সারাদেশ

অবৈধ ইটভাটায় বিপর্যস্ত পরিবেশ, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে নাম উঠে এসেছে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার শীর্ষ স্থানে নারায়ণগঞ্জ। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ। এই জেলাতেই রয়েছে ৩৪৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে ২৫৪টিই অবৈধ।

এ সকল ইটভাটার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নদীর তীরবর্তী এলাকা ও ফসলি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। এর ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যকে ফেলছে হুমকির মুখে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, বন্দর এবং রূপগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ইটভাটার দেখা পাওয়া যায়। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ার ও বিষাক্ত গ্যাসে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ইটভাটা সাধারণত এফসিকে, অটো ব্রিকস, জিগজ্যাগ, হাইব্রিড, ফরম্যান, বিএসভিকে ও অন্যান্য ধরনের হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ছাড়পত্র ও নবায়নবিহীনভাবে নারায়ণগঞ্জে পরিচালিত জিগজ্যাগ পদ্ধতির ইটভাটা রয়েছে ১৫০টি। এর মধ্যে রূপগঞ্জে রয়েছে ৮২টি, সদর উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, বন্দরে ২৫টি, সোনারগাঁয়ে ৭টি। আর ১২০ ফুট চিমনীবিশিষ্ট অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১০৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৯টি, রূপগঞ্জে রয়েছে ৩২টি, আড়াইহাজারে ১টি, সোনারগাঁয়ে ২টি। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১৯ অবৈধ ইটভাটা।

কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর বড়বাড়ি এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র কৃষকদের জমির মাটি স্থানীয় একটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, মাটি সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি ১০ থেকে ১৫ ফুট গর্ত করে স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের ফসলি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কৃষি জমিগুলোতে মাটি কেটে নেয়ার কারণে জমিগুলোতে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ৮৩৯ হেক্টমিটার। এর মধ্যে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৪৬ হাজার ৭৭৪ হেক্টমিটার। মোট কৃষি নির্ভর পরিবার রয়েছে ১লাখ ৭২ হাজার ২৮৯টি পরিবার। কিন্তু গত কয়েকবছরে কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেছে অর্ধাংশ। আর এ ইটভাটার দূষণের প্রভাবে কমেছে আবাদযোগ্য জমিগুলোর উর্বরতা। ফলে কৃষি প্রধান পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে ঝুঁকছে অন্য পেশায়।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি কার্যালয়ের কাজী হাবিবুর রহমান জানান, কৃষি জমি যে জমির মাটি রয়েছে তার উপরিভাগের মাটি রয়েছে তা যদি কেটে নেয়া হয় তাহলে জমির উর্বরতা কমে যাবে। যা ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বেশির ভাগ সময়েই ওই সকল জমিতে একেবারেই ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

তিনি আরো জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রতিবছরই ১ শতাংশ করে কৃষি জমি কমেছে। কৃষি পরিবারগুলো কৃষিকাজ থেকে বেরিয়ে ইটভাটাসহ কলকারখানা পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। যা আগামী সময়গুলোতে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিপর্যস্ত পরিবেশ, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য :
শুধু কৃষি জমি নয় ইটভাটার প্রভাব পড়ছে জানস্বাস্থ্যেও কৃষিজমি ইটভাটা রয়েছে এমন এলাকাগুলো ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফসলি জমি ছাড়াও ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকার নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে।

মুছাপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও এলাকার তোতা মিয়া জানান, আশেপাশে ইটভাটার কালো ধোয়া আর গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়া অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সারা বছরই কাশি, বুকে ব্যাথা এগুলো লেগেই থাকে।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার জানান, নিয়ম না মেনে কোন লাইসেন্স কিংবা ছাড়পত্র ব্যতিরেকে ইটভাটাগুলো অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে। আমরা পরিবেশ দূষণ রোধে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অতি শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করব। তবে একটি এলাকায় যে কয়টি ইটভাটা থাকার কথা তারচেয়ে অনেক বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। একটি এলাকায় কতগুলো থাকবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় আমরা এর সংখ্যা নির্ধারণও করতে পারছি না।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃদযন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশ্বাস। এমনকি অতিরিক্ত দূষিত বায়ু সেবনে গর্ভবতী নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের প্রতি বিরূপ প্রভাব পড়ে, এমনকি জন্মের পূর্বেই শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে ধীরগতি :
গত ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার আশেপাশের পাঁচ জেলার ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সময়সীমা ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। তবুও বন্ধ হয়নি ইটাভাটাগুলোর কার্যক্রম। যদিও ফতুল্লা, বন্দর, আড়াইহাজার থেকে ইতোমধ্যে মাত্র ১৪টি ইটভাটা বন্ধ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ফতুল্লায় ১৩টি, বন্দরে ২টি ও আড়াইহাজারে ৪টি ইটভাটা রয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‌হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী জেলাজুড়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর উচ্ছেদকৃত ইটভাটাগুলো পুনরায় চালু করার কোনো সুযোগ নেই।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি বলেন, করোনার কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হওয়ায় অতি শিঘ্রই আবার অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে আমাদের অভিযান চালানো হবে।

সান নিউজ/এনএ/কেটি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

পরিবেশ রক্ষায় গাছ কাটা বন্ধে রিট 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ রক্ষায়...

সেনাবাহিনীকে আধুনিক করে তোলা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজ...

নাতির হাতে বৃদ্ধা খুন, আটক ৩

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মন...

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশ...

ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল চালকের

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের মাদারগঞ্জে কয়লাবোঝাই ট্রাক উ...

বায়ুদূষণে আজ ঢাকার অবস্থান সপ্তম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বায়ুদূষণে বিশ্ব...

৮ মে থেকে সশরীরে ক্লাসে ফিরছে ঢাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান তাপপ্রবাহ...

আ’লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা বিকেলে 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ আওয়ামী লীগের...

ইবিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সমাবেশ 

ইবি প্রতিনিধি: স্বাধীন ফিলিস্তিন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা