নারী

তিনি বাংলাদেশের 'মাদার তেরেসা'

নিজস্ব প্রতিবেদক: 'ভ্যালরি টেইলর' এক মহীয়সী নারী। যাকে বলা হয় 'বাংলাদেশের মাদার তেরেসা'। তিনি যুক্তরাজ্যে ১৯৪৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালে সুদর্শনা ভ্যালরি টেইলরের বয়স যখন ২৫ বছর তখন তিনি লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতাল থেকে ফিজিওথেরাপির ওপর পড়াশোনা শেষ করেছেন মাত্র। বাবার মতো তারও ইচ্ছা মানবসেবা করবেন। এ উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকারের 'ভলান্টারি ওভারসিজ (ভিএসও) আবেদন করেন।

তাকে জানানো হয় অন্তত দেড় কিংবা দুই বছরে কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া কেউ ভিএসও'তে যোগ দিতে পারবে না। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝিতে এই সুযোগ এসে যায়। চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতালের জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের দরকার হয়। তখন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন ভ্যালরি টেইলর। দেড় বছরের জন্য বাংলাদেশে এসে, তিনি কাটিয়ে দিলেন ৫০ বছর।

প্রথম দর্শনেই বাংলাদেশের প্রেমে পড়েছিলেন ভ্যালরি টেইলর। ৫০ বছর আগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামের নিভৃত চন্দ্রঘোনায় এসেছিলাম। বিমান থেকে নেমে এ দেশের সবুজ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।' বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্যালরিকে যেমন মুগ্ধ করেছিল, তেমনি এ দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও চিকিৎসাব্যবস্থার দুরবস্থা তাকে ব্যথিত করেছিল। তাইতো এ দেশে পা দিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন, 'মানব সেবায় কাজ করবেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন বাংলাদেশের গরীব দুঃখীদের জন্য।'

বাংলাদেশে এসেছিলেন মাত্র দেড় বছরের জন্য। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের দেশে ফিরে যাবেন না। এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। তারপর তিনি আর পিছু ফিরে তাকাননি। সেদিনের সেই ২৫ বছর বয়সী ভ্যালরির বয়স এখন ৭৫ বছর। দীর্ঘ পাঁচ দশকে তিনি এ দেশের চিকিৎসাসেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, গড়ে তুলেছেন নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তার তুলনা মেলা ভার। এখন তার একটাই উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাবেন।

সত্তর দশকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিংবা নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য তেমন ব্যবস্থা ছিল না বাংলাদেশে। দুর্ঘটনায় কত মানুষের জীবন বিপন্ন হয়, অচল হয়। তাদের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দেন ভ্যালরি। নিজ উদ্যোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য 'সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দা প্যারালাইজড' (সিআরপি), প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। তার গড়া সেই প্রতিষ্ঠানের বয়সও ৪০ বছর পেরিয়ে গেলো। দীর্ঘ চার দশক ধরে অনেক মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন ভ্যালরি টেইলর।

কাজের মাঝেই শুরু হয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। তখন তাকে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয় ইংল্যান্ডে। কিন্তু বিপদে দূরে সরে যাননি। যুদ্ধের সময়ই সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এ দেশে পা দিয়েই বুঝতে পারেন, বিপন্ন মানুষের জন্য কত কি করার আছে।

যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন, তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে। এ কাজের মাঝেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য একটি হাসপাতাল গড়বেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভ্যালরি, আবার নতুন স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেন।

পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য ১৯৭৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড যান।
কিছুদিন পর বাংলাদেশে ফিরে এসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ওই হাসপাতালের দুইটি পরিত্যক্ত গুদামঘরে তিন-চারজন রোগী নিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের (সিআরপি)।

'সেই ছোট্ট এখন এক মহীরুহ'। তিলে তিলে গড়া ভ্যালরির সিআরপি এখন দাতব্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বের উদাহরণ। শুধু সাভারের সিআরপি প্রতিষ্ঠান নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পক্ষাঘাতগ্রস্তরা যে চিকিৎসা পায়, তার পেছনে একটা বড় অনুপ্রেরণার নাম ভ্যালরি টেইলর।

এদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে সরকার ভ্যালরিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। এরপর ২০০৪ সালে তাকে 'স্বাধীনতা পদক' দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ব্রিটিশ সরকার ভ্যালরিকে 'অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার' পদকে ভূষিত করা। ১৯৯৬ সালে 'আর্থার আয়ার ব্রুক' স্বর্ণপদক, ২০১১ সালে 'শেলটেক' পদক, জাতীয় সমাজসেবা পুরষ্কারসহ নানা পুরষ্কার পেয়েছেন, পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসাও।

২০১৩ সালে 'রোটারি ইন্টারন্যাশনাল' পক্ষ থেকে 'দ্যা ওয়ান' পুরষ্কার হিসেবে এক লাখ মার্কিন ডলার পুরষ্কার পান।
এই অর্থ ভ্যালরি সিআরপিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি নতুন আবাসিক হোস্টেল তৈরিতে ব্যাবহার করেন।

নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে এই মহীয়সী নারী বলেন, 'যতদিন বাঁচবো বাংলাদেশের মানুষের জন্যই কাজ করে যাবো।' ভ্যালরি চান- সিআরপি'র সঙ্গে সম্পৃক্তরাই এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠানটি থেকে যারা চিকিৎসাসেবা নিয়েছে, যারা এখন কর্মরত, তারাই এর আলো সারা দেশে ছড়িয়ে দেবেন।

সান নিউজ/এসএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জামায়াত-এনসিপি অসন্তুষ্ট

শুধু মাত্র একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা...

তারেক- ইউনূসের যৌথ বিবৃতিতে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে- নাখোশ জামায়াত

তারেক- ইউনূসের যৌথ বিবৃতিতে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে জামায়াত। লন্...

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়‌কে ১৪ কি‌লো‌মিটার জুড়ে যানজট

পবিত্র ইদুল আযহার ছুটি প্রায় শেষ। তাই সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ একটু বেশি। ঢাকা...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধ...

বান্দরবানে পর্যটকের মৃত্যু, ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার

বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক নিহতের ঘটনায় অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ ‘ট্...

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

ইসরায়েলের টার্গেট আয়াতুল্লাহ খামেনি: প্রতিবেদন

বিশ্ববাসির নজর এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের দিকে; দুদেশকে নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেশন চ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা