সারাদেশ

টাকা দিলেই বানানো যায় মানসিক রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে মাদকা-সক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ছাড়াই এসব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে মানসিক চিকিৎসা। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে চলছে অনৈতিক অর্থের প্রতিযোগীতা ও চরম নৈরাজ্য। এসব নিরাময় কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে যে কাউকে মানসিক রোগী বানিয়ে ফেলা যায়।

মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক চিকিৎসার নামে পারিবারিক বিরোধেও নেওয়া হয় মানসিক রোগীর সার্টিফিকেট। সম্পদ ভোগ-দখল করতে ভাই ভাইকে বানাচ্ছেন মানসিক রোগী। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই এসব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে মানসিক চিকিৎসা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন দেন আমাদের মহাপরিচালক। কিন্তু মানসিক চিকিৎসা দিতে গেলে সেটার অনুমোদন নিতে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। ঢাকা শহরে অর্ধ শতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন আমরা দিয়েছি।

সারা দেশে অনুমোদন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে দুই বার সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখার কথা, কিন্তু জনবলের সীমাবদ্ধতার কারণে সব সময় এটা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি অনুমোদন না নিয়ে যারা এসব নিরাময় কেন্দ্র খুলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও অধিদপ্তরের।

কিন্তু আমরা সব সময় এই কাজগুলো করতে পারছি না। তাই অনেকেই সুযোগ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে। তবে অধিদপ্তর মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায়। কয়েক বছর আগে সিলেটে তালাক দেওয়া লন্ডনি স্ত্রী ও তার ছেলের ষড়যন্ত্রে মানসিক রোগী হিসেবে দীর্ঘ এক মাস ধরে আটক ছিলেন সুস্থ-স্বাভাবিক আব্দুল মালিক। ৬০ বছরের অসহায় বৃদ্ধ মালিককে পরে উদ্ধার করে তার স্বজনেরা।

উদ্ধারের পর মালিক বলেন, তার আগের স্ত্রী ও ছেলে তার সম্পদ দখল করে আত্মসাধ করতেই তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে আটকে রেখেছিল। জোর করে তাকে শাহজালাল মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা কেন্দ্রে ভর্তি করে। বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তাকে মানসিক রোগীর সার্টিফিকেটও দিয়েছিল। অথচ তিনি পুরোপুরি সুস্থ মানুষ।

তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মালিক মানসিক রোগী। পরে মালিক ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত সেটির আর সুরাহা হয়নি। সারা দেশেই এমন নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। অনুমোদন না থাকলেও পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। এসব নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে এমন নজির কম। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিন ভালো থাকলেও আবারও তাকে মাদকেই ফিরে যেতে দেখা যায়। অথচ চিকিৎসার নামে অভিনব কৌশলে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্তদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছোট ছোট রুমে মাদকাসক্তদের তালাবন্দি রেখেই চলছে তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা।

দুইবছর আগে একজন যুগ্ম সচিবকে মনোরোগ চিকিৎসার নামে জোর করে একটি ক্লিনিকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠে তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে। পরে এক ভিডিও বার্তায় ফসিহ উদ্দিন নিজেই অভিযোগ করেছেন, মনোরোগ চিকিৎসার নামে তার স্ত্রী ও মেয়ে রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিকে তাকে আটকে রেখেছে।

আর এ কাজে সহায়তা করেছেন ঐ ক্লিনিকের চিকিৎসকরা। ১২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওটি দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন তার স্ত্রী বাসবী মাকসুদ ও মেয়ে মহুয়া । তাদের দাবি, ২২ বছর আগে ফসিহ উদ্দিন মনোরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ কারণে তাকে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফসিহ উদ্দিন বলেছিলেন, তার একমাত্র মেয়ে মহুয়া পছন্দ করেন তার প্রতিষ্ঠানের একজন চার্টার্ড একাউনটেন্টকে। কিন্তু ছেলের পরিবার জামায়াত মতাদর্শী হওয়ায় মেয়ের পছন্দে দ্বিমত পোষণ করেন তিনি। তবে তার স্ত্রী মেয়ের পছন্দের সঙ্গে একমত। তিনি তার মেয়েকে পছন্দের ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিতে চান।

এ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে তাকে মানসিক রোগী বানানো হয়েছে। স্ত্রীর এতটা ক্ষমতার উৎস প্রসঙ্গে ফসিহ উদ্দিন বলেন, আমার সব সম্পত্তি তার নামে রয়েছে। এই কারণেই তিনি এতটা বেপরোয়া। কিছুদিন আগে রাজধানীর উত্তরায় রি-লাইফ মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনোয়ার আজিম (৩০) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গোসলখানা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অমানবিক নির্যাতনের কারণে আনোয়ার আজিম আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুকে

অভিযোগে বলা হয়, সেনা সমর্থিত সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ তারা বৈশাখী টিভি...

দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০,খসড়া তালিকা প্রকাশ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্ব...

ট্রাম্পের দূতের হাতে বিশেষ পুরস্কার তুলে দিলেন পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্...

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছাত...

দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০,খসড়া তালিকা প্রকাশ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্ব...

ইভিএম বাতিল, ফিরছে ‘না’ ভোট

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বাতিল করে ‘না’ ভোটের বিধান ফিরি...

অবহেলায় শিক্ষা খাত, সংস্কারে কমিশনও করা হয়নি

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন হ...

ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন না হওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: তারেক রহমান

স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চ...

ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মা...

রংপুরে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: আসক

রংপুরে তারাগঞ্জ উপজেলা এলাকায় ভ্যান চুরির সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা