সান নিউজ ডেস্ক: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জন হয়েছে। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আরও লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো অনেক নিখোঁজ রয়েছেন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ-মহামারিতে কাবু রাশিয়া
সকালে করতোয়ায় দুটি, দিনাজপুরের খানসামার আত্রাই নদীতে একটি এবং আরও দুটি মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা মরদেহগুলোর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে উদ্ধার করা হয় ২৪ জনের লাশ। তারা হলেন, পলি রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দিপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (৩), খুকী রাণী (৩৫), প্রমিলা রাণী (৫৫), তারা রাণী (২৪), শোনেকা রাণী (৬০), ফাল্গুনী রাণী (৫৫), প্রমিলা রাণী (৭০), ধনো বালা (৪৭), সুমিত্রা রাণী (৫৭), সফলতা রাণী (৪০), সিমলা রাণী (৩৫) হাসান আলী, (৫২), এক বছরের শিশু উশোশী, তনুশ্রী ও শ্রেয়শী।
আরও পড়ুন: কুরিয়ার অফিসে বিস্ফোরণে নিহত ১
ঘটনার পর পর ঘটনাস্থল উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় শত শত মানুষ ভিড় করেন। এদের মধ্যে হতাহতদের অনেক স্বজন আছেন। নদীর পাড়ে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
আউলিয়া ঘাট এলাকায় বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে ঝরে গেছে ২৪ জনের প্রাণ। নদীর পাড় থেকে ভেসে আসছে স্বজনদের আহাজারির শব্দ। কাছে যেতেই দেখা গেলো স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্না আশপাশের পরিবেশ ভারী করে তুলেছিল। স্বজনহারাদের কান্নায় নদীর পাড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। আশপাশের পরিবেশ হয়ে উঠে ভারী। কেউ বোনের লাশের সামনে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদেন। কেউ আবার ভাইয়ের লাশের সামনে মাতম করছেন। কেউ কেউ নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন। আউলিয়া ঘাট এলাকার করতোয়া পাড়ে স্বজন হারানোর এই বিলাপে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না কেউ।
আরও পড়ুন: ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনের লাশ নদী থেকে উদ্ধার হয়। বাকিদের হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আট শিশু, চার পুরুষ ও ১২ নারী রয়েছেন।
এ ঘটনায় এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন: আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে ৭০-৮০ জনের মতো মানুষ নিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। ঘাট থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
নৌকাডুবি থেকে বেঁচে আসা এক যাত্রী মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শরও বেশি যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় উঠার পরপরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়াহুড়ি শুরু করেন। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। সেই চরম মুহূর্তের বর্ণনা করতে পারবো না। তবে এতো মানুষ মারা যাবেন, তা বুঝতে পারিনি।
আরও পড়ুন: ইরানে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মহালয়া উপলক্ষে সকাল থেকেই ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। যারা সাঁতার জানতেন তারা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও, নৌকায় থাকা নারী-শিশু পানিতে ডুবে যায়। ঘটনার পর লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। অনেককে উদ্ধারও করেন তারা। এরপর স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে। অতীত অভিজ্ঞতা ও নদীর প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, ভুক্তভোগীদের কেউ দুর্ঘটনাস্থলে নেই। তারপরও প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীকে গলাকেটে হত্যা চেষ্টা
এদিকে, এ ঘটনায় জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতিনিয়ত নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনও ৬৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/কেএমএল