নৌশিন আহম্মেদ মনিরা: করোনা মহামারি কাটিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধের পর রাজধানীর নারী শিক্ষার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইডেন মহিলা কলেজে মেতে ইঠেছে উৎসবের আমেজে। ক্যাম্পাসের অদূরে বসেছে বিজয় উৎসবের মেলা। যাকে বলা যায় শিল্প ও ঐতিহ্যের মেলা বা পিঠা উৎসব। সেখানে সাজিয়ে তোলা হয়েছে আবহমান বাংলার জীবনধারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মেলার বিভিন্ন স্টলে। প্রত্যেক বছরই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবারের আয়োজন ছিলো কিছুটা ব্যতিক্রম। ইডেনের এবারের উৎসবের পুরোটা জুড়ে ছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় কলেজের প্রত্যেক বিভাগ থেকে মোট ৩০টি স্টল বসানো হয়েছে। ছাত্রীরা তাদের নিজের তৈরি করা জিনিস নিয়ে হাজির হয়েছেন স্টলগুলোতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিঠা-পুলি। মেলা প্রাঙ্গনে প্রায় সবাই শাড়ি পরে বাহারি সাজে এসেছেন। কেউ ঘুরাফেরা করছেন, কেউ ব্যস্ত পিঠা খেতে আবার কেউবা ব্যস্ত ছবি তোলায়। স্টলগুলো তারা ঘুরে দেখছেন দলবেঁধে।
এর মধ্যে ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্টলটি সবার নজর কেড়েছে। স্টলটির নাম যেমন সুন্দর তেমনি তারা তাদের স্টলটিও সাজিয়েছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। স্টলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্রন্দসী’।
এ ব্যাপারে ঐ বিভাগের মাস্টার্স ফাইনালের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের স্টলের নাম দেয়ার একটা উল্লেখযোগ্য রহস্য রয়েছে এছাড়া আমরা খুব ভেবে চিন্তেই ‘ক্রন্দসী’ নামটা দিয়েছি। ‘ক্রন্দসী’ এর মানে স্বর্গ মর্ত্য বা পৃথিবী।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ নয় মাস একটি ঘরের কোণে অনেক দুঃখিনি ‘মা’ তার দামাল ছেলের অপেক্ষায় ক্রন্দন করেছেন, আমরা সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি এই নাম দিয়ে। ক্রন্দনরত জননীর বিষয়টি স্মরণ করে আমাদের স্টলটির এই নাম দিয়েছি।
সোনিয়া আক্তার আরও বলেন, এছাড়া আমরা আমাদের স্টলে গাছ ও বইকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এর মধ্যে গাছ তো পরিবেশের শুদ্ধতার প্রতীক। আর বইগুলো রেখেছি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতীক হিসেবে। এছাড়া আমাদের বাঙালিয়ানার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা আমাদের স্টলে আরও রেখেছি রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকাই জামদানি শাড়ি, জামালপুরের নকশি কাঁথা, যশোরের নকশি কাঁথা।
এছাড়া সেখানে ড্রাগন ফল, পান, চিতই পিঠা, সেমাইসহ নানা রসালো খাবারের পসরা দেখা গেছে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে সামনে আনতে কলা পাতায় খাবার পরিবেশন করা হয় স্টলটিতে।
দেশীয় অনেক প্রকারের পিঠা স্টলে রয়েছে দেখিয়ে সোনিয়া আক্তার জানান, ইডেন কলেজে আজ যে উৎসব হচ্ছে তা ‘পিঠা উৎসব’ নয়, এটি মূলত ‘বিজয় উৎসব’। এ সময় তার স্টলে সাজিয়ে রাখা বেশ কয়েক রকম চাল দেখিয়ে বলেন, দিনাজপুরের কাটারি ভোগ, শেরপুরের বিরই , আমন, আউস চাল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এগুলো এখনকার মানুষের মধ্যে অনেকেই এগুলো সঠিকভাবে চিনেন না। হয়তো নাম জানতে পারেন তবে সামনে নিয়ে গেলে অনেকে চিনবেন না। তাই বাঙালির ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিতেই আমাদের এই সামান্য প্রয়াস।
উৎসবে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তামান্না হাওলাদার মিম জানান, উৎসবে জিআই পণ্যগুলো রয়েছে। বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে এই অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছেন আমাদের বিভাগের সিনিয়ররা।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী তানজিলা পিংকি বলেন, এখানে প্রতি বছর বিজয় উৎসব-পিঠা উৎসব হয়। বিষয়টি আমার অনেক ভাল লাগে। এতে আমরা অনেক আনন্দ করি।
সান নিউজ/এমকেএইচ/এফএইচপি