ফিচার

মেইল কেনা যেত বাড়ি!

ফিচার ডেস্ক: কেউ ইচ্ছা করলেই ঘরে অর্ডার করে নিজের পছন্দের জিনিস কিনতে পারেন। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে সবই পাওয়া যায়। পোশাক-পরিচ্ছদ, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে বহনযোগ্য প্রায় সব জিনিসই অনলাইনের মধ্যমে ঘরে বসেই কেনা যায়।

তবে মেইল করে বাড়ি কেনা যাবে কিংবা তা পৌঁছে দেয়া হবে এমনটা ভাবা হয়তো একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়েই হয়ে যায়। অবাক করা বিষয় হলেও এটাই সত্য যে মেইল করেই আস্ত বাড়ি কেনাও যেতো এবং তা বাড়ি পৌঁছেও দেয়া হতো। সেটা আবার গত শতাব্দীর শুরুতেই।

বিশ্ব শতকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান মেইল-অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ি বিক্রয় ও পৌঁছে দিতো। সিয়ার্সই যে এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিল তা নয়, তবে তারা এ ব্যবসায় সব থেকে সফল প্রতিষ্ঠান ছিল।

মেইল-অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারাও বেশ সুযোগ সুবিধা পেতেন। একজন ক্রেতার কয়েকশো ডিজাইনের মধ্যে থেকে নিজের বাড়ি বেছে নেয়ার সুযোগ পেতেন। এছাড়া একবারে দাম পরিশোধ করতে না চাইলেও তাদের কিস্তিতে অর্থ প্রদান করার সুযোগ দেয়া হতো।

বাড়ির ডিজাইন দেখে পছন্দ করে ক্রেতারা মেইলের মধ্যমে অর্ডার করার পর তৈরিকৃত বাড়ি পৌঁছে দিতো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সবার কাছে হয়তো অবাক লাগবে বসবাসের একটি বাড়ি কীভাবে বহন করা যায়। বস্তাবতা হলো পূর্ব-নির্মাণকৃত বাড়িই ক্রেতাকে পৌঁছে দেয়া হতো। অনেকে ভাবতে পারেন হয়তো ছোট আকৃতির বাড়ি ছিল এগুলো। বাস্তবে মোটেও কিন্তু এগুলো ছোট বাড়ি ছিল না।

দোতলা, তিন তলা বসত বাড়িই তারা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতো। এখন অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে এত বড় বাড়ি তারা পৌঁছে দিতো কীভাবে? সিয়ার্সের এই বাড়িগুলো মূলত কাঠের তৈরি ছিল। তারা পূর্ব নির্মাণকৃত এ বাড়িগুলোর বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা করে মেইল করে পাঠাতো। সাধারণত রেলপথে বাক্সকার্সের মাধ্যমে পাঠানো হতো বাড়িগুলো।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই বাড়িগুলোর খণ্ড খণ্ড অংশ পাঠানোর সময় একটি বিস্তারিত তালিকা ও নির্দেশিকা সরবরাহ করতো ক্রেতার জন্য। প্রতিটি অংশ থাকতো নম্বরযুক্ত। প্রয়োজনীয় সব উপকরণ পাওয়ার পর ক্রেতা কাঠের মিস্ত্রীর সাহায্যে নির্দেশনা অনুযায়ী জোড়া লাগিয়ে পূর্ণতা দান করতো পারতেন তার পছন্দের বসত বাড়ির।

১৯০৮ সালে সিয়ার্স প্রথম মেইল-অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রির জন্য বিশেষ ক্যাটালগ বুক অফ মডার্ন হোমস এবং বিল্ডিং প্ল্যান তৈরি করেছিল। যেখানে বাড়ির ৪৪টি নকশা ছিল। এগুলোর দাম ছিল ৩৮০ থেকে ২ হাজার ৮৯০ ডলারের মধ্যে। তবে শুরুতেই সিয়ার্স পূর্ব-নির্মাণকৃত বাড়ি সরবরাহ করতো না।

তখন তারা শুধু সরবরাহ করতো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল। ক্রেতাকে নকশা ও নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ মাপে কাঠ কেটে বাড়ির অবকাঠামো তৈরি করতে হতো। সিয়ার্স ১৯১৬ সালে প্রথম পরিপূর্ণভাবে পূর্ব-নির্মাণকৃত বাড়ির সব উপকরণ সরবরাহ শুরু করে। এরপর থেকে ক্রেতাকে শুধু সেগুলো নির্দেশনা অনুযায়ী সেট করলেই হতো।

সিয়ার্সের তথ্য মতে, এই পদ্ধতিতে কাঠের সাহায্যে একটি বাড়ি তৈরিতে চল্লিশ শতাংশ কম সময় লাগতো। সিয়ার্স বাড়ির মূল অবকাঠামোর কাঠের সঙ্গে ওয়ালপেপার, পেইন্ট, বার্নিশ, ল্যাথ, ছাদ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বস্তু সরবরাহ করতো। বিশেষত এর দরজা ও জানালাগুলো পুরোপুরি সেট করে দেয়া হতো। তবে প্যাকেজটিতে বাড়ির ভিত্তি, গাঁথুনি বা প্লাস্টার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ, গাঁথুনি সরবরাহের ফলে ব্যয় বেশি হতো।

গড়ে তিরিশ হাজারেরও বেশি অংশ থাকতো সিয়ার্সের মডার্ন হোম কিটে। এ উপকরণগুলোর গড় ওজন প্রায় ২৫ টন। ব্যয় কমাতে ইনডোরের কিছু কাজ, চুলা, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং, বাথরুমের মতো কিছু আইটেম ক্রেতার ঐচ্ছিক হিসেবে রাখা হতো। সিয়ার্স প্লাস্টার ও ল্যাথ ওয়াল-বিল্ডিং কৌশলগুলোর বিকল্প হিসেবে আধুনিক ড্রাইওয়ালগুলোর মতো প্লাস্টারবোর্ড পণ্যও সরবরাহ করতো।

সিয়ার্সের মডার্ন হোমের ডেলিভারি চেইনের ব্যবস্থাপনা সেই সময়ের জন্য খুব দক্ষ ছিল। কোনো পণ্য পাঠানোর সময়ই পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখসহ প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হতো। বাড়ির উপকরণগুলো সাধারণত রেলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হতো।

রেলে পাঠানো তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক ও সস্তা ছিল। অনেক সময় বাড়ির উপকরণগুলো দুটি বক্সকারে পাঠানো হতো। তবে সাধারণত নির্মাণের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এগুলো পর্যায়ক্রমে পাঠানো হতো।

এরপর প্রতিটি সরবরাহ পয়েন্ট গ্রাহককে একটি পোস্টকার্ড মেইল করে জানাতো যে, উপাদানগুলো আসলে কখন পাঠানো হয়েছে। লোকাল ট্রেনের ডিপোতে উপকরণগুলো পৌঁছানোর পরে গ্রাহক গাড়ি বা ট্রাকে করে বাড়ি নির্মাণের স্থানে সেগুলো নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতো।

মেইল-অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ি বিক্রয় ব্যবসায় সিয়ার্সকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, অনেকেই মনে করতেন তাদের বাড়ি নির্মাণের উপকরণগুলো ছিল নিম্নমানের। তবে তাদের উপকরণগুলো মোটেও নিম্নমানের ছিল না।

তারা এই ধারণা পরিবর্তন করে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। এই বাড়িগুলো সাধারণত বেলুন-ফ্রেমিং নির্মাণ শৈলীতে তৈরি করা হতো। বাড়ির অভ্যন্তরে ওক, পাইন ও ম্যাপেল কাঠের মতো উচ্চ মানের উপকরণ দেয়া হতো। সিয়ার্সের মেইল-অর্ডারে বিক্রি করা বাড়ির উপকরণগুলো মূলত খুবই ভালো মানের ছিল। কারণ প্রায় আট দশক পরেও সিয়ার্সের সেই বাড়িগুলোর অধিকাংশ আজও অক্ষত রয়েছে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে থাকতে সিয়ার্স গ্রাহকদের জন্য বন্ধকী ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নের ব্যবস্থাও করেছিল। এতে সিয়ার্সের বাড়ি বিক্রির সুযোগ বাড়লেও নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। কারণ, অনেকেই ঋণের টাকা ঠিক সময়ে শোধ করতে ব্যর্থ হয়।

১৯৩৪ সালের মধ্যে গ্রাহকদের ঋণ আদায় ও অন্যান্য সমস্যার কারণে সিয়ার্স আধুনিক হোমস বিভাগকে বন্ধ করার চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হয়েছিল।

প্রোগ্রামটি পুনরায় চালু হলেও সেসময় দেশটির শতাব্দীর বৃহত্তম অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। শুরু থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত সিয়ার্সের ব্যবসা রমরমা ছিল এবং লাভ করেছিল প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ডলার। তবে বন্ধকী ঋণ আদায় না হওয়ায় ক্ষতি হয় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। তারা ১৯০৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ বাড়ি বিক্রি করেছিল বলে ধারণা করা হয়।

সর্বশেষ সিয়ার্স মডার্ন হোমস ক্যাটালগটি ১৯৪০ সালে তৈরি করা হয়েছিল। তবে সংস্থাটি ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তারা এ বাড়ি বিক্রি করে। প্রায় ত্রিশ বছরের ব্যবসায় সিয়ার্স বেশিরভাগ পূর্ব কোস্ট এবং মিডওয়েস্ট রাজ্যের গ্রাহকদের কাছে হাজার হাজার বাড়ি বিক্রি করেছিল।

সূত্র- অ্যামিউজিংপ্ল্যানেট

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা