ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তরা
অপরাধ

পায়ে ধরেও মন গলেনি, ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ধর্ষকরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘আমি তাদের হাতে পায়ে ধরি। অনুনয় বিনয় করি। এতেও তাদের মন গলেনি। আমার স্বামীকে মারধর করে আটকে রেখে আমাকে একের পর এক ধর্ষণ করেন। এর আগে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন ও স্বামীর মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন তারা। ধর্ষণের পর প্রাইভেটকার আটকে রেখে দাবি করেন টাকা।’

সিলেটে এমসি কলেজে গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধর্ষণের শিকার তরুণী সিলেট মহানগর তৃতীয় হাকিম শারমিন খানম নীলার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা উল্লেখ করেন।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাকে সিলেটের আদালতে নিয়ে আসেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি দেওয়ার পর নির্যাতিতাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালতে নির্যাতিতা নারী তার ওপর চলা নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। সুরক্ষিত আদালতেও আতঙ্কে শিউরে উঠছিলেন তিনি।

ধর্ষিতা নববধূ জানান, কয়েকমাস আগে তাদের বিয়ে হয়। শুক্রবার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন। স্বামীকে নিয়ে ক্যাম্পাসের নানা জায়গায় ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যার পর পেছন দিক দিয়ে এমসি কলেজ থেকে বের হন। সেখানেই ওঁৎ পেতে ছিলেন ধর্ষকরা। তারা তাদেরকে ঘেরাও করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেন। এরপর তরুণীর স্বামীকে মারধর করে আটকে রাখেন। অনেক চেষ্টা করেও তার স্বামী তাকে রক্ষা করতে পারেননি। তাকে তারা বেধে রাখেন। এ সময় তিনি চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।

স্বামীকে বেঁধে তারা তার ওপর নির্যাতন চালান। এ সময় তিনি ইজ্জ্বত রক্ষায় তাদের হাতে-পায়ে ধরেন। কিন্তু তাদের মন গলেনি। রাত ৯টার দিকে শাহপরাণ থানার ওসি তাকে ও তার স্বামীকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর নির্যাতিতা তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ডাক্তারদের বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করা হয়।

গণধর্ষণের মামলায় ঘটনার একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন নির্যাতিতার স্বামীও। তার মামলায় বলা হয়েছে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি ধর্ষকরা। তরুণীকে ছেড়ে দিলেও তার প্রাইভেটকার আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এছাড়া তরুণী ওই গৃহবধূর গলা ও কানের স্বর্ণালঙ্কার এবং তার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন তারা।

নির্যাতিতার স্বামী সৌদি আরবে বসবাস করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম। সৌদি আরব থেকে দেশে আসার পর তাদের বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়ি সিলেট শহরতলীর শিববাড়ি এলাকায় ও স্ত্রীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়।

ঘটনার রাতেই ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত তিনজনকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। অভিযুক্তরা হচ্ছেন, সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫), মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও তারেকুল ইসলাম (২৮)। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে তিন আসামিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে ওই তরুণীর স্বামী বলেন, শুক্রবার আনুমানিক বিকাল ৫টায় তিনি স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতে যান। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ৮টার দিকে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে পাকা রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে পাশের দোকানে যান। এ সময় কয়েকজন স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে আসামি সাইফুর রহমান এবং অর্জুন লস্কর তাকে চড়-থাপ্পর মারতে থাকেন। পরে আসামিরা স্ত্রীসহ তাকে গাড়িতে তুলে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে নেন। এ সময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালান এবং তাদের পেছনের সিটে বসিয়ে আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাদের সঙ্গে পাশে বসেন।

এছাড়া শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে উঠে বসেন। তার গাড়ি নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস প্রাঙ্গনের ৭নং ব্লকের ৫তলা নতুন ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে খালি জায়গায় দাঁড় করান। এরপর অন্য আসামিরা মোটরসাইকেলযোগে পেছনে পেছনে ঘটনাস্থলে যান।

নির্যাতিতা তরুণীর স্বামী বলেন, ছাত্রাবাস চত্বরে যাওয়ার পর তরিকুল তার মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা এবং শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি তার স্ত্রী কানের দুল ও অর্জুন লস্কর স্ত্রীর গলার সোনার চেইন কেড়ে নেন। পরে স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন বাদীকে ৭নং ব্লকের পশ্চিম পাশে নিয়ে যান। এ সময় সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভেতরেই তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। তখন স্ত্রীর চিৎকার শুনে স্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গেলে আসামিরা তাকে মারধোর করে আটকে রাখেন।

তরুণীর স্বামী বলেন, আধঘন্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার কাছে এলে আসামিরা প্রাইভেটকার আটকে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে এবং ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কার ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলেন। এ সময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে হেঁটে কলেজ ছাত্রাবাসের গেটে যান। তিনি এ সময় সিএনজি যোগে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে পুলিশে সংবাদ দেন। পুলিশ সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে।

সান নিউজ/ এআর | Sun News

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান নাহিদের

জুলাই যোদ্ধাদের নামে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী সংসদ এলাকায় বিশৃঙ্খলা করেছে- বিএ...

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের কার...

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রস্তাবে ইডেন কলেজের আপত্তি

সরকারি সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক ক...

এনসিপির দাবি জুলাই সনদে ৩ দফা অন্তর্ভুক্ত করা

ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা...

পানির অভাবে তিস্তা এখন মরুময় বালুচর

একসময় উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় তিস্তা নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন...

নির্বাচনের পরও কেন অপরিবর্তিত আমলাতন্ত্র?

সরকার বদলায়, কিন্তু ফাইল চালানো হাতগুলো একই থাকে।...

কেশবপুরে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

যশোর জেলার কেশবপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরা...

গাজার আর্তনাদ: ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ আনুগত্য

গাজার আকাশে এখন কোনো শব্দ নেই—না বোমার, না ড্রোনের, না আর্তনাদের। কিন্ত...

দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা

এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্র...

জুলাই বিতর্কে সালাহউদ্দিনের সাফ কথা: ‘অপব্যাখ্যার ফাঁদে পড়েছি’

জুলাই সনদ সই করার দিনে দাবি পূরণে বিক্ষোভে নামা &l...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা