কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: সম্প্রতি ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৃত আব্দুর রহিম খানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স। সদ্য বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রিন্সের পেছনের গল্পটা মোটেই সহজ ছিল না। কৃষক পরিবারের সন্তান প্রিন্স ছোট বেলা থেকেই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। এক সময় বাবার মৃত্যু এরপর ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। তবে সব বাধা কাটিয়ে তিনি স্বমহিমায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন:
উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের আম কাঁঠালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম খানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স। বক্কর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুখোড় বিতার্কিক ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির (ডিইউডিএস) সভাপতিও আবু বক্কর। ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বিতর্ক করেছেন তিনি। দুই ভাইবোনের মধ্যে আবু বক্বর ছোট।
সম্প্রতি বিসিএস ফল প্রকাশের পর তার নিজ বাড়ি আমকাঁঠালিয়া গিয়ে দেখা যায়, আবু বক্করের বিসিএসের খবরে এলাকার অনেকেই আসছেন তার বাড়িতে দেখা করতে। ছেলের এমন কৃতিত্বে এক সময় ক্যান্সার আক্রান্ত বক্করের মায়ের মুখের হাসি যেন সরছেই না।
আরও পড়ুন:
আবু বক্করের মা পারুল খাতুন বলেন, আমার তো বাঁচার কথা না। এমনো দিন আসতো যেন জীবনটা বের হয়ে যায়। আমার ছেলে অনেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। আল্লাহর রহমতে এখনো বেঁচে আছি।
তিনি আরও বলেন, ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মাঠে তেমন জায়গাজমি ছিল না। গরু ছাগল পালন করেও তাদের লেখাপড়া, সংসারের খরচ চালাতে হয়েছে।
আবু বক্করের বোন রুপা বলেন, আমাদের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমারকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তবে কষ্ট এক জায়গায় যে আমার ভাইয়ের এই সাফল্য বাবা দেখে যেতে পারলেন না।
আরও পড়ুন:
আবু বক্কর বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তবে বাবা-মার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করানোর। তাই সব সময় ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরে বাড়তি খরচ হবে এ জন্য কুষ্টিয়ায় ভর্তি না হয়ে নিজ ইচ্ছায় স্থানীয় নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজে ভর্তি হই। চিন্তা করেছিলাম যেখানেই ভর্তি হয় না কেন পড়াশোনাটা আমার নিজেরই করতে হবে। স্থানীয় কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর প্রথমে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। পরের বছর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পাই। পরের পাঁচ বছর সময়টা কাজে লাগিয়েছি।
ছুদিন কোচিং সেন্টারেও ক্লাস নিয়েছি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের দিকে মায়ের বোন মেরু ক্যান্সার ধরা পড়ে। মায়ের অসুস্থতার কারণে পড়ালেখার বাইরে ছিলাম অনেক দিন। তবে এখন মায়ের ক্যান্সার কন্ট্রোলে আছে। আমার বাবা ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থতার কারণে মারা যান।
আরও পড়ুন:
আবু বক্কর বলেন, বর্তমানে ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষকতা করি। বিসিএস এর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ ঘন্টা পড়ালেখা করতাম। ইচ্ছে ছিল সহকারী ক্যাডারে। তবে হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ৩আগস্ট ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। পিএসসির ওয়েবসাইটে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
৪১তম বিসিএসে ২৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এতে আবেদন করেন ৪ লাখের বেশি প্রার্থী। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করে পিএসসি।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২১ হাজার ৫৬ জন উত্তীর্ণ হন। তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। গত বছরের ১০ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ১৩ হাজার জন উত্তীর্ণ হন।
আরও পড়ুন:
২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ জুন শেষ হয় ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা।
২ হাজার ৫২০ জনের মধ্যে প্রশাসনে ৩২৩ জন, পুলিশে ১০০ জন, পররাষ্ট্রে ২৫ জন, স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন ১০৮ জন, ডেন্টিস্ট ১৭১ জন, কৃষি ক্যাডারে ২৩০ জন, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৮৮ জন, বন ক্যাডারে ৩৬ জন, পশু সম্পদ ক্যাডারে ৭৬ জন, তথ্য ক্যাডারের তিন পদে ৩৮ জন, কর ক্যাডারে ৬০ জন ও অন্যান্য ক্যাডারে ৪৬৫ জন।
সান নিউজ/এএ