ডু ও এর আশপাশের এলাকায় নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ বহাল থাকবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল আবার শুরু হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ তরুণ হওয়ায় বিক্ষোভটিকে সাধারণভাবে ‘জেন জি’ প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থ হচ্ছে ও অর্থনৈতিক সুযোগও বাড়াতে পারছে না, এমন উপলব্ধিতে এসব তরুণরা হতাশা প্রকাশ করেছে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রমন কুমার কর্ণ জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন। তারা কার্কির সঙ্গে পরামর্শও করেছেন।
কার্কি ভারতীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল সিএনএন-নিউজ১৮ কে বলেছেন, “তারা আমাকে অনুরোধ করার পর আমি তা গ্রহণ করেছি।”
প্রতিবাদকারীরা সুপ্রিম কোট থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িসহ অধিকাংশ সরকারি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকী ওলির ব্যক্তিগত বাড়িও রেহাই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করার পর এসব সহিংসতা কমে আসে।
সান নিউজ/আরএ