নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে রাসেল ইসলাম। দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে হয়েও মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক পায়ে দড়ি লাফানো খেলায় (স্কিপিং রোপে) বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড এ নাম লিখেছেন।
স্কুল জীবনের ২০১৭ সাল থেকেই স্কিপিং রোপ খেলা শুরু করে রাসেল। একসময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপে প্রথম হয় সে। বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে অশংগ্রহণ করলেও অনাবশ্যক কারণে তাকে বাতিল করা হয়। তখন থেকেই সে প্রতিজ্ঞা করে একদিন এই খেলা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়বে। সেই থেকে বাসার আশেপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছে রাসেল। অবশেষে নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সে আবেদন করে । স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে তিনি। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি ১ মিনিটের উপর।
আবেদনের তিন মাস পর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড থেকে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই পায় রাসেল। সেখানে তারা তাদের নিয়ম মতো কিছু ভিডিও চায় তার কাছ থেকে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারও বিস্তারিত দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন আরো মনোযোগ দিয়ে চর্চা করে সে। সেই আবার ভিডিও করে তাদের পাঠিয়ে দেয়। অবশেষে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড করে রাসেল। প্রচেষ্ঠার ফলস্বরুপ ডাকযোগের মাধ্যমে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড এর দুইটি সদনপত্র (সার্টিফিকেট) গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পায় বলে জানায় রাসেল। তার লক্ষ্য এখন সাউথ এশিয়ান গেমসে ও আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করা।
রাসেলের পিতা বজলুর রহমান বলেন, নিতান্ত গরিব কৃষক হয়েও ছেলেকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলে আজ দেশের সেরা থেকে বিশ্বের সেরা হয়েছে ভাবতেও ভালো লাগছে।
রাসেলের বড় ভাই আরিফ জানান, আমার ছোট ভাই রাসেল এতো বড় কিছু অর্জন করবে, আমরা বিশ্বাস করতেই পারিনি । আশা করি সে আরো ভালো কিছু করবে।
রহিমানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান মেহেদী বলেন, রাসেল একজন সাধারণ ছেলে হয়েও বিশ্ব রেকর্ড করেছে ভাবতেও ভালো লাগছে। তার এই সাফল্যে আমরা গ্রামবাসি আনন্দিত ও গর্বিত।
রাসেলের বন্ধুরা জানায়, সে ছোট বেলা থেকেই খেলার প্রতি আসক্ত ছিলো। তার স্বপ্ন ছিলো একদিন বড় কিছু করবে। তার সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড একটি সম্মান জনক অর্জন। আমাদের বাংলাদেশ এর জন্য এটি গৌরবের। বিশেষ করে রাসেল ঠাকুরগাঁও জেলার হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি ও শুভ কামনা করছি। আগামীতেও সে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ুক এই কামনা করছি। এছাড়াও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তার কোনো প্রয়োজন হলে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
রাসেল বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
সান নিউজ/এসএ