জাতীয়

বিজয়ের ৪৯ বছর : ১৩ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ঢাকার কাছাকাছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নেয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। এ সময় স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য বাঙালির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপদানের দিকে আরও অনেকখানি এগিয়ে যায়। ঢাকার ১৫ মাইলের মধ্যে মিত্রবাহিনী চলে আসে।

১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ চায় না, যুদ্ধ বাধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না। তিনি এমন কথা বললেও একই দিন বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তৃতীয়বারের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দেয়ার ফলে বাতিল হয়ে যায়। পাকিস্তানের দোসর শান্তি কমিটি, ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতা বিরোধী দালালরা বেগতিক দেখে গা ঢাকা দেয়। কিন্তু এর মধ্যেও ঘাতক আলবদর চক্র বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে দেশের বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে। এর ভয়ংকর রূপটি প্রকাশ পায় ১৪ ডিসেম্বর।

ঢাকার পতন হলে পাকিস্তানের পরাজয় দ্রুত ও চূড়ান্ত হবে। এ কারণে ঢাকার পতন দ্রুততর করার জন্য যৌথবাহিনী যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। তবে এত দ্রুত ঢাকা আক্রমণ করা সম্ভব হবে তা কারও ধারণায় ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইয়ের কারণেই মিত্রবাহিনী দ্রুত ঢাকার দিকে এগোতে পারে।

এ কথা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রত্যেক কর্মকর্তা স্বীকার করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রশংসা করেন তারা। একাত্তরের এই দিনে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ৫৭ ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্ব দিক থেকে। উত্তর দিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা।

পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতী পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে। রাত ৯টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউসে তারা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন।

আলোচনার শুরুতে মেজর জেনারেল নাগরা মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। রাস্তাতেই অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত।

লে. কর্নেল শফিউল্লাহর এস ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে এদিন ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়। সৈয়দপুরে এদিন আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাক সেনা। এদিন যৌথবাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার খুব কাছে পৌঁছে যায়।

বালু নদীর পূর্বদিকে পাকিস্তানি বাহিনী শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অবস্থান করছিল। এদিকে বগুড়া জেলায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল মহিমাগঞ্জের দুলুর নেতৃত্বে ও সিহিপুরের বাবলু, খালেক, হামিদ, খলিল, নুরুল, শুকু, ফিনু, জগলু, হাল্লু, লিন্টু এবং আরও অনেকের সহযোগিতায় সুকানপুকুর রেলস্টেশনের কাছে সিহিপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন ডিনামাইটের সাহায্যে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।

এতে প্রায় দেড়শ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী চিওড়া এলাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এ সময় ২ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়।

৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী একদল পাকিস্তানি সেনাকে রাজাপুরে এ্যাম্বুশ করে। এতে পাকবাহিনীর ৪ সেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার প্রতাপপুরে পাকিস্তানি সেনাদের এ্যাম্বুশ করে। এতে পাকবাহিনীর ১১ সেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়।

২ নম্বর সেক্টরে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে ১ প্লাটুন যোদ্ধা লক্ষ্মীপুর রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করে। আকস্মিক এ আক্রমণে অনেক রাজাকার হতাহত হয়। এ সময় এলাকার জনসাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে।

৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সহায়ক সেনাদের সম্মিলিত বাহিনী ভুরুঙ্গামারী পাকসেনা অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা নিহত ও তিনজন বন্দি হয় এবং ভুরুঙ্গামারী থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।

অভিযানে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার যোশী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করেন সেক্টর কমান্ডার কেএম বাশার ও সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর নওয়াজেশ। উত্তরাঞ্চলে যৌথবাহিনী গোবিন্দগঞ্জ থেকে ঢাকা মহাসড়ক ধরে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হয়। বগুড়ায় তখন শত্রুবাহিনীর কয়েক রেজিমেন্ট কামান ও ট্যাংকসহ অবস্থান করছিল।

হিলি রক্ষাব্যূহ ছেড়ে আগেই পাকসেনারা বগুড়ায় গিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। রাতে যৌথবাহিনী চারদিক থেকে বগুড়া শহর ঘিরে ফেলে এবং মধ্যরাতে তিনটি ব্যাটালিয়ন উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর দিক থেকে শত্রুর ওপর আঘাত হানে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধ...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অনেক হতাহত

ইসরায়েলে ভয়ংকর হামলা চালিয়েছে ইরান। শনিবার মধ্যরাত ও রবিবার ভোরে ইসরায়েলের বি...

ইসরায়েলের টার্গেট আয়াতুল্লাহ খামেনি: প্রতিবেদন

বিশ্ববাসির নজর এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের দিকে; দুদেশকে নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেশন চ...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

ইসরায়েলের টার্গেট আয়াতুল্লাহ খামেনি: প্রতিবেদন

বিশ্ববাসির নজর এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের দিকে; দুদেশকে নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেশন চ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা