এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ : শরৎকাল শেষ হয়েছে ২০ দিনেরও বেশি সময় আগে। কার্তিকের মাঝামাঝি এ সময়টা থাকে নাতিশীতোষ্ণ। কিন্তু এ বছর হেমন্তেই যেন শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের পর সপ্তাহজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশাও পড়ছে।
আরও পড়ুন : শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জেও সন্ধ্যায় ও রাতের শেষভাগে খানিকটা শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। ঈশ্বরগঞ্জে গ্রামে বসবাসকারী মানুষের মতে,কার্তিকের শুরু থেকে রাতের শেষ দিকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনটা টের পাওয়া যায়নি।
বিশেষ করে গত বছর আশ্বিন পার হয়ে কার্তিকের শেষ দিকের সময়েও গ্রামের আবহাওয়া ছিল বেশ উষ্ণ। অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু হয়েছিল শীত। ভাবা হয়েছিল, এবারও অগ্রহায়ণমাসের শুরুর দিকে হয়তো প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন : ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, শিক্ষক আটক
তবে এমন ধারণাকে পাল্টে দিয়ে এবার কার্তিকের শুরু থেকেই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের গ্রামগুলোতে কিছুটা শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছিল। আর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ যেন সেই আবহে নতুন মাত্রা যোগ করে দিল! এবার কার্তিকেই বেশ ভালো করে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ।
সারেজমিনে, সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক। দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে। আর শীতের এই আবহাওয়া অনুভব করতে সড়কে হাটা চলা করছেন অনেকই। কুয়াশায় চাদরে ঢেকে আছে রাস্তা-ঘাট। সড়কে যানবাহন চলছে ধীর গতিতে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এসবই জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে এসেছে শীত। সারাদিন গরম থাকে কিন্তু রাতে ও ভোরে এই শীতের কারনে আবহাওয়া টা অনেক সুন্দর থাকে। এখানে বিশেষ করে মাঠে ঘাস ও ধানের শীষে বিন্দু বিন্দু কুয়াশা জমতে দেখা যাচ্ছে। দেখতে অনেক ভালো লাগে।
আরও পড়ুন : পাবনায় নারী শ্রমিককে গণধর্ষণে আটক ২
স্থানীয়রা কয়েকজন সকালে হাটতে আসলে তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে এ বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত যত গভীর হয় কুয়াশা তত বাড়ে হালকা বৃষ্টির মতো টিপটিপ কুয়াশা ঝরতে থাকে।
বিশেষ করে মাঠে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে জমতে দেখা গেছে বিন্দু বিন্দু শিশির। উত্তর থেকে আসছে শিরশিরে বাতাস। ভোরের প্রকৃতিতে হাত বাড়লেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। কয়েক দিন থেকে শেষ রাতে গায়ে কাঁথা চাপাচ্ছেন অনেকেই। যদিও দিনে গরমের তীব্রতা খুব একটা কমেনি।
আরও পড়ুন : ফরিদপুরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৪
গ্রামগুলোতে পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই করে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নারীরা। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে রঙ-বেরঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন কাঁথা আর সেই সাথে জমে উঠেছে গল্প এবং আড্ডা। বাজারে ধুনাইকাররা লেপ তোষক তৈরী শুরু করেছে। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হতে না হতেই রঙ বেরঙের অতিথি পাখির করতালে বিভিন্ন খাল, বিল ও জলাশয় গুলোতে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জের প্রকৃতিতে এবার কার্তিকের শুরু থেকেই হেমন্তে শীতের দেখা মিলছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পর তিন থেকে চার দিন সকালে ছিল পুরোপুরি শীতের আমেজ। এরপর দিনের বেলায় তাপ একটু বেশি থাকলেও সেটা অসহনীয় নয়। রাতে প্রকৃতি বেশ আরামদায়ক হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন : মহাকবির জন্মভূমি পরিদর্শন করলেন বিএসএমএমইউ ভিসি
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কবি মাহবুবুর রহমান বলেন, হেমন্ত খুব উপভোগ্য ঋতু। শিশিরস্নাত ধানখেতের সৌন্দর্য মনকে প্রফুল্ল করে। এই ঋতুতে শেফালি ফুল ফোটে। আর এ হেমন্তে ডগায় ও ধানের শীষে জমতে দেখা গেছে বিন্দু বিন্দু শিশির। যা শীত ঋতুর জানান দিচ্ছে।
সান নিউজ/এইচএন