নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী মার্চ মাসে ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) ড. কামাল হোসেনের ৭/সি নিউ বেইলী রোডের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে এ ঘোষণা আসতে পারে।
গণফোরামের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে ড. কামাল হোসেনের অবসরে যাওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিলের ঘোষণা দিতে আসতে পারে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ সদস্য এম মোকাব্বির খান বলেন, পরবর্তী নেতা কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন কাউন্সিলররা। তাছাড়া ড. কামাল হোসেন দীর্ঘ ১৫ বছর আগে থেকেই দলের নেতৃত্ব যোগ্য নেতার হাতে তুলে দিয়ে অবসরে যেতে চান।
কিন্তু আমরা তাকে নেতৃত্বে দেখতে চাই। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের পর নেতারা বসে আলোচনার মাধ্যমে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করব। আর এ সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের অবসরে যাওয়ার ঘোষণাও আসতে পারে।
ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসির উদ্দেশ্যে কি বার্তা দিতে পারেন জানতে চাইলে এম মোকাব্বির খান বলেন, দেশ এখন নানা সংকটের মাধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে। দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগিরক এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা, করোনা ভ্যাকসিন, রাজনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরবেন।
তবে গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু নতুন নেতৃত্বের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে ড. কামাল হোসেন গণফোরামের সভাপতি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও তিনিই ছিলেন সভাপতি। প্রায়ই তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে দলের দায়িত্ব ছেড়ে যাননি। আগামীতে যাবেন কি না তা তিনিই বলতে পারবেন।
১৯৯২ সালের জুনে গণতান্ত্রিক ফোরাম নামে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
পরের বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন কমিটির সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় ড. কামাল হোসেনকে। পরে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট গণতান্ত্রিক ফোরামের তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শেষে গণফোরাম গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. কামাল হোসেন।
গণফোরাম প্রতিষ্ঠাকালীন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্কারবাদী অংশ, পঙ্কজ ভট্রাচার্যের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ এবং শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন জাসদের একটি অংশ যোগ দিয়েছিল। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন কিছু ব্যক্তিও গণফোরামে সম্পৃক্ত হন। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের মধ্যে অন্যতম। আবুল মাল আবদুল মুহিত পরে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হন।
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোস্তফা মহসিন মন্টুও যোগ দেন এ দলে। দলের সভাপতি হিসেবে শুরু থেকে ড. কামাল হোসেন রয়েছেন। আর প্রথম কমিটিতে সচিব হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরের কমিটিতে পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক হন প্রয়াত সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক, এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম। আরেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
২০১১ সালের জাতীয় সম্মেলনে মোস্তফা মোহসিন মন্টু এবং ২০১৯ সালের বিশেষ কাউন্সিলে ড. রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হন। তবে এর মধ্যে সভাপতির পদে কোনও পরিবর্তন আসেনি। দীর্ঘ ২৫ বছর দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ড. কামাল হোসেন।
চলতি বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দলের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। সে অনৈক্য এতটা তিক্ততায় পৌঁছায় যে, দল দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক দল অন্য দলের সদস্যদের বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার করেন। এমনকি পৃথক কাউন্সিল করারও প্রস্তুতি নেন। অবশেষে ড. কামাল হোসেনের আহ্বানে বিবদমান দুই পক্ষ্যই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পরে বহিষ্কৃত নেতারা একটি বিবৃতি দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার দুপুরে ড. কামাল হোসেনের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান দলীয় প্যাডে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি গণফোরামের অভ্যন্তরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এসব সমস্যার সমাধানকল্পে সব সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠান করা হবে।এছাড়া ইতিমধ্যে দলের মধ্যে যে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার হয়েছে তা অকার্যকর বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সান নিউজ/এসএ