সৈয়দ মেহেদী হাসান, বরিশাল : তিনি একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। ইচ্ছা ছিল সভাপতি পদে লড়বেন। আবার স্থানীয় পত্রিকার কার্ড নিয়ে পুরো উপজেলা দাপিয়ে বেড়াতেন সাংবাদিক পরিচয়ে। নিজেকে প্রচার করতেন, যশোরে ক্রাইম রিপোর্টার পদে চাকরী করে এখন নিজ বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নে থিতু হয়েছেন।
তবে সামাজিক এইসব পরিচয়ের বাইরে তার অসামাজিক কার্যকলাপ এখন মানুষের মুখে মুখে। মানুষ জানতে শুরু করেছে, অধিকাংশ সময় স্বজ্জন হয়ে থাকা মানুষটি বস্তুতপক্ষে নারীদের ফাঁদে ফেলে শারীরীক সর্ম্পক স্থাপনের জন্য মুখিয়ে থাকতেন। নাম তার নওরোজ হিরা সিকদার ওরফে নওরোজ হিরা। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল খালেক সিকদারের ছেলে।
নওরোজ হীরা জানিয়েছেন, একটি চুরির ঘটনা তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। মূলত ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন কিশোরী ও তরুণীর সাথের ছবিগুলো তার মোবাইলে ছিল। মোবাইলটি ১৭ অক্টোবর বিকেলে চুরি হয়ে যায়। ১৯ অক্টোবর থেকেই আপত্তিকর ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। হীরা জানিয়েছেন, চোরই তাকে সর্বনাশ করেছে।
জানা গেছে, দুই সন্তানের জনক নওরোজ হীরার স্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। কিন্তু নিজ গ্রামের বাড়িতে একা থাকতেন। সেই সুবাদে নারীদের সম্ভ্রমহানী করা তার নেশায় পরিণত হয়। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় হীরার ছবিগুলো সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও প্রথমে কেউ মুখ খোলেনি। এমনকি সংশ্লিষ্ট বাকেরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও তা আমলে নেননি কথিত ধর্ষণকান্ডে নাবালক চার শিশুকে গ্রেফতার করা বিতর্কিত সেই ওসি। তবে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সর্বশেষ বুধবার (২৮ অক্টোবর) মাঝরাতে ধর্ষণের শিকার এক স্কুলছাত্রীর মায়ের করা মামলা গ্রহণ করে পুলিশ।
মামলা না নেয়ার বিষয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত হীরা বাকেরগঞ্জ থানায় জাতীয় পার্টি মনোনীত সংসদ সদস্য বেগম নাসরিন জাহান রত্না ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিনের কাছের কর্মী। অভিযোগ রয়েছে কাকরধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপির সুপারিশক্রমে সদস্যপদ লাভ করেন। ওদিকে সাংবাদিক পরিচয় বহন করে, থানা পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখে চলতেন তিনি। সে কারণেই মামলা নিতে গড়িমসি করেন ওসি আবুল কালাম।
তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার তথ্য, চিত্র এবং ভিডিও থাকা সত্যেও ভিক্টিমরা কেউ অভিযোগ দিচ্ছিল না বিধায় আমরা মামলা নিতে পারিনি। তবে বুধবার নির্যাতিত এক তরুনীর মা অভিযোগ দিয়েছে বলে আমরা মামলা রেকর্ড করেছি। মামলায়, নওরোজ হীরা ও তার এক ভাতিজিকে আসামী করা হয়েছে। বর্তমানে উভয়ে পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত হিরা ১১টি মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। শারীরিক সম্পর্কের সময় এসব মেয়ের অগোচরে হিরা তা মোবাইলে ধারণ করতো। পরবর্তীতে ওই মোবাইলের ভিডিওচিত্র দেখিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় ভীতি দেখিয়ে পুনরায় তার সাথে শারীরীক সর্ম্পক স্থাপন করতে বাধ্য করতো। যাদের জিম্মি করে তিনি দৈহিক সর্ম্পক স্থাপন করতেন তারা অধিকাংশই কাকরধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। অভিযোগ রয়েছে, শিশু বলাৎকারের পর তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, হীরা ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাইয়ে দেয়া, টাকা দেয়া, ভালো খাবার খাওয়ানো, ভালো বাড়িতে বিয়ে প্রভৃতি প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ফাঁদে ফেলতো এবং পরে ধর্ষণ করতো। এদিকে হীরার বিচার চেয়ে (২৯ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার এলাকায় বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও যুব সমাজ।
প্রসঙ্গত, হীরার ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হওয়ার পর ২৫ অক্টোবর স্থানীয় এক যুবক ইমরান হােসেন বাকেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু ওসি আবুল কালাম সেই অভিযোগ গ্রহণ করেননি।
সান নিউজ/এমএইচ/এস