সারাদেশ

বরগুনায় ইউপি মেম্বার নিজাম মীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মোঃ সানাউল্লাহ, বরগুনা: বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ৭নং সোনাকাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিজাম মীরের বিরুদ্ধে দখল বাণিজ্য, সরকারি সব ধরনের কাজে ঘুষগ্রহণ, স্কুল ও মসজিদের দোকানের পজিশন বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে জুয়ার আসর বসিয়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত স্থানীয় জনগণ ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

আরও পড়ুন: দেশাত্মবোধক গান নিয়ে ব্যস্ত জববার

তালতলির ৭নং সোনাকাটা ইউপির ৯নং ওয়ার্ড বাসিন্দা মাসুদ পেয়াদা নামের একজন অভিযোগ করেন, কবিরাজ পাড়া বাজারের প্রতিটি দোকানের পজিশনের জন্য স্থানীয় মেম্বার নিজাম মীর ঘুষ নিয়েছেন। কোনো দোকানের পজিশন দুই-তিনজনের কাছেও বিক্রি করেছেন।

মোঃ দুলাল নামে আরেকজনের অভিযোগ, তার দোকানের পজেশন বিক্রি করে ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন নিজাম মীর। স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলেও ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় তাকে।

মোছাম্মাৎ মেরিনা নামে একজনে জানান, ২৮ বছর আগে জমি কিনেছেন তিনি। কিন্তু, সেখানে দোকান ঘর তুলতে চাঁদা চেয়েছেন নিজাম মীর।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মোঃ আফজাল চৌকিদার অভিযোগ করেন, আমার প্রায় ৭০ বছরের স্বত্ব ও ভোগ দখলীয় জমির ধান আটক করে রেখে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন নিজাম মেম্বার। পরবর্তীতে কবিরাজপাড়া বাজারে আমার ভাইয়ের পজেশনে ঘর তুলতে গেলে নিজাম মেম্বার ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ঘর তুলতে বাধা সৃষ্টি করেন।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন

আজিজুর রহমান নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, কবিরাজপাড়া বাজারের উত্তর পাশে নিজাম মীরের বাড়ির সামনের পজিশনে দোকান ঘর তুলতে গেলে, চাঁদার দাবিতে ঘর তুলতে বাধা দেন নিজাম মেম্বার।। চাঁদা দিতে না চাইলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে আরও দুইজনের কাছে ওই দোকানের পজেশন বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কথা বললে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেন।

কবিরাজ পাড়া বাজার মসজিদের সভাপতি মো. কামাল হোসেন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, শুধু বাজারের দোকানই নয়, মসজিদের দোকানের পজিশনও বিক্রি করে দিয়েছেন নিজাম মীর।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা পীড়নকে ‘গণহত্যা’ ঘোষণা

তিনি আরও বলেন আমি আশা করি প্রশাসনের সহায়তায় মসজিদের দোকানের পজিশনগুলো আমরা ফেরৎ পাব।

কবিরাজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতার ছেলে মোঃ হারুন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, শুধু বাজার ও মসজিদের দোকানই নয়, স্কুলের দোকান পজিশনও বিক্রি করে দিছেন নিজাম মীর। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ডিসি কোর্টে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। তার সকল অপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য অধিকাংশ কাজে নিজে স্বাক্ষর করেন না। তার ব্যক্তিগত সহকারী দিয়ে স্বাক্ষর করান।

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধার

কবিরাজপাড়ার স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি সহায়তা যেমন, ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী কার্ড, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড, জেলেদের ভাতা কার্ড, গুচ্ছগ্রামের ঘর, টি-আর এবং কাবিখাসহ সরকারি যেকোনো সহায়তা পেতে ইউপি সদস্য নিজাম মীরকে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না তিনি। সরকারি এ সব সহায়তার অর্ধেক দিতে হয় তাকে। এমনকি অনেকের সহায়তার কার্ড ব্যবহার করে নিজেই ভাতা তোলেন তিনি।

ফিরোজা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, তার উপার্জনক্ষম ছেলে স্থানীয় রাজনীতির মারপ্যাচে জেলে গেলে, সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা হয় তার। সরকারি সহায়তা পেতে যোগাযোগ করেন নিজাম মেম্বারের সাথে। তখন তাকে নিজাম বলেন, তিন হাজার টাকা ঘুষ দিলে, ভাতার ব্যবস্থা করে দিবেন। ওই ঘুষ নিয়ে আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছেন কিন্তু কোন ভাতা পাননি।

আরও পড়ুন: সাকিব চাইলে দেশে ফিরতে পারবেন

মোঃ ইলিয়াস নামে একজন অভিযোগ করেন, আমার নিকট থেকে এক হাজার পাঁচশত টাকা ঘুষ নিয়ে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছে আমিও কোনো ভাতা পাই না।

মো. ইউসুফ নামে একজন অভিযোগ করেন, তার নামে ৩ মাসের সরকারি সহায়তা এলে, তাকে এক বা দ্ইু মাসের টাকা দিয়ে বাকিটা নিজাম মীর আত্মসাৎ করেন। এছাড়া, ভিজিডি কার্ড দেয়ার কথা বলে ৪ হাজার টাকা ঘুষ নিলেও, সেটি এখনও হাতে পাননি তিনি।

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

মো. বাদশা নামে একজন অভিযোগ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গুচ্ছগ্রামের আমার নির্ধারিত ঘর নিজাম মীর অন্যের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রয় করে দিয়েছেন। এই জন্য আমি মামলাও করি। স্থানীয়ভাবে সালিসির মাধ্যমে আমার নির্ধারিত ঘর আমাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমি আমার মামলা তুলে নেই কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি আমার ঘর পাইনি।

৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি আঃ মান্নান বলেন, নিজাম মীরের ঘুষ বাণিজ্য ও দোকানের পজেশনের নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি লজ্জাজনক। এছাড়া, তার বাড়িতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। যাতে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। জুয়ার আসর বসানোর কারণে একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাকে। তবে জামিনে বের হয়ে আবারও সেই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫

৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কর্মী ছিলাম। নিজাম মীরতো হাইব্রীড আওয়ামী লীগ। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল উন্নয়নকে ঘুষ খেয়ে বিলীন করে দিয়েছে। প্রতিটি প্রতিবন্ধী কার্ড থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছে। গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি ঘর ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে উন্নয়ননে ধারা অব্যাহত রাখবেন।

অভিযুক্ত নিজাম মীরের নিকট অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হবে

সোনাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট নিজাম মীরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিকট এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার এর নিকট অভিযোগের বিষয় জানার জন্য মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা