সারাদেশ

১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় রাজবাড়ী

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী মূলত রেলের শহর হিসেবে পরিচিত। সে সুবাদে এখানে প্রায় ২০ হাজার অবাঙালি বিহারি বসবাস ছিল এখানে। যে কারণেই ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী ছিল অবাঙালি বিহারিদের দখলে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরণ যুদ্ধের কারণে দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী।

মূলত অবাঙালি বিহারিদের বসবাস ছিল রাজবাড়ী শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, ষ্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনির বিশাল এলাকায়জুড়ে। রাজবাড়ী জেলা শহর রেল লাইন দ্বারা দু’ভাগে বিভক্ত। তবে ১৯৭১ সালে রাজবাড়ীর উত্তর পাশই ছিল মূল শহর। আর ওই উত্তর পাশেই রেলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছিল ৪টি বিহারি অধ্যুষিত এলাকা। রেলের শহর হওয়াতে রাজবাড়ীতে বিহারি অবাঙালিদের বসবাস বেশি ছিল। শহরের জাঁকজমক ছিল ওই ৪টি কলোনিকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর বাঙালিরা ওইসব বিহারি অধ্যুষিত এলাকায় যেত না। তবে বিহারিদের প্রিয়পাত্ররা ঠিকই অবাধে সেখানে যোতে পারতেন।

১৯৭১’র সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাদের প্রচণ্ড প্রভাব ছিল জেলা শহরে। সারাদেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দে ভাসছে রাজবাড়ীতে তখনও চলছে অবাঙালি, বিহারি, পাকবাহিনী ও রাজকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। পড়ে রাজবাড়ী শহরকে শত্রুমুক্ত করতে রাজবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বিহারি অবাঙালিদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তাদের পরাজিত করে রাজবাড়ীকে ১৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সে সময় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

তবে ১৬ ডিসেম্বরের পর বিহারিরা রাজবাড়ীকে পাকিস্তান বহাল রাখার প্রতিজ্ঞা করে ২ দিনে রাজবাড়ীর শতশত মুক্তিকামী মানুষকে গণহত্যা করে রাজবাড়ী লোকোসেড এলাকায় রেলের পুকুরের মধ্যে একটি কুপে স্তূপ করে রাখে। ওই কুপটি এখনো দৃশ্যমান।

যুদ্ধ চলাকালীন পাক বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারিরা তাদের সাথে যোগসাজশে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও পোড়াও এবং গণহত্যা। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে ৮টি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে পাক বাহিনী, অবাঙালি ও বিহারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। রাজবাড়ী জেলা শহরকে শত্রুমুক্ত করতে পাংশা, কুষ্টিয়া, যশোর ও মাগুরা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনী, বিহারি অবাঙালিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করে রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত করে।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান লালী, জিল্লুল হাকিম, আব্দুস সামাদ, এসএম নওয়াব আলী ও গোলাম মোস্তফা গিয়াস জানান, রাজবাড়ীর বিভিন্নস্থানে ১৬ ডিসেম্বর বা তারও আগে শত্রুমুক্ত হলে রাজবাড়ী শহরে তখনও চলছে অবাঙ্গালী বিহারীদের সাথে মুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ। রেলের শহর হওয়াতে রাজবাড়ীতে বিহারী অবাঙ্গালীদের বসবাস বেশি ছিল। যে কারণে তারা রাজাকারদের যোগসাজশে ও পাক বাহিনীর সহায়তায় অস্ত্রসজ্জা নিয়ে শক্ত অবস্থানে ছিল। পড়ে রাজবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে অবাঙ্গালী বিহারীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করেন ১৮ ডিসেম্বর। এর পরেই তারা বিজয়ের উল্লাস করেন। কিন্তু সেই সম্মুখ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জানান, রাজবাড়ীতে রেল কলোনি থাকার কারণে রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত করতে দুই দিন সময় বেশি লেগেছে। পাক বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করলেও রেল কলোনির বিহারী অবাঙ্গালীরা আত্মসমর্পণ করে নাই। পরে রাজবাড়ীকে মুক্ত করতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ হয়। পড়ে ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত করা হয়।

সান নিউজ/কেটি/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি প্রকাশ

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল আস...

কর্মস্থলে না এসেও বেতন তোলেন শিক্ষক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (১৮মে) বেশ কিছু খেল...

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশ রক্ষায় অবৈধ চাই ধ্বংস 

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় মেঘনা নদী থ...

মুন্সীগঞ্জে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মধ্য কোটগাঁ...

ভবন থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাই...

ইসলামী ব্যাংক ও ডিআইইউ’র মধ্যে চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক ব...

রেড কার্পেটে নিজের তৈরি পোশাকে ন্যান্সি

বিনোদন ডেস্ক: ভারতীয় ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার ন্যান্সি ত্যাগী। ক...

বিদেশি মদসহ গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ডেমরায়...

৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৬ষ্ঠ উপজেলা পরি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা