রাজনীতি

গণফোরামে এবার চূড়ান্ত ভাঙ্গন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের আলোচিত রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের প্রতিষ্ঠিত গণফোরাম এখন চূড়ান্ত ভাঙনের মুখে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের আলাদা কমিটি গঠনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে সেই ভাঙন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে ড. কামাল হোসেনের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই সংগঠন ছেড়েছেন বহু আগে।

বিএনপির প্রয়াত নেতা শাহজাহান সিরাজ ছিলেন গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি। একপর্যায়ে গণফোরাম ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও একসময়ের ন্যাপ মোজাফ্ফরের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্যও দলটি ছেড়েছেন অনেক আগে।

২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেন রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় আসেন। বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল যখন তার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে তখন অনেকেই নানা স্বপ্নে বিভোর হয়ে গণফোরামে যোগ দেন। যাদের অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চরম ব্যর্থ হলেও গণফোরামের দুজন সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন। ফ্রন্টের ও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ওই দুই সংসদ সদস্য শপথও গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণফোরামে নতুন সঙ্কট।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত গণফোরামের বর্ধিত সভা। মূলত এ সভা থেকেই দলটির মধ্যে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। মনে করা হয়, প্রকাশ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের বিরুদ্ধে থাকলেও দলের দুই সংসদ সদস্য ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেই শপথ গ্রহণ করেন।

এ সমস্যার সমাধান না হতেই কাউন্সিলের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ড. কামাল হোসেন দলে নতুন যোগ দেয়া ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ দেন। ফলে দলের দীর্ঘদিনের প্রবীণ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়। দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। অন্যদিকে রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হয়েই দলের প্রবীণদের মতামতের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন। শুরু হয় নতুন দ্বন্দ্ব। কিন্তু দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন সেই দ্বন্দ্ব নিরসন না করে বরং রেজা কিবরিয়ার মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিলে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। কমিটি থেকে অধিকাংশ সিনিয়রকে বাদ দেয়া হয়। ফলে দলের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু আলাদা অবস্থান নেন।

গণফোরামে ভাঙন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। এর কোনো গণভিত্তি নেই। জনগণের কাছে কোনো আবেদন রাখতে পারেনি দলটি। এটি ড. কামাল হোসেনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল এবং তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলে এটি। সংগঠনটির কোনো ভবিষ্যৎ নেই, টিকবেও না।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, নানা দ্বন্দ্ব ও জটিলতার কারণে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন দলীয় রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। ইতোমধ্যে তার এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, ড. কামাল হোসেন তার রাজনীতি থেকে অবসরের বিষয়টি নিয়ে দলের বিদ্রোহ গ্রুপের নেতা ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, দলের বিদ্রোহ গ্রুপের নেতারা ড. কামাল হোসেনকে সরাসরি বলেছেন যে, দল থেকে ড. রেজা কিবরিয়া, শফিক উল্লাহ, সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও মোস্তাক আহমেদকে বহিষ্কার করে গণফোরামে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। তা হলে দলের সব নেতাকর্মী এক হয়ে আগের মতো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অন্যথায় তারা তাদের ঘোষিত কাউন্সিলের দিন আলাদা অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের সংবাদ সম্মেলন
অভিযোগ আছে, দল থেকে যে চার নেতাকে সরানোর কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে আ ও ম শফিক উল্লাহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লাস করেছিলেন। অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনি পরামর্শক ছিলেন। তিনি পর্দার আড়ালে থেকে কৌশলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে রক্ষা করতে আইনি সহায়তা দিতেন।

কিন্তু ড. কামাল হোসেন এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে তিনি নানা ধরনের মন্তব্য করলেও বর্তমানে একেবারে চুপ রয়েছেন। সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেন এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তাকে বহিষ্কারের জন্য শোকজ করবে গণফোরামের বিদ্রোহী অংশ।

দলের অনেকেই মনে করেন, গণফোরাম থেকে বহিষ্কার হবেন— এমন আভাস পেয়েও ড. কামাল হোসেন অনেকটা চুপ। তিনি দেশের রাজনীতি নিয়ে দলের ভেতরে বা বাইরে কোনো কথাই বলছেন না। পরিস্থিতি কোথায় যায় তা পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনকি তার গ্রুপের শীর্ষ নেতারাও ড. কামাল হোসেনের পথ অনুসরণ করে একেবারে চুপচাপ রয়েছেন। তারা ড. কামাল হোসেনের রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনেকটাই হতাশ।

দলের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসরে যেতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে আমরা তা চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি, ড. কামাল হোসেন সম্মান নিয়ে রাজনীতিতে থাকুন এবং তাকে ঘিরে যে অশুভ শক্তি রয়েছে, তাদের দল থেকে সরানো হোক।’

গত ২৬ সেপ্টেম্বরই মূলত ভেঙে গেছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। এরপরই রাজধানীর আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নেয় বিদ্রোহী অংশ। এখন সেখানে নিয়মিত বসছেন তারা। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের নেতাকর্মীরা সেখানে যাচ্ছেন না।

গণফোরামের বিদ্রোহী অংশের নেতাদের ভাষ্য, ড. কামাল হোসেন আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে অবস্থিত গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয়া হবে না।

দলের ভাঙনের বিষয়ে দলটির একাধিক নেতার নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, রেজা কিবরিয়া কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। রাজনৈতিক কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই। গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরীরা দলটিকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। এখন কাউন্সিলের মাধ্যমে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করায় দলটি তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও বিশেষত্ব হারিয়েছে। রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম এখন নেই দলে।

সান নিউজ/পিডিকে/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নীরব প্রশাসন; ফুঁসছে জনগন!

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তার (৪৫)...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

ছাত্রলীগ সভাপতির বসতঘরে আগুন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বাপ্পির...

রামগড়ে অবৈধ ইন্টারনেট সরঞ্জামসহ তিনজন আটক

খাগড়াছড়ির রামগড়ে খান কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে অবৈধ ইন্টারনেট...

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির চার নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের চার নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কার...

মধুখালীতে ৬৫ পিস ইয়াবাসহ আটক যুবক

ফরিদপুরের মধুখালীর কুখ্যাত ডাকাত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মোঃ রানা (২৬) কে...

হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রাবেয়া বেগম (৪৮) নামে...

মাদারীপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য আটক

মাদারীপুর সরকারি কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সো...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

লকডাউনের আজাহার দিনে বিএনপি, রাতে আ. লীগ

মাদারীপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বরের লকডাউন স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা