সান নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাঙালি জাতি যেন সারাবিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে চলতে পারে অন্তত সেটুকু করেছি। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেই স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন: জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’র গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বদলে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।
আরও পড়ুন: তল্লাশিকে অতিরঞ্জিত করে বলছে বিএনপি
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা চাই দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকুক এবং সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই এই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে চীন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে উন্নত ও শক্তিশালী করে চলেছে। কিন্তু সেটা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াইনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন: জনগণ বিএনপিকে লালকার্ড দেখিয়েছে
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা সমস্যা সমাধান এবং বিশাল সমুদ্র এলাকা ও এর সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আবারও দেশবাসীকে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, গুজবে কান দেবেন না। ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক রিজার্ভ এবং তারল্য থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: তাইওয়ানের আকাশে চীনের যুদ্ধবিমান!
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, গোটা জাতি যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে তখন বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তর করতে প্রস্তুত। দয়া করে কেউ যাচাই না করে গুজবে কান দেবেন না বা বিভ্রান্ত হবেন না।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু নেই, শনাক্ত ২০
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো সেরকম দুরবস্থায় পড়িনি, অন্তত আমি এটুকু আপনাদের বলতে পারি।
তিনি ধারাবাহিকভাবে সরকারে থাকার ফলে দেশের উন্নয়নকাজগুলো করতে পারা এবং দেশের মানুষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারায় সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কারো একার পক্ষে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধন সম্ভব ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালে দেশের শাসনভার গ্রহণ করে দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকালে ২৬ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত রেখে গিয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: রিমান্ডে জামায়াত আমীর
তিনি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করা এবং পরবর্তীকালে বিএনপি সরকারের সময়ে তা আবার ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নামিয়ে ফেলাসহ বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট এবং স্বাক্ষরতার হার, গড় আয়ু বৃদ্ধি প্রভৃতি সাফল্যের বিবরণ তুলে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। সেসময় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। আমরাই সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি।
আরও পড়ুন: ফখরুল ও আব্বাসকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়লাভের পর আমরা অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।
তিনি জানান, ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ’ থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৭৯ জন অফিসার সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেছেন, এরমধ্যে ৪৪টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ১ হাজার ৩০১ জন অফিসারও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। বর্তমান কোর্সেও ২১টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৪৬ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাসহ আজ মোট ২৫০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন: মেসি বিশ্বকাপ জিতবে
তিনি বলেন, আমি আশা করি, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গিকার সামনে রেখে দেশকে গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ ২০২২’ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন ও পরিচালনা করার জন্য তিনি কমান্ড্যান্ট ও ডিএসসিএসসিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে আগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে সেজন্য বাংলাদেশের এক একজন দূত হিসেবে তাদের নিজ নিজ দেশে কাজ করে যাওয়ারও আহ্বান জানান।
সান নিউজ/এমআর
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            