ফিচার

যেখানে পুরুষের কাজ শুধুই সন্তান উৎপাদন !

সান নিউজ ডেস্ক: নারীরাই পরিবারের প্রধান। সম্পত্তি এবং পরিবারিক দায়বদ্ধতা তাদের কাছেই। মায়ের পরিচয়ে তারা পরিচিত হন। সন্তান লাভের আশায় তারা ‘ওয়াকিং ম্যারেজ’-এ বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা ইচ্ছামতো পুরুষ সঙ্গীকে বেছে নিতে পারেন। সেটা এক বা একাধিক ও হতে পারে। নারীদের রাজত্বে নারীর আদেশই শিরোধার্য- এমনটিই জানান হিমালয়ের পাদদেশের ইয়ানুয়ানে বসবাস করা চীনের মোসুও আদিবাসী আশা-নুজা।

এলাকাটির পাশেই রয়েছে বিখ্যাত লুগা হ্রদ। মোসুও আদিবাসীরা বিশ্বের সর্বশেষ অর্ধ-মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বাসিন্দা হিসেবে সমধিক বিবেচিত। জন্মের পর থেকেই মোসুও কন্যাশিশুরা মা, নানি ও খালাকে দেখে পরিবারের হাল ধরতে শেখে। যৌথ পরিবারেই তাদের আজীবন বসবাস।

পরিবারের হাল ধরা শেখে নারীরা : একজন মোসুও নারী আমৃত্যু পরিশ্রম করেন। তারা বড় হতেই ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আগুনের ব্যবহার, রান্না, কাঠ সংগ্রহ, গবাদি পশুকে খাওয়ানো, ফসল কাটা, চাষাবাদ এবং কাপড় বুননসহ সব কাজ শিখতে শুরু করেন।

৭৩ বছর বয়সী পেমা লামুও ক্ষেতে কাজ করে উপার্জন করেন। লামুও বলেন, ‘পুরুষের উপর কোনো দায়-দায়িত্ব নেই তাদের সমাজে। শুধু তারা সন্তান জন্ম দেওয়ার কাণ্ডারি। এরপর তাদের দায়িত্ব শেষ। যদি কোনো বাবা তার সন্তান বা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকে দেখা করতে চায়, তবে সে মাঝে মধ্যে সুযোগ পায়।’

পুরুষের কী কাজ : মোসুও সমাজে পুরুষের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাদের কোনো চাকরিও নেই। সারাদিন বিশ্রামেই দিন যায়। অবশ্য রাত জেগে এলাকা পাহাড়া দেওয়ার কাজটা তারাই করেন। তবে মোসুও পুরুষরা ভালোমতো বাচ্চা লালন-পালন করতে পারেন। বোনদের সন্তান, এমনকি চাইলে নিজের সন্তানকেও লালন-পালন করতে পারেন। এ ছাড়া বাড়ি-ঘর তৈরি, পশুপালন, পশু জবাই এবং মাছ শিকারও তারা করে থাকেন।

জীবন-যাপন : পরিবারে পুরুষ শক্তিধর হিসেবে বিবেচিত না হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষরাই সর্বেসর্বা। জি জে এ চে নামের এক ব্যক্তি লুওশুই গ্রামের রাজনৈতিক নেতা। তবে একসময় মোসুওদের রাজনৈতিক নেতা ও ছিলেন নারী।

নারী স্বাধীনতা : মোসুও সম্প্রদায়ের নারীরা যেভাবে স্বাধীনতা উপভোগ করেন, সে সুযোগ হয়তো বিশ্বের কোনো স্থানের নারীরা পান না। তাদের মধ্যে নেই কোনো ভেদাভেদ, সবাই সমান। নারীরা পছন্দসই প্রেমিক বা স্বামীকে বেছে নিতে পারেন। প্রয়োজন হলে একাধিক পুরুষের সঙ্গেও সম্পর্ক করেন এ সম্প্রদায়ের নারীরা।

‘ওয়াকিং ম্যারেজ’-এ থাকা নারীরা কিন্তু তাদের স্বামীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন না। প্রয়োজনে পুরুষরা নারীর বাড়িতে সন্ধ্যায় বা রাতে গিয়ে থাকেন। আবার সূর্যোদয়ের আগেই পুরুষরা স্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। এমনটিই না-কি নিয়ম তাদের সমাজে।

আবার কোনো মোসুও পুরুষ নিজ থেকে নারীকে প্রেম নিবেদন করতে পারেন না। সে অধিকার শুধু রয়েছে নারীদের। নারীর অনুমতি সাপেক্ষেই কোনো পুরুষ তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। সন্তান জন্মের পর পুরুষটির দায়িত্ব শেষ। এরপর তিনি যদি সন্তানের প্রতি যত্নশীল হন; তাহলে তো ভালোই। আর না হলে কোনো নৈতিক, সাংস্কৃতিক বা আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।

যদি কখনো কোনো মোসুও নারীর গর্ভে সন্তান জন্ম না নেয়; সেক্ষেত্রে অন্য পরিবারের কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারেন ওই নারী। শিশুটি বংশগতভাবে তার পালক মায়ের পরিচয়েই বড় হতে থাকে।

জীবন-ধারণ পদ্ধতি : মোসুও সংস্কৃতি মূলত কৃষিনির্ভর। পশুপালন (ইয়াক, জলমহিষ, ভেড়া, ছাগল, হাঁস-মুরগি) করেন তারা। এ ছাড়া মাঠে কাজ করে শস্য, আলু ও ফসল জন্মান। তারা ‘দিনে সাত ঘণ্টা এবং বছরে সাত মাস’ কাজ করেন।

যত পরিশ্রমই করুক না কেন, ঠিক সময়মতো খেতে ভোলেন না মোসুও জনগোষ্ঠীরা। তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাংস রাখা চাই। যেহেতু তাদের কাছে ফ্রিজের ব্যবস্থা নেই; তাই লবণ দিয়ে শুকিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে মাংস সংগ্রহ করেন।

মোসুওরা শূকরের মাংসের জন্য বিখ্যাত। যা তারা ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সংগ্রহ করেন। শষ্যদানা দিয়ে তারা এক প্রকার মদ তৈরি করেন; যার নাম সুলিমা। অতিথি আপ্যায়নে, যেকোনো অনুষ্ঠান এবং উৎসবে তারা সুলিমা পান করে থাকেন।

তেরোতেই বিয়ে : মোসুও কন্যাদের যখন ১৩ বছর বয়স হয়; তখনই তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বয়সেই তারা প্রথম ‘ওয়াকিং ম্যারেজ’ করার জন্য সঙ্গী নির্বাচন করে। এ অনুষ্ঠানের আগে মোসুও শিশুরা সবাই একই পোশাক পরিধান করে। ওইদিনের উৎসবে মেয়েদের স্কার্ট ও ছেলেদের ট্রাউজার দেওয়া হয়।

পর্যটকবান্ধব স্থান : মোসুওদের জীবন-ধারণ পদ্ধতি দেখতে বছরে লাখো মানুষ ভিড় জমায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশ ও তিব্বতের শেষ সীমানায়। অন্যান্য পর্যটকবান্ধব দেশগুলোর মতোই মোসুও সম্প্রদায়ের মানুষও বছরে অনেক অর্থ উপার্জন করে থাকে। এ ছাড়া মোসুও নারীরা হস্তশিল্পে পারদর্শী। পোশাক, জুয়েলারি তৈরিসহ হস্তশিল্পে দক্ষতা থাকায় সেগুলো তারা আগত দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন।

উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে বছরজুড়েই পর্যটকরা যাওয়া-আসা করেন সেখানে। বর্তমানে মোসুও তরুণীরা গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। পুরুষ মোসুওরাও পরিবার ছেড়ে শহরে গিয়ে নিজের মতো করে জীবন-যাপন করছেন।

সান নিউজ/ এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন ও মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি পেছাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্য...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

খাতিরের ঠিকাদারকে কাজ দিতে ডিএনসিসির দরপত্রে ‘কারসাজি’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বাতি স্থাপনের কাজ ‘খাতিরের’...

চিকিৎসক নেতা নারায়ণ হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বা...

ভরাডুবির ভয়ে কিছু খুচরা পার্টি নির্বাচন চাচ্ছে না: দুদু

নির্বাচন হলে যাদের ভরাডুবি হবে তারাই নির্বাচন চাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বি...

রিকশাচালককে কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, ধানমন্ডি থানার ওসির ব্যাখ্যা তলব

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার ক...

প্রধান উপদেষ্টা নিজে ক্লিয়ার করেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: রিজওয়ানা

নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা...

জুলাই সনদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ অবস্থান অস্পষ্ট: ডেভিড বার্গম্যান

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া পাঠিয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা