স্বাস্থ্য

সহজ শর্তে স্বাস্থ্য বিমা চালু হোক

নৌশিন আহম্মেদ মনিরা: দেশে সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭৩ সালে। এর মাধ্যমে বিমা খাতের শুরু হলেও ২০২০ সালের পয়লা মার্চ প্রথমবারের মত জাতীয় বিমা দিবস পালন করা হয় দেশে। দেশের পৌনে দুই কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিমার আওতায় থাকলেও অনেকেই বিমা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন না।

তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা বলেন, বিমা একজন বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, একই সঙ্গে তার ঝুঁকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাগাভাগি করেও নেয়া হয়।

বিমা হলো একটি চুক্তি। অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এটি দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইনসম্মত চুক্তি। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

অন্যপক্ষ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। প্রথম পক্ষ বিমাকারী এবং দ্বিতীয় পক্ষ বিমাগ্রহীতার মধ্যে যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি সম্পাদন হয়।

এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বিমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।

স্বাস্থ্য বিমা:

চিকিৎসা ব্যায়ের নিরিখে বিমা ধারকের যে চুক্তি করা হয়, তাকেই স্বাস্থ্য বিমা (Health Insurance) বলা হয়।’ আমরা প্রত্যেকেই আমাদের আয় অনুসারে অবশিষ্ট কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখি, যাতে আগামী দিনে সেই জমায়েত করা সঞ্চয় আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি।

ভবিষ্যতের সঞ্চয় আমরা দুইভাবে করে থাকি: প্রথমত কোনো সম্পত্তি ক্রয় করে কিংবা ব্যাংক, পোস্ট অফিসে FD, RD ইত্যাদির মাধ্যমে আর দ্বিতীয়ত কোনো বিমা কোম্পানির কাছে আমরা টাকা জমা রাখি। কিন্তু বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা রাখলে আমাদের লাভ কি হয়? যদি কোনো কারণে বিমার পলিসি ধারকের পলিসি ম্যাচুরিটি হওয়ার আগে অপঘাতে মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে পলিসি ধারকের নমিনিকে বিমা করা সঞ্চয়, ম্যাচুরিটি হওয়ার আগেই দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসে সাধারণ সঞ্চয় স্কীমে সেরকম কোনো সুবিধা থাকেনা।

এ তো গেলো ভবিষ্যতের কথা, কিন্তু আপনার কাছে সবথেকে মূল্যবান সম্পদ হল আপনি নিজেই। যেখানে আপনি মানে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য হলো সবথেকে মূল্যবান সম্পদ। কথায় আছে ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ এটাই আপনার প্রথম ইনভেস্টমেন্ট।

এখন কথা হচ্ছে আপনার যদি একটি স্বাস্থ্য বিমা করা থাকে তাহলে, আগামী দিনে বড় ধরনের কোনো রোগ-ব্যাধি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি ঘটলে সেই সমস্ত খরচ শর্ত সাপেক্ষে বিমা প্রতিষ্ঠান বহন করে। তাই আমাদের প্রত্যেকের সবার প্রথম ইনভেস্ট হিসাবে স্বাস্থ্য বিমা (Health insurance plans) ক্রয় করে করা উচিত। কারণ স্বাস্থ্য বিমা (Health Card) করা থাকলে, রোগ-ব্যাধি হলে আলাদা করে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা টাকা-কড়ি ভাঙতে হয়না। ব্যয়বহুল চিকিৎসা বাবদ যাবতীয় খরচ বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করে।

জাতীয় বীমা দিবস ২০২১- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যবীমা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশে বিমার সম্প্রসারণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচার এবং সেবা প্রদানে গ্রাহক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

বিমা একটি সেবামূলক পেশা। গ্রাহক স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি একে জনপ্রিয় ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমাদের দেশের অনেক লোক চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। সেক্ষেত্রে যদি স্বাস্থ্যখাতকে বিমার আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে একদিকে যেমন মানুষ চিকিৎসা পাবে, অন্যদিকে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোরও আয় বাড়বে।

স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে মোস্তফা কামাল নামের একজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ক্যানসার বা যেকোন কঠিন রোগের সঙ্গে শুধু মৃত্যুভয়ই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অর্থের সংস্থান নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা। আপনজনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঘর-বাড়িও বিক্রি হয়ে যায় বহু পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা যারা সরকারি চাকরি করি আমাদের নির্দিষ্ট একটা মাসিক ভাতা দেয়া হয় চিকিৎসাবাবদ। কিন্তু এটাতে তো পরিবারের সকলের চিকিৎসা খরচ পূরণ হয় না। কেননা চিকিৎসার খরচ ক্রমশ বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের শয্যা বা ঘরের ভাড়া, ওষুধপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষা, চিকিৎসকদের ফি, অস্ত্রোপচার (যদি হয়) বাবদ যে অঙ্কের টাকা খরচ হয়, তা অনেক সময়েই রোগী বা রোগীর পরিবারের পক্ষে দেওয়া কঠিন হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের টাকাতেও চিকিৎসার খরচ কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমা করা থাকলে কিছুটা ভার লাঘব হবে।

বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার মহুয়া সান নিউজকে বলেন, দেশের সব খাতের ব্যাপক উন্নতি হলেও বিমা খাতের, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিমা চিত্র খুবই করুণ। যেখানে নিজের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিপরীতে আপনি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা করছেন, উদ্দেশ্য হচ্ছে যদি আপনার কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ঐ বিমা প্রতিষ্ঠান আপনার স্বাস্থ্য ব্যয়ের একটি অংশ বা একটি বড় অংশ প্রদান করবে। তাই আমি মনে করি, স্বাস্থ্য বিমা সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।

তিনি আরও বলেন, তবে এখানে একটা কথা রয়েছে যদি স্বাস্থ্য বিমা শুধু নির্দিষ্ট একটা শ্রেণির জন্য বরাদ্দ করা হয় তাহলে গরীবরা গরীব রয়ে যাবে আর ধনীরা ধনী। এতে করে সাধারণ মানুষের খুব একটা সুবিধা হবে না। আমি মনে করি, যদি এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করা যায় তবেই এটা ফলপ্রসু হবে।

স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে মুকুল মিয়া নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী বলেন, স্বাস্থ্য বিমাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসা উচিত এবং এর শর্তগুলো খুবই সহজ ও গ্রহণযোগ্য করা উচিত। কেননা, এক বিমার পেছনেই যদি লুকানো তিনগুণ শর্ত জুড়ে দেয়া হয় তবে কে করবে এই বিমা? কেউ না। তাই সাধারণের নাগালের ভেতরে রেখে এর শর্তগুলো আরও সহজ করে সবাইকে এর আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান করি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম সান নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বিমা নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন বা উত্তর নেই কেননা এটা বরাবরই সবার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। কেননা অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্র এ উদ্যোগ অনেক আগেই নিয়েছে, যদি ভালো না হতো তাহলে তারা এটা করতো না। আমি মনে করি এই স্বাস্থ্য বীমার উদ্যোগ বা বাস্তবায়ন আরও আগেই নেয়ার দরকার ছিলো।

তিনি আরও বলেন, এই করোনাকালে আমরা যারা ডাক্তার তারা কিন্তু অন্যান্য রাষ্ট্রের থেকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে অনেকে মারাও গিয়েছেন, অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। আমরা যথাসাধ্য রোগীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। এই স্বাস্থ্য বিমা যদি আরও আগে থেকেই থাকতো তাহলে অনেকের ক্ষেত্রেই এই করোনাকালেই অনেক সুবিধা হতো।

এই অধ্যাপক বলেন, আমরা প্রায়ই দেখে থাকি অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। অনেক চিকিৎসার খরচই ব্যয়বহুল হয়। সেক্ষেত্রে অনেকের এটা বহন করার সামর্থ্য থাকে না। এজন্য আরও বেশি জরুরি স্বাস্থ্য বিমা। এখন আসি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক জিনিস ক্রয় করি সেখানে যেমন ভ্যাট ট্যাক্স কাটা হয় সেরকমভাবে যদি সেই ক্রয় করা জিনিসের সাথেই ১ টাকা করে কেটে রেখেও আমাদের স্বাস্থ্য বিমায় যোগ করে তাহলেও কিন্তু মাসে অনেক টাকা আসে, বছরে কত আসবে এবার দেখেন? সরকার কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীদেরও এতো টাকা অবসর ভাতা দেন না।

তিনি আরও বলেন, আমি যতটুকু জানি আমাদের সরকার এটা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে এর জন্য অনেক কার্যক্রমও চলছে। আমি এই বিষয়টাকে সাধুবাদ জানাই। আমি আশা করি সরকার এই স্বাস্থ্য বিমা খাতকে দ্রুত অগ্রসর করে এর সঠিক বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠিত করবে।

সান নিউজ/এনএএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ছুটির দিনে মুখর সোহরাওয়ার্দী

নুসরাত জাহান ঐশী: আজ সপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর প্রাণকেন্দ...

ভারত ছাড়লেন সালমান খান

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের ভাইজান খ্যাত সুপারস্টার সালমান খান। স...

বিটরুটের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিটরুট হচ্ছে এ...

শিব নারায়ণ দাস আর বেঁচে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জাতী...

ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম...

দুই ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ থাকবে 

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে...

সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পরবর্তী হামলা করা হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানি পররাষ্ট্...

নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৩৪ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অব...

তাপপ্রবাহ থাকবে আরও ৩ দিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা