সারাদেশ

বাঁশখালী বেড়িবাঁধ প্রকল্পে হরিলুট, মোটাতাজা প্রকৌশলীরা!

বিশেষ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালী স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ না হলেও বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়ানো হয়েছে ২৬২ কোটি টাকায়। বেড়েছে মেয়াদও। যদিও পাউবোর দাবি প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

আবার কাজ নিয়েও আপত্তি তুলেছে পাউবোর টাস্কফোর্স। ব্লক নির্মাণসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের জন্য দোষারোপ করা হয় প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। কিন্তু অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিয়ে ঠিকাদারের উপর দোষ চাপিয়েছে।

টাস্কফোর্সের তথ্যমতে, প্রকল্প চলাকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এলাকায় আবস্থানের নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু বাঁশখালীর প্রকল্পের সাথে যুক্ত কোনো প্রকৌশলী কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। তারা শহরের কার্যালয়ে বসেই প্রকল্প তদারকি করেন।

জানা যায়, প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস গত ১৯ মে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগদান করেন। কিন্তু এরপর থেকে তিনি বাঁশখালীর স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্প পরিদর্শনে যাননি একবারও। শুধু এই প্রকল্প নয়। পাউবোর অধীনে চট্টগ্রামে চলমান ১৪ প্রকল্পের একটিও তিনি পরিদর্শন করেননি। তিনি প্রায়ই ঢাকায় অবস্থান করেন। একই অবস্থা নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান ও সহকারী প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমার।

এ বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাসকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান বলেন, আমি কয়েকমাস হলো যোদান করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

প্রকাশন চাকমা বলেন, আমি বাঁশখালী বেড়িবাঁধ প্রকল্প পরিদর্শনে করেছি।

তিনি বলেন, আসলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে মূল কারণ-বাঁশখালীর মানুষ। তারা কোনো কিছুই বোঝেন না, অসভ্য। তারা কোনোমতেই বেড়িবাঁধ করতে দিচ্ছেন না।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ তো সরকারি জমি। কিন্তু সেগুলো তাদের অবৈধ দখলে। তাই প্রকল্প দেখভাল করতে আমরা সেখানে যাই না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে শহরে অবস্থান করি। প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হলে আমি একা করিনি। এখানে সবাই জড়িত।

এদিকে বাঁশখালীর মানুষের অসভ্যতার সাথে পাউবোর বোড়বাঁধ নির্মাণ কাজের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, উপকুলের মানুষ সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে বাচতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য একাধিকবার মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এরপরও তারা বেড়িবাঁধ করতে দেবে না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার মনে হয় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে প্রকৌশলীরা বাঁশখালীর মানুষের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।

সূত্রমতে, ২০১৫ সালে এই বাঁশখালী স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের ডিপিপি তৈরিতে প্রথমদিকে মূল ভূমিকা ছিল বর্তমানে কাপ্তাই প্রকৌশল অ্যাকাডেমির তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী স্বপন কুমার বড়ুয়ার। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পরপরই এই কর্মকর্তাকে সরিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর স্থলাভিষিক্ত হন নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক।

এই কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাঁশখালীতে নানাভাবে জরুরি মেরামত কাজ শুরু করেন। ছোটখাট প্রকল্প হাতে নিয়ে সুবিধা দিতে থাকেন ঠিকাদারদের। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে প্রকল্পে সংশোধন এনে ব্যয় বাড়ানো হয়। প্রকল্প চলমান অবস্থাতেই ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ২৬২ কোটি টাকা ছাড় করানো হয়। কাজ শেষ না হলেও বৃহৎ অংক ছাড় করানোর পেছনে মূখ্য ভূমিকা রাখেন নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার তারেক।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পাউবো চট্টগ্রাম-২ বিভাগ থেকে বদলি হয়ে হাওর এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েই পরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে বিদেশে পাড়ি জমান এই কর্মকর্তা। পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগসহ নানাভাবে বড় এ প্রকল্পে হরিলুটের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে জুলফিকার তারেকের বিরুদ্ধে। শীর্ষ এই কর্মকর্তা ছাড়াও বাঁশখালীর প্রকল্পে মোটাতাজা হয়েছেন পাউবোর আরো চার কর্মকর্তা।

এরা হলেন-চট্টগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ নুরুল ইসলাম (তৎকালীন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী), সহকারী প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহের ও ধীমাণ কৃষ্ণ চৌধুরী।

গত ৩১ জানুয়ারি এ প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে ছনুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আলমকে বরখাস্ত করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের ঠিকাদারদের সাথে সখ্যতা রেখে কোটিপতি বনে গেছেন এসও আবু তাহের, ধীমান কৃষ্ণ চৌধুরী ও প্রকাশন চাকমা। এরমধ্যে ধীমান কৃষ্ণ চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার বদলি করা হলেও তিনি বাঁশখালী ছাড়তে নারাজ। বারবার উচ্চমহলে তদবির করে চলমান কাজে পুনর্বহাল হলেও এখন তিনি পালাতে চান। আবু তাহেরও ছয় বছর ধরে বাঁশখালীতে। প্রকাশন চাকমা বছরখানেক আগে বাঁশখালীতে বদলি হলেও অল্প সময়ে প্রকল্পটি নিজের হাতের মুঠোয় নেন। তাদের কর্মস্থল বাঁশখালী হলেও তারা সপ্তাহের অধিকাংশ সময় বহদ্দারহাট পাউবো অফিসে বসেই তাস খেলে সময় কাটান বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

এলপিজির নতুন দাম জানা যাবে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল তরলী...

আজ সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হাইকোর্ট...

রাজবাড়ীতে ট্রেন লাইনচ্যুত

জেলা প্রতিনিধি : রাজবাড়ীতে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে...

দুপুরে আসছে নিহত ৮ বাংলাদেশির লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) বেশ কিছ...

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সাধা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা