জেলা প্রতিনিধি: গত সাড়ে ৮ মাসে রাজশাহী বিভাগে রেললাইনে দূর্ঘটনায় ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৯ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: আলফাডাঙ্গায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
এর মধ্যে পাবনায় ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন, রাজশাহীতে ৪ জন ও সিরাজগঞ্জে ১৫ জন। এছাড়া বগুড়া, সান্তাহার ও জয়পুরহাট মিলে মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, অসাবধানতাবসত কিছু মৃত্যু হয়েছে। আবার দ্রুত রেললাইন পারাপার ছাড়াও আত্মহত্যার মতো ঘটনা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দুর্ঘটনা রোধে রেললাইনে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
গত ১০ আগস্ট নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মনিকা তাবাসুম চৈতির (১৩) মৃত্যু হয়। নিহত চৈতি নগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম
ঐ দিন সে পরিবারের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল। অসাবধানতাবসত রেললাইনে উঠে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তার। এরপর ১৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর ডেঙ্গাডোবা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বীপ বাবু (২৫) মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ১১ জুন নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- উপজেলার জামানগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)।
গত ১৫ আগস্ট নাটোরের লালপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৫ জুলাই নাটোরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়। গত ২৩ জুলাই নাটোরে ট্রেনে কাটাপড়ে সম্পা খাতুনের (৩০) মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: রামপালে এলো ৩১৩০০ টন কয়লা
চলতি বছরের ৬ জুলাই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে কাশিনাথপুরের কাবারীকোলা গ্রামের জামিরুল (৩২) ও একই এলাকার বাবু মুন্সি (২৪) মৃত্যু হয়। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই।
১৩ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দৌড়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শাহজাহান আলী বাবু (৫৫) নামে ১ জনের মৃত্যু হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মিজান খাঁ (২৭) নামে ১ যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, ১ মে জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় আবুল কাশেমের (৬৫) মৃত্যু হয়। ২১ জুন জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত ১ যুবকের মৃত্যু হয়।
গত ৮ আগস্ট জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকার ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত ১ বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে পঞ্চগড় অভিমুখী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭০ বছর বয়সী ১ বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, নিহত ১
১৯ জুন ভারত থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মিতালি এক্সপ্রেস নওগাঁর আত্রাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শাহিনুর (৩২) মৃত্যু হয়। ২৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় আমেনা বেগমের (৬৫) মৃত্যু হয়।
১৯ মে নাচোলে ট্রেনের ধাক্কায় রুহুল আমিনের (৩৫) মৃত্যু হয়। ১০ সেপ্টেম্বর বগুড়ার আদমদীঘিতে ট্রেনে কাটা পড়ে অর্পিতা রানী সাহা (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়ত ট্রেনে কাটা পড়ে বা ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তদন্ত করে দেখা যায়, কারও মৃত্যু রেললাইনে চলাচলের সময় অসাবধানতা বসত ঘটেছে। কেউ আবার দ্রুত রেললাইন পারাপারের জন্য মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
বগুড়া রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, বগুড়ার সোনাতলা থেকে সান্তাহার, জয়পুরহাট ও নাটোর নিয়ে মোট ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই (নিরস্ত্র) হারুনুজ্জামান রোমেল জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুর ব্যাপারে মামলা হয়েছে।
পাবনায় ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন ও রাজশাহীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ তুলনায় এবার ট্রেনে কাটা পড়ে মৃতের সংখ্যা কম। সবাই সচেতন হলে মৃত্যু আরও কমে আসবে।
সান নিউজ/এমএ