টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এর ফলে তৃতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলার তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫২ দশমিক ২৬ মিটার রেকর্ড করা হয়; যা বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১৫ মিটারের চেয়ে ১১ সেন্টিমিটার বেশি।এরপর সকাল ৯টার মধ্যে পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
সুনীল কুমার বলেন, “তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখনও স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।”
তিস্তায় পানি বাড়ার কারণে কারণে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
দুর্গতরা জানিয়েছেন, চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ও বসতবাড়ি ডুবে গেছে। গবাদি পশু, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীর ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকায় ভাঙন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সোলার প্যানেল স্থাপনের কারণে তিস্তার মূল স্রোত বদলে গিয়ে লোকালয়ের রাস্তায় চাপ পড়ছে। ওই এলাকা ভেঙে গেলে পানি সরাসরি কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢুকে পড়তে পারে।
তিস্তা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, “সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ বেড়েছে। বাঁধ ও রাস্তা ভেঙে গেলে হাজারও পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে।”
হাতিবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম বলেন, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
“পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আমরা চরম বিপাকে আছি। এখনো কেউ খোঁজ নেয়নি, ত্রাণ পাইনি।”
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের আব্দুর করিম (৭০) বলেন, এ নিয়ে তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছেন তারা। বন্যায় গবাদিপশুসহ শিশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, “আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, রাস্তা-ঘাট সবকিছু পানির নিচে। দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দরকার।”
একই উপজেলার শিঙিমারী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় চার হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি।
আর আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিন হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দ হয়ে পড়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোছত জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রাকিব হায়দার বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
সাননিউজ/এসএ