শিল্প ও সাহিত্য
সেলিনা হোসেনের বই

শাইখ সিরাজ: টেলিভিশনের পর্দায়, বইয়ের পৃষ্ঠায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি পরিচিত হওয়ার আগে তাঁকে দেখেছি টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন ‘মাটি ও মানুষ’ নামে। ভাবলাম, বাহ্ বেশ তো, কৃষি-বিষয়ে অন্যরকম অনুষ্ঠান। গল্পলেখার সূত্রে যখনই সুযোগ পেয়েছি বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, কিন্তু এই ছোট্ট দেশটির উর্বর মাটিতে ফসলের এত বৈচিত্র্য তা ঠিকভাবে দেখিনি। ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটি দেখার পরে অসম্পূর্ণ দেখাটি পূর্ণ হতে থাকলো। এরপর যেখানেই গিয়েছি স্থানীয় মানুষকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি অনেক গাছের নাম, ফুলের নাম। জানার কৌতহুল বাড়িয়ে দিয়েছে এই অনুষ্ঠান।

এখন থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে প্রকৃতি দেখা, মানুষ দেখার যে সূচনা হয়েছিল আমার জীবনে, তার রেশ ফুরোয়নি। নিজেকে শাসন করে বলি, ফুরাবে না কখনো। এই অফুরন্ত আনন্দের উৎস থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা হবে হঠকারিতার শামিল। ততদিনে শাইখ সিরাজের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তার আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। কখনো কৃষি বিষয়ক পুরস্কারের জন্য বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক লেখা পড়তে পড়তে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করেছি। শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান আমার কৃষি দেখার দরজা খুলে দেয়। পরিচিত হই হরিধান আবিষ্কারকের সঙ্গে, পরিবেশ বান্ধব ব্যক্তিদের সঙ্গে। যেন এ জগৎ আমারই ছিল, তারপরও হাত ধরে কেউ ডেকে এনে বলল, দেখুন। দেখে নিজেকে জানুন।

শাইখ সিরাজ ক্রমাগতভাবে তার অনুষ্ঠানের মাত্রা বাড়িয়েছেন। চ্যানেল আই টেলিভিশনে শুরু করলেন হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান। তাও এক যুগ পার হয়েছে। অবাক হয়েছি দেখে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন দেশ থেকে বিদেশে গিয়েছে, কৃষিখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে শেখার আয়তন বেড়েছে। প্রতিনিয়ত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনে কৃষকের ঈদ আনন্দ আয়োজন করা হয়। এটিই একটি অনুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য- এক ঘেয়েমীর হাত থেকে রক্ষা করে। শাইখ সিরাজ বেশ সচেতনভাবে এ দিকটায় নজর রেখেছেন। কৃষিপণ্যকে শিল্পপণ্যে পরিণত করা যে অর্থনীতির জন্য কত জরুরি তা তিনি তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে ভালো লাগলো দেখতে যে আমাদের দেশের নিরক্ষর, প্রায় নিরক্ষর কৃষকরা ড্রাম সিডার ও লিফ কালার চার্টের মতো কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণে তৎপর রয়েছে। দেশে এর ব্যবহার বেড়েছে। বাড়ছে উৎপন্ন শস্যের পরিমাণ। এমন উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান দরিদ্র বাংলাদেশের কৃষকের জানার অধিকারকে বাড়িয়ে দিতে সহায়ক শক্তি।

শহরবাসীর হৃদয় যদি মাটি ও মানুষকে চিনতে শেখে, সরকারে নীতি নির্ধারকরা যদি মাটি ও মানুষকে তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি আইনসভায় কৃষকের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে উপস্থিত হন তবেই বুঝতে হবে এই অনুষ্ঠানের সুদূরপ্রসারী লক্ষ কৃষিখাতে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে আছে জীবনের জলছবি, বেঁচে থাকার উপাদান তৈরির জন্য একনিষ্ঠ শ্রম, আছে দুঃখ-কষ্ট, চোখের জল, হাড়ভাঙা পরিশ্রম, বন্যায় ডুবে যাওয়া শস্যক্ষেত, খরায় পুড়ে যাওয়া বিরান ফসলের মাঠ, অন্যদিকে আছে ফসলের প্রাচুর্যে ভরে ওঠা সোনালী ধানের শীষ কিংবা রবিশস্য অথবা ফলমূল আনাজপাতি। এসবইতো মানুষ এবং মানুষের হৃদয়ের কথা। এসব জীবনের গল্প, বিনোদনের মতো হৃদয়গ্রাহী বাস্তবের চিত্র, এর ভেতরই নিহিত আছে জনজীবনের রূপকথা। এই রূপকার শাইখ সিরাজকে আমার অভিনন্দন।

এই বছর হাতে পেয়েছি শাইখ সিরাজের নতুন বই ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। রয়্যাল সাইজের ৩৬০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে চমৎকারভাবে উঠে এসেছে করোনাকালের সময়। ডায়রি লেখার আদলে লিখেছেন এই বই। শুরু পৃষ্ঠায় আছে ‘সোমবার। ২৩ মার্চ ২০২০। চ্যানেল আই সংবাদকক্ষ।’ ডায়রি লেখা শেষ হয়েছে বুধবার। ২.০৯.২০২০ তারিখে। এই তারিখের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন : ‘‘২০২১ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর। এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বছর। এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। (যদিও এটি চূড়ান্ত হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে)। এ বছর প্রচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার বছর। এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাদ্য ঘাটতি আর অর্থনৈতিক মন্দা দেখা গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ তা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাঁর দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ এ সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সমর্থ হয়েছে। এ বছর জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা খাদ্য ঘাটতির ইঙ্গিত দিলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশের কৃষকদের ধারাবাহিক উৎপাদন আমাদের সহায় হয়েছে।”

করোনাকালের মহামারীর সময় হলেও তিনি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে বইয়ের শেষ করেছেন। শেষের বাক্য কয়টি জীবন-সত্যের বড় জায়গা। খুব ভালো লেগেছে বইটি পড়তে।

এর আগে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন শাইখ সিরাজ। সব কয়টি কৃষি নির্ভর। যেমন ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’, ‘কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা’, ‘পাল্টে যাওয়া কৃষি’ এমন আরও কয়েকটি বই। নিজের এই বিষয়ের বাইরে লিখিত ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। এখানেই তিনি একজন লেখক হিসেবেও পরিচিত হয়েছেন। এই আবিষ্কার আনন্দের এবং গৌরবের।

সান নিউজ/এমএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোরআন-সুন্নাহর শাসনই চূড়ান্ত লক্ষ্য: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বল...

সচিবালয়ের পথে শিক্ষকরা, কর্মবিরতি গড়াল দ্বিতীয় দিনে

২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বেসরকারি এ...

মিডিয়ার হাতে গোপনীয়তা খুন!

জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া অভিযোগ করেছেন,...

স্বাধীনতার কোনো মূল্য হয় না; এটা অমূল্য

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়া ফ...

বিচার ব্যবস্থায় নতুন যুগ, শুরু অনলাইন জামিননামা কার্যক্রম

হয়রানির অবসানে জামিন কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রযুক...

৩৫ বছর পর চবিতে নির্বাচনী সকাল, চলছে ভোটগ্রহণ 

দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বি...

মিরপুরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়িতে অবস্থিত &...

জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন সম্ভব

গণভোট নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ জামায়া...

শিক্ষা উপদেষ্টাকে আইনি নোটিশ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক পদে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ...

আন্দোলনরত শিক্ষকরা রাতে মাজারগেটেই অবস্থান করবেন 

বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা