ফিচার

১৫ ডিসেম্বর : পাকিস্তানি বাহিনীকে শর্তহীন আত্মসমর্পণের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭ মার্চের ঘোষণার পর পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই চলছে মুক্তির সংগ্রাম। ১৫ই ডিসেম্বর বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম বিজয়ের দ্বার প্রান্তে। ইতোমধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহায়তা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অধিকাংশ এলাকা মুক্ত করে ফেলেছেন।

অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকির কারনে পাকিস্তানের ঘনিষ্ট মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনীর বুঝতে আর বাকী নাই তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তাই তারা আত্মসমর্পণের পথ খুঁজছিলো। এ বিষয়ে পাকিস্তানি বাহিনী নিশ্চয়তা চাচ্ছিল যে ত্মসমর্পণের সময় তাদের হত্যা করা হবে না।

একাত্তর সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের দ্বারপ্রান্তে এসে দেশের অধিকাংশ রণাঙ্গনের মুক্তিকামী জনতার বিজয়োল্লাস ধ্বনীতে আকাশ-বাতাস মুখরিত। নদীনালা, খাল-বিল নদীসহ সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইতোমধ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে পাকিস্তানী বাহিনীকে ঘিরে ফেলায় রীতিমত তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ঢাকা শহরে।

আশেপাশের এলাকায় পাক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় ভারতীয় মিগ জঙ্গি বিমান একের পর এক বোমাবর্ষণ করে চলছে। স্থলপথে চলছে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজির দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বিকালে জেনারেল মানেকশ জানিয়ে দেন, শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়া হবে না।

প্রস্তাবের প্রতি মিত্রবাহিনীর আন্তরিকতার নিদর্শন হিসেবে সেইদিন (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হবে বলে পাকিস্তানি জেনারেলকে জানিয়ে দেয়া হয়।

এমনকি আত্মসমর্পণ করলে মিত্রবাহিনীর প্রতি কোনও প্রকার প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়। তবে পাকিস্তানি জেনারেলকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণ করা ছাড়া মিত্রবাহিনীর কোনও পথ খোলা থাকবে না।

জেনারেল নিয়াজি মিত্র বাহিনীর প্রস্তাব তাৎক্ষণিক পাকিস্তান সদর দফতরকে অবহিত করেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরে ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জেনারেল নিয়াজিকে আত্মসর্মপণের নির্দেশ দেন।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নিয়াজির উদ্দেশ্যে বলেন যে, ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান পাকিস্তানিদের আত্মসর্মপণের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য তা মেনে নেয়া যেতে পারে। নিয়াজি তাৎক্ষণিক তা ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশকে অবহিত করেন।

দিনটি মূলত দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এদিন ঢাকার বাসাবোয় অবস্থানরত এস ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। জয়দেবপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় তারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদাইনাল ও নারায়ণগঞ্জে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় দখলদার বাহিনী। এদিন সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট। ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাস্যুট দল পাঠিয়ে ঢাকায় মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানি ডিফেন্স লাইন পরখ করে নেয়া হয়।

রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনী ভারতীয় মিত্র ও বাংলাদেশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। রাত ২টার দিকে যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে।

এ সময় যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধ চলে। এদিকে রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামের কুমিরার দক্ষিণে আরও কয়েকটি স্থান হানাদারমুক্ত করে। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের ভাটিয়ারিতে আক্রমণ চালায়।

সারারাত মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে। ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এদিন বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি শত্রুমুক্ত হয়।

সান নিউজ/এসএ/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে হাতিয়াতে উঠান বৈঠক

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষ...

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ইসলাম...

বাগেরহাটের কলার বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার দাম ভালো পাওয়ায়...

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের ঘটনা

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যার ঘটনা এমন মন্তব্য কর...

একীভূত হচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি

সম্প্রতি গুঞ্জন উঠে দেশের তরুণদের নিয়ে গঠিত দল দুইটি একীভূত হওয়ার বিষয়ে। তবে...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা