তিন বছর ধরে ধর্ষিত সেই তরুণীর পরিবার এবার বাড়িছাড়া  
অপরাধ

তিন বছর ধরে ধর্ষিত সেই তরুণীর পরিবার এবার বাড়িছাড়া  

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল ও ঝালকাঠি: বিয়ের বাহানায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার পরিবারের সদস্যদের এবার এলাকাই ছাড়তে হয়েছে। নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে আরেক জেলায় গিয়েও নিরাপত্তাহীন ও হুমকিতে রয়েছেন ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নের আমুয়া গ্রামের ওই তরুণীর পরিবার।

রোববার (৩০ আগস্ট) বেলা সোয়া ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন ধর্ষিত তরুণী। তার অভিযোগ, কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির অব্যাহত হুমকি দিয়ে এবং বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তাদের ঘরছাড়া হতে বাধ্য করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণীর মাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন সাক্ষীকে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সত্য প্রকাশ করলে এলাকা থেকে বিতাড়িত করাসহ খুন-জখম, মিথ্যা মামলা হামলা করার হুমকি দিয়ে আসছেন। আমাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মামলা তুলে না নিলে অ্যাসিড মারা ও মা-মেয়েকে অপহরণ করে খুন করে মরদেহ গুম করা, বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়ে জীবনের তরে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন।’

তাদের ভয়ে এখন বাড়ি-ঘর ছাড়া হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জননেতা আমির হোসেন আমু এমপির কাছে সহায়তার আবেদন জানান মা-মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত তরুণী অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করে কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরের কাছে পারিবারিক দৈন্যতার কথা তুলে ধরে চাকরির আবেদন জানান। সেখান থেকে মুঠোফোনে আলাপ জমে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল কাঠালিয়া থেকে কিশোরীকে নিয়ে বরিশালের সোবাহান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নিজের কথিত পিএস মিঠু সিকদারের আগরপুর রোডের বাসায় ওঠেন মনির। এটিকে মিঠুর পারিবারিক বাসভবন বলা হলেও তরুণী পরে বুঝতে পারেন ব্যাচেলর বাসায় উঠেছেন। সেখানে আটকে বন্ধুর সহায়তার ধর্ষণ করেন মনির। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তার বন্ধুর মাধ্যমে একজন হুজুর এনে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েটিকে মনির জানান, তাদের বিয়ে হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, এরপর ভাইস চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মনির। তিনি গত জুলাই মাস পর্যন্ত ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন তরুণীকে। তবে চলতি আগস্ট মাসে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে মনির ওই তরুণীকে জানিয়ে দেন, প্রকৃত পক্ষে কোনো বিয়েই হয়নি ২০১৭ সালে।

এ ঘটনায় ২৫ আগস্ট বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তাতে উপজেলা চেয়ারম্যান মনির ও তার বন্ধু মিঠু সিকদারকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার পর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজুর চেম্বারে তার মধ্যস্থতায় শালিস করার চেষ্টা চালানো হয়। ওদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মামলার খবর পেয়ে তরুণী বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। ভয়ে তরুণী তার পরিবার নিয়ে এলাকাছাড়া হয়ে বাকেরগঞ্জের ফরিদপুরে আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ও মামলার এজাহারে মেয়েটি বলেন, ‘২০১৭ সালের ৩ এপ্রিলও চাকরির তদবিরের কথা বলেই মনির আমাকে বরিশাল নিয়ে আসেন। শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে মহিলা কলেজ সড়কের আগরপুর রোডে তার ঘনিষ্ট বন্ধু আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের অধিবাসী মিঠু সিকদারের ভাড়া বাসায় নিয়ে গেলে সেটা একটা ব্যাচেলর বাসা বুঝতে পারি। আমি সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে মনির নানা রকম টালবাহানা করে জোরপূর্বক সেখানে অবস্থান করেন। রাত ১১টার দিকে মিঠুকে খাবার আনতে বাইরে পাঠিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। তখন আমি কান্নাকাটি করলে এমাদুল হক মনির ফোন করে বন্ধু মিঠুকে একজন কাজী নিয়ে আসতে বলেন। মিঠু কিছু সময় পর একজন হুজুর নিয়ে এসে এবং কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিশ্বাস করিয়ে সেখানে দুই দিন রেখে স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা করেন।’

‘এভাবে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনির বিভিন্ন সময় বরিশাল শহরের আগরপুর রোডে বন্ধু মিঠুর ভাড়া বাসায়, তাদের গ্রামের বাড়িতে, আমুয়া বাজারে ৫তলা বিল্ডিংয়ে, কখনো বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে কেবিনে ঢাকা নিয়ে ও ঢাকা আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রীর মতো নিয়মিত যৌন সম্পার্ক চালিয়ে আসছিলেন। এক পর্যায়ে আমি বিয়ের কাগজপত্রের জন্য চাপ দিলে তিনি সামনে উপজেলা নির্বাচন, তাই এখন আমাদের বিয়ের কথা প্রকাশ করা যাবে না। নির্বাচনের পর সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করবেন’ জানালে আমি নীরব থাকি।’

সংবাদ সম্মেলনে তরুণী আরো বলেন, গত ১ আগস্ট আমি আমার মাসহ মামলার ১ ও ২নং সাক্ষীকে নিয়ে বরিশাল মিঠু সিকদারের বাসার সামনে এলে নিচে রাস্তায় দাড়িয়ে মনির জানান, মিঠু বাসায় নেই, বিয়ের কাগজপত্র তার কাছে এবং আমাদের সেখানে দাঁড় করিয়ে কৌশলে চলে যান। আমরা খুঁজতে গিয়ে বরিশাল শহরের সোবাহান কমপ্লেক্সে মিঠু সিকদারের দোকানের সামনে গেলে সেখানে দাঁড়ানো মনির আমাদের দেখে খারাপ ব্যবহার করেন এবং কোনো বিয়ে-সাদি হয়নি, তোরা যা পারিস করিস বলে চলে যান। আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এমাদুল হক মনিরের হাত-পা ধরে অনেক কান্নাকাটি করলেও তিনি আমাকে শারীরিকভাবে ভোগ ও আনন্দ-ফুর্তি করে ছুড়ে ফেলায় আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।

‘এক পর্যায়ে মনির আমাদের মীমাংশার প্রস্তাব দিয়ে গত ১৯ আগস্ট বেলা আনুমানিক ১১টায় বরিশালের অ্যাড. সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজুর চেম্বারে ডাকলে আমি আমার মাকে নিয়ে সেখানে যাই। উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির ও তার সকল অপকর্মের সহযোগী মিঠু সিকদারও সেখানে আসেন। কিন্তু কোনো আপোষ-মীমাংসা না করে আসামিরা সেখান থেকে চলে যান। আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে গত ২৫ আগস্ট বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আদালত তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।’

মামলা হওয়ার পর থেকেই কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই এসব বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ধর্ষণ মামলা হওয়ার চারদিন পর শনিবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে চেয়ারম্যান মনির সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী ও তার বাবার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। তবে মিঠুর বাসাসহ বরিশালের নানা স্থানে তরুণীকে নিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ, রাতযাপন, গত জানুয়ারিতে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান বিয়ে করলেও তার দলীয় নেতাকর্মীসহ আত্মীয়-স্বজনকে গোপন করা এবং গত ১৯ আগস্ট বরিশালের অ্যাড. সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজুর চেম্বারে মনির-মিঠুর উপস্থিতিতে আপোষ বৈঠকের বিষয়গুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন গুল...

হাদির পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির...

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন গুল...

মুন্সীগঞ্জ-৩: মনোনয়ন পরিবর্তন চেয়ে লাগাতার কর্মসূচি

মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে লাগাতার...

মাহফুজ-আসিফের সম্পদের হিসাব প্রকাশের দাবি

দুর্নীতি বিরোধী ছাত্র জনতা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করা দ...

ইসলামী ব্যাংকের ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা বৃহস্পতিবার (১১ ডিসে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা